ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Wednesday, August 15, 2018

পরকীয়া

love story, valobashar golpo, ভালবাসার গল্প
-হ্যালো.. শোন, শাহেদ নেপাল গেছে আজ। তুমি বিকেলের দিকে আসছো তো?আজ কিন্তু রাত থাকবে এখানে, আমি সব ব্যবস্থা করে রাখছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি বিকেল নাগাদ চলে আসব, তোমাকে খুব মিস করছিলাম
-এহ! কচু মিস করছিলে, তবে আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে দেখতে, বিকেল চারটের দিকে চলে আসবে কিন্তু। মেয়েটাকে তার নানুর বাড়ি দিয়ে আসতে যাচ্ছি এখন। রাখি এখন?
-রুপা...ভালবাসি তোমায়।
-তন্ময়...নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি তোমায় এখন রাখছি গো।
তন্ময়ের সাথে রুপার পরিচয় হয়েছিল শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। রুপা তার মেয়েকে নিয়ে বসেছিল পূর্বদিকের গ্যালারিতে। বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ের ম্যাচ এখন তেমন আগ্রহ নিয়ে দেখতে চায়না লোকে তাই গ্যালারি ফাকাই ছিল। ওখান থেকেই পরিচয়, ফোন নাম্বার আদান-প্রদান। রুপার বিয়ের বয়স প্রায় নয়বছর। বিয়ের প্রথম বছর দুয়েক বেশ ভালবাসা বাসি ছিল শাহেদের সাথে। রুপা নামের মেয়েরা শতকরা নিরানব্বই ভাগ বেলাতে রুপবতী হয় রুপাও যথেষ্ট রুপবতী । সে যখন বাইরে বের হয় তখন আশপাশের মানুষ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রুপার দিকে, এমন মুগ্ধ শাহেদও হত কিন্তু আস্তে আস্তে শাহেদের মুগ্ধতা আর ভালবাসা কমতে থাকে সমানুপাতিক হারে। শাহেদ বিশাল এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী করে, শাহেদের পদোন্নতির সাথে সাথে শাহেদের ব্যস্ততা আর রেসপন্সিবিলিটিও বাড়তে থাকে। মাসের তিন সপ্তাহ চলে যায় অফিসের কাজে এদিক সেদিক ছোটাছুটিতে। এর মাঝে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে তাদের মাঝে। শাহেদ শেষ কবে রুপাকে ভালবেসে কাছে টেনে নিয়েছে সে কথা নিজেরও মনে পড়েনা। রুপার জানে শাহেদ হোটেলে, রিসোর্টে মেয়ে নিয়ে যায় এর দুই একটা প্রমানও সে পেয়েছে আস্তে আস্তে রুপার শাহেদের প্রতি থাকা তীব্র অনুভুতি ফিকে হয়ে গেছে। শাহেদ বাড়ি ফিরে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে থাকে আর রুপা মেয়ের দিকে মুখ ফিরে শুয়ে থাকে। দুটো প্রান একই সাথে এভাবে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিয়েছে, কত কাছে এসেও কত অপরিচিত তারা! শাহেদ রুপার একাউন্টে টাকা দিয়ে রাখে, যাবতীয় প্রয়োজন সেখান থেকেই মিটিয়ে নেয়, শাহেদের কাছে চাইতে হয়না।
রুপা আজ জরজেটের শাড়ি পরেছে, পেটটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। রুপা নিজের শরীর নিয়ে বেশ সচেতন, সব সময় নিজেকে ফিট আর আকর্ষণীয় করে রাখে। প্রথম কয়েক বছর তার আকর্ষনের মূল বিন্দু ছিল শাহেদ কিন্তু শাহেদের ওসবে আকর্ষণ হয়না। রুপার কোমর সমান চুলগুলো একটা খোপায় আটকে আছে, এই খোঁপা পূর্ণতা পাবে তন্ময়ের আনা লাল রক্ত জবায়। রুপা জানে তন্ময় রক্ত জবা আনবে, এই পর্যন্ত যে চারবার তাদের দেখা হয়েছে প্রতিবার ই তন্ময় টকটকে লাল রক্ত জবা এনেছিল তার জন্য। তন্ময় রুপার খোঁপায় লাল রক্তজবা গুঁজে দিয়ে চুমু খায়। রুপা বুঝতে পারে তন্ময় চুমু খাচ্ছে আর তখন রুপা চোখ বুজে সেটা অনুভব করে। দুবার কলিং বেল বেজে উঠল। রুপা দৌড়ে যেয়ে দরজা খুলল। ছাই রঙের পাঞ্জাবি আর খোঁচা খোঁচা দাড়িতে তন্ময়কে বেশ লাগছিল। তন্ময়ের চোখ দুটোকে মদ্য পেয়ালা মনে হয়, যেটাতে ডুব দিলে মাতাল হয়ে যায় রুপা। তখন তার হুশ থাকেনা। রুপা দরজা খুলেই হাত বাড়িয়ে বলল আমার রক্তজবা দাও। তন্ময় বলল- না দিব না, আমি নিজে গুঁজে দিব।
ড্রয়িংরুমে এসে রুপার খোঁপায় রক্তজবা গুজে দিল তন্ময়। আশ্চর্যজনকভাবে আজ আর চুমু খায়নি তন্ময়। রুপার মুখের মাংস পেশী শক্ত হয়ে আসল,নাক ফুলছে রাগে, দু:খে আর অভিমানে। রুপা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল -তুমি বেডরুমে যাও আমি চা করে আসছি। তন্ময় এসে বেডরুমে বসল। একটা ফ্রেমে আটকে আছে রুপা আর শাহেদের হাস্যজ্বল মুখ দুটো। তন্ময় মনে মনে বলল - বাহ! কি দারুণ মানিয়েছে এদের! ঘরের প্রতিটি জিনিস ই বেশ দামী, দামী দামী জিনিস এর ভিড়ে মানুষ জীবনের দামী জিনিসটা কখন হারিয়ে ফেলে সেটা বুঝে উঠতে পারেনা। শাহেদ আর রুপার বেলায়ও তাই হয়েছে। চা করতে করতে রুপার মনে পড়ল তন্ময়ের সাথে প্রথম কোথাও ঘুরতে যাবার কথা, সেদিন বেশ বৃষ্টি হয়েছিল। দুজন একটা ছাতার নিচে জুবুথুবু হয়ে ভিজেছিল সেদিন, সেদিন তন্ময়কে জড়িয়ে ধরেছিল আচমকা বজ্রপাতের বিকট শব্দে। এসব ভাবতে ভাবতে রুপার মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল।
