ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Sunday, January 1, 2017

আবেগী ভালোবাসা


ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প,
দূর ছাতা! আজকেও মনে হয় ক্লাসটা মিস হলো! ক্লাসটা আর ইকটু দেরি করে শুরু হলে কি এমন ক্ষতি হতো..... এসব কথা ভাবতে ভাবতেই রিক্সাওয়ালাকে তাগাদা দিতে থাকে ইরা। "মামা ইকটু তাড়াতাড়ি চালান না, দেরি হয়ে যাচ্ছে"। রিক্সাওয়ালা মামা পেছন ফিরে ইরার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল, "যাইতাছিই তো.... আমার রিস্কা তো আর প্লেন না যে উড়াইয়া লইয়া যামু"। উত্তরটা পছন্দ হলোনা ইরার। মেজাজটা চড়ে গেলো। ইরার ইচ্ছা করছে যে এই মুহুরতে রিক্সা থেকে নেমে পারলে পায়ে হেটে যায়। কিন্তু ইরা তা করলো না। চুপচাপ বসে রইলো। ইরা গ্রামের মেয়ে। অত্যন্ত সহজ-সরল ও খুবই মেধাবী ছাত্রী। এইচ.এস.সি পরীক্কা শেষে ঢাকায় ভরতি কোচিং করতে আসে। প্রাইমেটস নামে একটি নামকরা মেডিকেল ভরতি কোচিং এ ভরতি হয়। তার লক্ষ একটাই আর তা হচ্ছে ডাক্তার হউয়া। ইরার মা এস.এস.সি পরীক্ষার সময় মারা যান। মার ইচ্ছা ছিলো তার মেয়ে ভাক্তার হবে। মার ইচ্ছা পূরণের জন্যই ইরার শহরে আসা। . কোচিং এ ইরা বরাবরই প্রথম হয়। সেজন্য নিশ্চিত চান্স পাবার সম্ভাবনাময় ছাত্রী হিসেবেই সে বিবেচিত ছিলো। কোচিং এর স্যাররা তার প্রতি এক্সট্রা কেয়ার নিতো। এনাদের মদ্ধে এনামুল স্যার ইরার ইকটু বেশিই কেয়ার নিতো। তবে তার অতিরিক্ত কেয়ার নেউয়াটা ইরার তেমন একটা পছন্দ ছিলো না। . মেডিকেলের পরীক্ষার আর ২ দিন বাকি। কোচিং এ লাস্ট ক্লাস। অন্যান্য সবার মতন ইরাও আজ সেজে এসেছে। সবুজ পাড়িওয়ালা নীল রং এর শাড়ীতে ওকে অপূর্ব লাগছিল। এনামুল স্যারও উপস্থিত ছিলেন। শেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এনামুল স্যারের কাছ থেকে ইরা বিদায় নিতে গেলে স্যার তাকে অনেক আশা দিয়ে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে বিদায় দিলেন। . মেডিকেলের পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট বের হলো। ইরা ১৫ তম স্থান অধিকার করে। এনামুল স্যারকে সে তার রেজাল্ট এর খবর জানাতে স্যার তাকে অনেক অভিনন্দন জানান। এরপর স্যারের সাথে প্রায়ই ইরার কথা হতে থাকে। নানান সময়ে নানাভাবে এনামুল স্যার ইরাকে সাহায্য করে যান। . ওদের সম্পর্কটা ধিরে ধিরে ভাললাগা আর এর পর ভালবাসায় রুপ নেয়। ইরার সারাটা পৃথিবী জুড়ে তখন শুধু এনামুল। এনামুলও পাগলের মতন ভালবাসতো ইরাকে। . একদিন ইরা এনামুলকে ফোন করে দ্যাখা করতে বলে। বলে যে খুবই জরুরি কথা আছে। এনামুল ও তাই কাজ ফেলে দ্রুত চলে আসে। ওরা কাঁটাবনের একটা কফিসপে বসে আছে। এমন সময় ইরা এনামুলের হাতে হাত রেখে বলে যে, আমি আজ তোমাকে সত্য একটা কথা বলবো। আজ থেকে তিন বছর আগে আমি আমার এক দূর সম্পর্ক এর মামীরর বাড়িতে যাই বেড়াতে। মামীর বড় ছেলে আমার সমবয়সী ছিলো। নাম রায়হান। ওর সাথে আমার অল্প কদিনের মধ্যেই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একদিন রায়হানের সাথে মামীর বাড়ীর পিছনে ধানের ক্ষেতে বেড়াতে যাই। আমরা হাঁটতে হাঁটতে ধানক্ষেতের গভীরে চলে যাই। হঠাত রায়হান আমার হাত চেপে ধরে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ও আমার ওড়না দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলে। জোর করে আমাকে অপদস্থ করে। আমার সম্ভ্রম কেড়ে নেয়। লোকলজ্জার কারনে আমি কাউকেই কিছু না বলে চলে আসি। বিশ্বাস করো এনামুল, এতে আমার কোন দোষ ছিলোনা। আমি তোমাকে হারানোর ভয়ে এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু তোমাকে আমি ঠকাতে পারবোনা। তাই সত্যটা বললাম। এখন তুমিই সিদ্ধান্ত নাও যে তুমি কি করবে। কথাগুলো বলে ইরা ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। . এনামুল আস্তে করে ইরার হাতটা ওর হাতের উপর থেকে সরিয়ে নিলো। বললো যে, ইরা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তোমার ভাগ্যের জন্য হোক আরর যে কারনেই হোক তুমি আমার চোখে এখন একজন চরিত্রহীনা নারী। তোমার মত একজন চরিত্রহীনা মেয়েকে আমি কখনোই বিয়ে করতে পারবো না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। কথাগুলি বলে এনামুল চলে যায়। ইরা পিছন থেকে নিশপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তার চোখ থেকে অবিরত ধারায় অস্রু ঝরতে থাকে। . কিছুদিন পরে এনামুলের ফনে একটা মেসেজ আসে। ইরা লিখেছে... তোমাকে সেদিন আমি যে ঘটনাটা বলেছিলাম সেটা তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলাম। আমার জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি দেখতে চেয়েছিলাম যে তোমার ভালবাসার গাড়ত্ব কতটুকু। তোমার কাছ থেকে আমি বাস্তবতার শিক্ষা নিলাম। তুমি ভাল থেকো। ভালো কোনো মেয়ে দেখে বিয়ে করো। খুদা হাফিয। এনামুল মেসেজটা পড়ে নিশপলক শুধু চেয়ে থাকে আর নিজের ভুলের অনুসচনা করতে থাকে। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে.....।

Contact Us

Name

Email *

Message *