কি ব্যাপার, এক কাপ চা করে আনলে যে! আমাকে চা দেবেনা নাকি বলেই হেসে দিল তন্ময়। রুপা তন্ময়েরর দিকে তাকিয়ে বলল - এই এক কাপ চায়ে দুজন ঠোট ভেজাবো আজ। রুপা তন্ময়ের দিকে কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল - নাও চুমুক দাও। দুজন পর্যায়ক্রমে এক কাপ চা খেয়ে শেষ করল। রুপা তন্ময়ের খুব কাছে এসে বসে তন্ময়ের হাতটা ধরে বলল - আজ অনেক ভালবাসবে আমায়? খুব করে ভালবাসবে আমাকে? সব এলোমেলো হয়ে যাক..আমাকে তোমার ভিতরে ধারণ করবে আজ? উত্তরের অপেক্ষা না করে রুপা তন্ময়ের গলাটা দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। ভালবেসে কোন মেয়ে যদি কোন ছেলের গলা জড়িয়ে ধরে সেটা উপেক্ষা করা অনেক সাধনা আর ধৈর্যের ব্যাপার। তন্ময় সেই সাধনা করে এসেছে আজ যে ধৈর্য ধরেই সে সবটা সামলাবে। রুপা তন্ময়ের আরো কাছে চলে আসল, বুকের সাথে বুক মিশিয়ে তন্ময়ের মুখের খুব কাছে মুখ এনে বলল.. তন্ময় একটু ছুঁয়ে দাওনা..কথাটা খুব দ্রুত ব্যগ্রভাবেই বলল। তন্ময় বেশ বুঝতে পারল - রুপার এই আবেদনে কারো দেয়া অবহেলা জড়িয়ে আছে, কারো প্রতি থাকা
তীব্র অভিমান লুকিয়ে আছে।
রুপা এবার তন্ময়কে ঠান্ডা গলায় বলল - আমাকে বিয়ে করবে তন্ময়? আমি শাহেদকে ছেড়ে দিব। ও আমাকে চায়না, ও অন্য মেয়েদের চায়। প্লিজ তুমি আমাকে বিয়ে কর। তন্ময় গলা থেকে রুপার হাতদুটো নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলতে শুরু করল -
রুপা আজ তোমাকে আমি কিছু কথা বলি, মন দিয়ে শোন। রুপা আমি তোমাকে ভালবাসি এই নিয়ে তোমার কোন সন্দেহ আছে? রুপা মাথা নাড়িয়ে বলল - না। রুপা তুমি এখনো শাহেদকে চাও, খুব করেই চাও। শাহেদের দেয়া অবহেলার বশবর্তী হয়ে অভিমানে তুমি শাহেদকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছো তুমিও পারো, আর পেরেছোও তাই। তুমি যখন পায়ে নেল পলিশ দাও তখনো তোমার অবচেতন মন চায় শাহেদ সেটা দেখুক। আর কি বললে.. বিয়ে করার কথা? রুপা প্রেমিকদের প্রেমিক হিসেবেই মানায়। তারা যদি স্বামী হয় তখন আর তারা প্রেমিক থাকেনা। মেয়েদের বেলায়ও তাই, তারা যখন প্রেমিকা থাকে তখন তারা সারা রাত দিন প্রেম ছাড়া কিছু বোঝেনা, প্রেমিক তাদের খেয়াল রাখুক যত্ন নিক,কবিতা শোনাক ভালবাসার কথা বলুক, সময়ে অসময়ে ফোন দিয়ে আহ্লাদ করুক এটাই চায় তারা কিন্তু সেই মেয়েরাই গৃহিণী হলে অন্য চিত্র। সংসারের কাজ, বাচ্চা পালা, ঘর গোছাতে গোছাতে তারা স্বামীর খোজ নিতে ভুলে যায়। আর যখম সে স্বামীর খোজ নিতে যায় তখন অন্যদিকে স্বামী বেচারা কাজে বেজায় ব্যস্ত থাকে। আর বিপত্তি তখন ই বাধে, যার যখন যাকে প্রয়োজন তখন তারা একে অন্যকে পায়না। তখনই ঝাঁঝালো কন্ঠে শোনা যায় "তুমি আমাকে ভালবাসোনা"। আমি প্রেমিক হিসেবেই ঠিক আছি, স্বামী হিসেবেনা। তুমিও প্রেমিকা হিসেবে ঠিক আছো, স্ত্রী হিসেবে না। হয়তো তোমার মনে হতে পারে আমি তোমাকে ঠকিয়েছি কিন্তু বিশ্বাস কর আমি নিজেকে ঠকাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে, তুমি নিজেকে ঠকাচ্ছো বলে মনে হচ্ছে। জেদ করে তুমি আমায় ভালবাসছো..আমি কখন যে তোমাকে ভালবেসেছি সে নিজেও জানিনা। জানি, দূরে থাকা কষ্টের হবে তবে আমি আর কাছে আসতে চাইছি না । শাহেদ সাহেব ফিরলে আমাকে যেভাবে যত্ন নিয়ে গলাটা জড়িয়ে ভালবাসা চেয়েছিলে ঠিক তেমন করেই তার গলাটা জড়িয়ে একটু ভালবাসা চেয়ে দেখো সে ফেরাবেনা, ইগোকে জিততে দিওনা নিজে নিঃশেষ হয়ে যাবে গো।
রুপা বালিশে মাথা গুজে কাঁদছে, সে ঠকেনি বরং নিজেকে ঠকাচ্ছিল এই ভেবে। নিজের ভেতরটা এক অজানা পুরুষ কত সহজে পড়ে দিয়ে গেল আজ তাকে অথচ সে নিজেই পড়তে পারেনি। এই শহরের দশটা পরকীয়ার সাতটা হয়ে থাকে নিজেকে পড়তে না পারার ব্যর্থতায়।
শাহেদ যখন সেদিন রাতে কল গার্লের সাথে আনন্দঘন সময় পার করছিল তখন কল গার্ল তাকে বলেছিল " I have an urgent call from my husband, he is paralysed and my baby is admitted in hospital, sir please give me half an hour I will back within this time"
শাহেদ তার মানিব্যাগ হতে চার হাজার নেপালি রুপি কল গার্লের হাতে গুজে দিয়েছিল। সেদিন শাহেদ অনেক কিছু ভেবেছিল, এই যেমন এক পতিতাও তার স্বামীকে নিয়ে ভাবে, স্বামী প্যারালাইজড তার যত্নও নেয় তবুও, মেয়ে অসুস্থ তাই টাকা জোগাড়ের জন্য নিজের সবটা বিলিয়ে দিচ্ছে অন্য পুরুষের কাছে তবুও স্বামীর প্রতি, তার সংসারের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালবাসা কমেনি। আর শাহেদ!! তার রুপা তো প্যারালাইজড না, তাকে কত রাত কাছে ডেকেছে কিন্তু ক্লান্তি, ব্যস্ততা আর ইগো দেখিয়ে তাকে একটিবারের জন্যও সে ছুঁয়ে দেখেনি। তার মেয়েটাকে কতদিন সে কোলে তুলে নেয়নি, এই ব্যস্ততা দেখিয়ে! না শাহেদ আজ ফিরছে..ওর আজ অনেক তাড়া।

দুদিক থেকে দুজন টানছে একে অপরকে। তবে এই এতদিনে পবিত্র ভালবাসায় যে ছাপ পড়েছে তাতে দোষটা দুজনার ই। দুজন এমন ভুল না করলে বিষিয়ে যাওয়া পৃথিবীটা কত্ত সুন্দর হত সে কথা ভাবতে ভাবতে শাহেদ এয়ার্পোটে এসে নামল। শাহেদের দু জোড়া চোখ আজ আর নতুন নতুন মানুষ খুঁজছে না, এক চেনাজানা অপেক্ষারত মুখ খুঁজে বেড়াচ্ছে। রুপা আজও জরজেটের শাড়িটা পরেছে, আর খোঁপায় সেই লাল টকটকে রক্তজবা। সে আছে শাহেদের অপেক্ষায়, অবহেলার শেষে ভালবাসা আসে সমুদ্রের উত্তাল ঝড়ো ঢেউয়ের মত। যাতে সব ভেসে যায়। দুটো মানুষ একে অপরকে বুঝলে এই সমাজে তন্ময় চরিত্র বা কোন নেপালি কল গার্ল চরিত্রের দরকার পড়েনা। তখন গল্পটা খুব সুন্দর গোছালো হয়।

লেখা:Borhan Uddin

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *