ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Tuesday, August 14, 2018

পরিবর্তন

love story, valobashar golpo, ভালবাসার গল্প,
"তুমি কি এমন ক্ষ্যাত হয়েই থাকবে? কখনই কি স্মার্ট হতে পারবে না"?
আমি আরনিয়ার কথা শুনে মুচকি হাসলাম। আমার হাসি দেখে আরনিয়া বিরক্তিমাখা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে ধপ করে বেঞ্চ এ বসে পড়ল। আরনিয়ার এমন কথাতে একটু অবাক হলেও মুখে তা প্রকাশ করলাম না। সে আবার বলল..- কি ব্যাপার? তুমি কিছু বলছো না কেনো? শুধু এই বাজে ক্ষ্যাতমার্কা হাসি কেনো দিচ্ছো?
- আমি তো এভাবেই হাসি আরনিয়া। এটা তো তোমার কাছে ভালো লাগত খুব। তুমিই তো বলতা।
- লাগত...। তবে এখন ক্ষ্যাত লাগে। তোমাকে আর তোমার হাসি,তোমার সবকিছু ক্ষ্যাত আর বিরক্তি লাগে।
- আগে তো এমন বলতা না। এখন কেনো বলছো?
- দেখো আবির,আমি কিছু জানিনা। তুমি স্মার্ট হবা।
- আমার মাঝে কি ক্ষ্যাত হুম?
- হিহিহিহিহি..তুম
ি জানো না,আমাকে আবার জিঙ্গাসা করছো? তোমার ঢিলা প্যান্ট দেখলে মনে হয় আরো দুইজনের পা ঢোকানো যাবে একসাথে। পরে আসো চটি জুতো। যা বাড়িতে সবাই ব্যবহার করে আর তুমি কিনা ভার্সিটিতে পরে আসো। চোখে দাও মোটা মোটা ফ্রেমের চশমা দেখলে মনে হয় আশি বছরের বুড়ো। ঢিলা শার্টও এমন ঢিলা যে আরো চারজন একসাথে পরা যাবে,আবার হাতাও গোটাও না। আর আছে মুখে হুজুগে দাঁড়ি। সাথে আঁতেল মার্কা চুলের স্টাইল। একি রকম স্টাইল সারা বছর দিয়ে আসছো। তেল দিয়ে মাথার একপাশে সিথে কেটে। এসব দেখলে অসহ্য ছাড়া কিছুই লাগে না। আমার বন্ধুরা এসব দেখে হাসাহাসি করে। তোমাকে নিয়ে আমাকে খোটা দেয়। বলে আমার চয়েজ এত ক্ষ্যাত কেনো?
আমি আরনিয়ার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। আমার মাঝে এত রকম আনস্মার্ট ব্যাপার আছে ভুলে গিয়েছিলাম। তবে এসব ব্যাপার দেখে সে কেনো আমাকে ভালোবাসছিল? একটা স্মার্ট ছেলেকে ভালোবাসতে পারতো। তাহলে তো আর এত কথা শুনতে হতো না আমাকে নিয়ে সবার কাছে। আর তার সেই ম্মার্ট বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে সবার কাছে গর্ব করতো। মনে মনে এসব ভাবছি,তবে আরনিয়ার সব কথাতে কষ্ট পেলাম বটে।
.
- আমি ক্ষ্যাত তবে তোমাকে ভালোবাসি। তুমি কেনো আমাকে ভালোবাসো? আমার এতই যখন সমস্যা? (আমি)
- তা জানিনা। জানতে চাই না,তোমাকে এখন স্মার্ট হতে হবে।
- যদি না হয়?
- তোমার সাথে আমার আর থাকা হবে না।
- মানে? (আমি)
- সহজ কথা বুৃজতে পারছো না? তুমি এতটাই ক্ষ্যাত যে আমি সবার সামনে তোমাকে নিয়ে কথা বলতে পারি না। কিছু বললেই তারিন, মেহজাবিন, নিলা, রাইফা রা হেসে হেসে বলে "থামতো ক্ষ্যাতটার কথা শুনতে ভালো লাগে না"। তখন খুব খারাপ লাগে।
- হি হি হি..
- ঐ তুই হাসবি না। কেন হাসছিস হা? তুই কি সারাজীবন এমন থাকবি? কোনো চেন্জ হবি না?
- নাহ হবো না। তুমি আমাকে ভালোবাসোই না। যে অন্যের কথা শুনে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে দিতে চাই তার মাঝে ভালোবাসা থাকে না।
মনে করে দেখো তো। তুমি আমাকে যেদিন নিজে এসে বলেছিলে ভালোবাসি। সেদিন তোমাকে আমি না করে দিয়ে ছিলাম। এর কারন তুমি জানতে চাইছিলে। তোমাকে ফিরিয়ে দেয়ার কারন হল এটাই। আমি ক্ষ্যাত,বন্ধু মহলে আমাকে নিয়ে গল্প করতে পারবে না। হয়ত আমার কারনে তুমিও অপমানিত হবে। তবুও ভালোবাসছিলে সব মেনে, এখন কেনো এমন করছো?
- আমি আর নিতে পারছি না। তারিনের বয়ফ্রেন্ডকে দেখেছো কত স্মার্ট? টাইট জিন্স,টিশার্ট, শার্ট পরে বাইকে চালিয়ে আসে। মেহজাবিনের বয়ফ্রেন্ড কে দেখেছো, চুলের কি স্টাইল। সব মেয়েরা তো এর চুলের উপরেই ক্রাশ খাই। নিলার বয়ফ্রেন্ড দেখেছো, প্রতিদিন নতুন নতুন স্টাইল ব্যবহার করে ভার্সিটিতে আসে। আর তুমি? সারা বছর একি স্টাইল ঢিলে প্যান্ট, ঢিলে শার্ট, জুতো একি রকম। কেবল বিরক্তিকর।
- আসল কথাটা কি একটু খুলে বলবে?
- আমার সাথে থাকতে হলে তোমাকে স্মার্ট হতে হবে। আমাকে কাল রাফসান প্রপোজ করেছে।
- কোন রাফসান? স্টাইলিষ্ট রাফসান? মানে টিজার রাফসান? যে কিনা ঠোটে মেয়েদের মত লিপিষ্টিক দিয়ে আসে। আমার তো সন্দেহ ওর ইয়ে আছে কিনা। কেবল ওর না, কানে দুল, ঠোটে মেয়েদের মত লিপিষ্টিক, মেয়েদের মত লম্বা চুলওয়ালা ছেলেগুলোর গোপনাঙ্গ নেই আমি সিওর। কদিন পরে দেখা তোমাদের মত করে ওসব ছেলেগুলো নাকে নাকফুল দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
- মুখ সামলে কথা বলো আবির। নিজে তো স্টাইল দিতে পারবে না। অন্যদের নিয়ে কথা বলে। আর ওটা লিপিস্টিক না। এটা হল এখনকার ফ্যাশান। তুমি এসবের কি বুঝবা। হয়েছো তো ক্ষ্যাত নাম্বার এক।
- ওহ, তাহলে তাকে এক্সেপ্ট করবা তাই ভাবছো তাই না।
- এখনো সেটা নিয়ে ভাবিনি। আসি আমি। থাকো তুমি তোমার মত।
.
আরনিয়া কথাটি বলে চলে গেল। আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। খুব খারাপ লাগছে
মনে হচ্ছে বুকের একপাশে কে যেন বড় একটি ছুরি বসিয়ে দিয়ে গেল। কেমন মেয়ে ও? ভালোবাসতে কি স্মার্টনেস লাগে? ভালোবাসতে গেলে কী নতুন নতুন স্টাইলের হয়? মেয়েদের মত করে স্টাইল মারতে হয়? কি জানি? হয়ত এটাই আমাদের এখনকার কালচার।
.
আরনিয়া যখন প্রপোজ করে আমাকে,সেদিন বেশ অবাক হয়েছিলাম। কারন ক্লাসের টপ স্মার্ট মেয়ের মধ্যে আরনিয়া প্রথম কাতারে। আর সে ক্লাসের চুপচাপ ক্ষ্যাত ছেলেকে প্রপোজ করছে,ভাবা যায়? সেদিন কারন জানতে চেয়েছিলাম কেনো সে আমাকে ভালোবাসে। প্রতিউত্তরে সে বলেছিল "ভালোবাসতে কোনো কারনের দরকার পড়ে না। ভালোবাসা এক নতুন অনুভুতির নাম"। কিছু বলিনি সেদিন। খুব খুশি হয়েছিলাম সেসময়। তবে আজ? সেই আরনিয়া বন্ধুদের কথাতে নিজে অপমানিত হচ্ছে আবার আমার সাথেও এমন করছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে আসলাম।
.
পরের দিন ভার্সিটিতে আসি। এসে আরনিয়াকে খুজতে থাকি। কিন্তু তাকে কোথাও খুজে পাচ্ছি না। ফোন দিলাম ফোন অফ। আরনিয়াকে না দেখতে পেয়ে কেমন যেন লাগছে। সারা ক্লাসে মনমরা হয়ে বসেছিলাম। ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে গেলাম। সেখানেও খুজলাম তাকে। কিন্তু সে নেই।
এভাবেই কেটে গেল ৬ দিন। আরনিয়ার কোনো খোজ নেই। আমি আর না পেরে ৬ দিন পর ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। দারোয়ানের কাছে জানতে পারি আরনিয়া কোথাঢ বেড়াতে গিয়েছে। সেদিন ভার্সিটিতে এসে ওর বন্ধুদের কাছে যেতেই বললাম..
- তারিন?
- আরে মি. ক্ষ্যাত ভাইয়া যে।
- দেখো মজা করো না।
- ঐ চুপ। তোর সাথে আমাদের মজা করতে বয়েই গেছে। তুই তো জোকারের থেকেও ক্ষ্যাত। কী দেখে তোর উপর আরনিয়ার মত একটা মেয়ে প্রেমে পড়েছিল? (নিলা)
- গাইয়া মার্কা চেহারা। কি দরকারে আসছিস বল? (মেহজাবিন)
- নাহ কিছু না। (চলে আসছিলাম)
- ঐ শোন, নিজেকে বদলা বুঝলি,ক্ষ্যাত কোথাকার।
.
কিছুই বলতে পারলাম না। চোখ দিয়ে যে কখন পানি বের হল বুঝিনি। আসছিলাম আরনিয়ার খোজ নিতে। কিন্তু এসেই এত অপমানিত হবো ভাবিনী। হাটতে হাটতে ক্যামপাসের কোনো এক জায়গাতে যেয়ে বসলাম। মাথাটা নিচু করে ঘাস দেখছি। ঠিক তখনি শুনলাম..
- চলো আমার সাথে।
আমি চমকে উঠি। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি আরনিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমি মুখে খুশির রেখা ফুটিয়ে তুললাম। কতদিন পর আরনিয়াকে দেখছি। কেমন আছে,কোথায় ছিল কি করছিল,কোনটা রেখে কোনটা জিঙ্গাসা করবো ভাবছি। তখনি আরনিয়া আবার বলল..
- কী হল কী কথা কানে যাচ্ছে না?
- হুমম যাচ্ছে।
- চলো তাহলে।
- কোথায়?
- চুল কাটার দোকানে। ভাবছিলাম আমার অনুপস্থিতে হয়ত একটু স্মার্ট হবা। সেটা তো করবা না। আর ভালোবাসি বলে থাকতেও পারলাম না। তাই ভাবলাম যেহেতু তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড তাই তোমাকে আমার মত করে পরিবর্তন করবো।
- নাহ আরনিয়া এটা ঠিক না। তাকে সেভাবেই থাকতে দাও যেভাবে সে থাকতে পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
- চুপ, আর একটা কথা না। আজ থেকে দেখিয়ে দিতে হবে তুমিও পারো।
- ওকে বেশ, পরে কিছু হলে আমার দোষ না।
- কিছুই হবে না। চলো তো।
.
আরনিয়ার সাথে সেলুন দোকানে আসলাম। চুলগুলো দুই সাইড থেকে কেটে নিয়ে উপরে রেখে দিল স্পাইক করে। বড় বড় দাঁড়িগুলো কেটে ছোট করে স্টাইল করে দিল। গোঁফ আর দাড়ি সংযোগে স্টাইল করে সেফ করা। মুখে আর কোথাও দাড়ি নেই। এরপর শপিং এ যেয়ে আরনিয়ার পছন্দমত শার্ট, প্যান্ট গেন্জি,জুতো কিনে দিল।
- এসব তো আমিও কিনতে পারি।
- তোমার যা চয়েজ। সেটাও ক্ষ্যাত। আমিই পছন্দ করে দিলাম এসব পরে রোজ ভার্সিটিতে আসবে।
- হুমম।
.
শমিং শেষ করে বাড়িতে চলে আসলাম। মনে মনে হাসছি আর ভাবছি, ঠিক এরাকম একটা সুযোগেরর দরকার ছিল। বাইকটার দিকে তাকালাম। এখনো নতুনই আছে। মাত্র ৪ দিন ব্যবহার করেছিলাম ইন্ডিয়ান মারুতি সুজুকি বাইক।
আব্বুর সাথে কোনো এক বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে, এই সমাজের আধুনিকতা, আর দরিদ্রতা নিয়ে কথা ওঠে। সেসময় আব্বু বলেছিল আধুনিক হওয়া ভালো না। এতে ধর্মকে ভুলে যায় মানুষ। আর দরিদ্রতা থাকতেই পারে তাই বলে কাউকে ছোট করে দেখা ঠিক না। তাই আব্বুর এরুপ কথার উপর ভিত্তি করে কমিল্লা থেকে সোজা ঢাকা ভার্সিটিতে চলে আসি, একটি ক্ষ্যাত আর গরীব ছেলে হয়ে। আর যার ফল আমি হাতে নাতে পেলাম। এবার কেবল আমার দেখানোর পালা।
.
(পরেরদিন)
.
ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে আধুনিক স্টাইলের কাপড়গুলো পরে নিলাম। হাই কনভার্ট, ছেড়া স্টাইলের ব্লু জিন্স,সাদা টিশার্ট আর একটি খোলা নীল শার্ট,সাথে বাইক, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা বাদ দিয়ে কালো সানগ্লাস আর চুল স্পাইক করে বেরিয়ে পড়লাম।
আমি যখন ভার্সিটিতে এসে আরনিয়াদের সামনে বাইক থামালাম। সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। আমার পুরোনো স্টাইল তবে এদের কাছে আমার নতুন রুপে নতুন স্টাইল। সবাই আমার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। চোখে মুখে অবাক এর প্রতিচ্ছবি।
- আমাকে এভাবে দেখার কিছুই নেই। আবির আমি ক্লাসের সেই ক্ষ্যাত বয়।
- আ আ আপনি? আবির ভাইয়া.. (নিলা)
- ইয়েস, আই এ্যাম। এনি ডাউট?
- নাহ ভাইয়া কোনো ডাউট নেই। তবে আপনি যে এত সুইট জানতাম না তো। (নিলা)
- সব কিছুকে মরিচীকা ভাবতে নেই মিস নিলা।
- হুমম ভাইয়া বুঝলাম। ওহ দোস্ত তোর বয়ফ্রেন্ড টা না কি কিউট রে। এতদিন চিন্তে পারিনি। (তারিন)
- দেখতে হবে না কার?
.
মনে মনে বললাম, সময় এখন আমার। সবাইকে আমাকে যেভাবে অপমান করেছিল তার প্রতিশোধ তো নিতেই হবে। সাথে আরনিয়ার বলা কথাগুলোর বাস্তব প্রমান দিতে হবে।
বেশি কিছু ভাবলাম না। বাইক চালিয়ে আরনিয়াকে নিয়ে চলে আসলাম। আরনিয়া অবশ্য জিঙ্গাসা করেছিল বাইক কই পাইছি। তবে তার উত্তর নাদিয়ে হেসেছিলাম।
এভাবেই কেটে গেল আরো দুই সপ্তাহ। ওদেরকে আমার করা অপমানের শোধ দিতে বন্ধু হলাম। একটা সঠিক সময়ের অপেক্ষাতে থাকলাম। এখন নিলা, মেহজাবিন,তারিন,
রাইফা রা আমার সাথে আড্ডাতে মেতে থাকে। এভাবে আরে ১০ দিন গেল। একদিন ক্লাস শেষ করে বসে আড্ডা দিচ্ছি নিলা বললো..
- আবির ভাইয়া আমাকে একটু লিফট দিবেন?
- সবাইকে লিফট দেয় না আমি।
- মজা করছেন ভাইয়া তাই না? (তারিন)
- চুপ, তোমাদের সাথে আমার মজা করতে বয়েই গেছে। তোমাদের সাথে আমার এটিটিউট ঠিক যায় না। আগে আমার লেভেলে আসো তারপর লিফট নিবা বুঝেছো?
আমি আর কিছু বললাম না। আমাকে দেয়া কথাগুলো আজ তাদের ফিরিয়ে দিলাম। এবার বাকি থাকলো আরনিয়া। আরনিয়াকে দেখানোর জন্য ক্লাসের আরেকটি পরিচিত মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে বাইকে করে চলে আসলাম। আরনিয়া সহ বাকিরা আমাদের দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। এভাবে রোজ আরনিয়াকে ছাড়া আগে আসি ভার্সিটিতে আর নতুন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়।
.
একদিন রাতে মামা ফোন দেয়। বেশ খানিক্ষন কথা বলার পর রেখে দিতে যাবো তখনি দেখি আরনিয়ার কল। রিসিভ করতেই..
- কার সাথে কথা বলছিলে?
- কেনো?
- আমি জানতে চেয়েছি।
- ওহ, একটা পরিচিত মেয়ের সাথে। কেনো?
কিছুই বললো না। আমিও হাসলাম। ধুম করে ফোন কেটে দিল আরনিয়া। আমি আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম ফোন অফ রেখে।
.
পরের দিন ভার্সিটিতে আসার আগে ফার্স্ট ইয়ারের একটি মেয়েকে বলে রেখেছিলাম আমার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে। যাতে আরনিয়া এটা দেখে।
যা প্ল্যান তাই হল। ভার্সিটিতে আসতেই আমাদের বাড়ির পাশের একটি মেয়ে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে সে এসে আমার সাথে কথা বলছে।
একটু পর দেখি আরনিয়া আসছে। আমি হেসে হেসে কথা বলছি। মেয়েটিও হাসছে। আরনিয়া আড়চোখে দেখে চলে গেল। আমিও তারপর চলে আসলাম।
.
এভাবে কেটে গেল আরো কিছুদিন। এখন রাতে ইচ্ছে করে ফোন বিজি রাখি। খুব একটা কথা বলি না। এড়িয়ে চলি। আরনিয়ার সামনে মেয়েদের সাথে বেশি ঘনিষ্ট হয়ে কথা বলি। কেবল দেখাতে চাইছি স্মার্ট বানিয়ে সে আমাকে কেমন করে দিয়েছে। একদিন ফার্স্ট ইয়ারের কয়েকজন মেয়ে আর আমি ঘাসের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছি। তখনি দেখি আরনিয়া আসছে। আমরা আরো হেসে হেসে কথা বলতে লাগলাম।আরনিয়া আসলো..
- কি ব্যাপার কি? তোমাদের ক্লাস নেই? ফাজিলের দল যাও ক্লাসে যাও।
- কেনো যাবো? (নাদিয়া)
- কেন মানে? আমি তোমাদের সিনিওর। আমি বলছি তাই যাবা।
- সরি,এখানে তো আবিরও সিনিওল সে তো যেতে বলছে না।
- কিহ,ঐ তুমি ওর নাম ধরে ডাকলে কেনো?
- কেনো? ডাকলে কি হবে? কে হোন আপনি?
- আমি ওর বউ। আমার বরের সাথে এত কথা কিসের হা?
- বউ? আবির তুমি বিয়ে করেছো? তাহলে আমার কি হবে? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি।
- বের করছি তোর ভালোবাসা। যা ভাগ এখান থেকে।
আরনিয়া ওদের ঝাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিল। কিছুদুর এসে নাদিয়া চোট টিপ মারলো। আমিও হাসলাম মনেমনে। কারন অভিনয়টা দারুন হয়েছে।
- কী সমস্যা কি তোমার? (আমি)
- তোমার কিসের সমস্যা? আমাকে আর সময় করনো দাওনা?
- একটি ব্যস্ত থাকি তো তাই।
- কিসের ব্যস্ত? বেশ ক দিন ধরেই দেখছি তুমি অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছো। আগের মত আমাকে ভালোবাসোই না।
- পরিবর্তন করে দিয়েছো তো তুমি।
- আমি তো এটা চাইনি।
- সেটা তো আমি জানিনা। আমি এখন স্মার্ট। আর আমার এখন এরাকম লাইফই ভালে লাগে। ইস কত মেয়েরা এখন আমাকে কিউট,সুইট বলে আহা। তুমি চলে গেলে কিচ্ছুই হবে না।
- এটা তুমি বলতে পারলে না।
- এটা স্মার্ট বয়দের কথা আরনিয়া। এখন তোমাদের সবাইকে ক্ষ্যাত লাগে। আমার এটিটিউট এ তোমার অতি নগন্য। ভালো লাগে না।
- চাই না আমি আর স্মার্টনেস। কি হবে এটা দিয়ে, যদি তুমি আমাকে স্মার্টনেস দেখাতে যেয়ে ভুলে যাও। তোমার ক্ষ্যাত জীবন আমার চাই। যেখানে কেবল আমিই ছিলাম। এখন এই স্মার্টনেস এ তোমার কাছে অনেকেই আসছে। আমি তোমাকে আগের মত করে চাই। এখন বুঝতে পারছি সব।
- হিহিহিহি...
- হাসছো কেনো? (আরনিয়া)
- এরাকম বললে তো এখন হবে না। আমি এখন ক্ষ্যাত হতে পারবো না। তুমি আমাকে যেমন নাচাবে আমি সেভাবে নাচতে পারবো না। এখন বেশ আছি, কত বন্ধুরা,মেয়েরা আমার সাথে কথা বলে খুব ইনজয় করি। ভাগ্যিস তুমি আমাকে পরিবর্তন করে দিয়েছো। না হলে তো এসব থেকে বঞ্চিত থাকতাম।
- না আবির না। আমি আর তোমাকে এভাবে চাই না। আমি তোমার আগের লাইফটা দেখতে চাই।
- সরি। নাজিফা আমাকে কাল প্রপোজ করেছে।
- কোন নাজিফা? ঢং মেরে মুখে এক গাদা আটা মেখে যে ক্লাসে আসে?
- হুমম। তবে এটা এখনকার ফ্যাশন। বুঝলে? মেকাপ বলে।
- রাখো তো ওসব, কি ভাবছো এক্সেপ্ট করবা তাই না?
- নাহ এখনো ভাবিনি। থাকো,আমি আর পরিবর্তন হতে পারবো না।
.
কথাটি বলে আর দাঁড়ালাম না। সোজা হেটে অনেকদুর চলে আসলাম। পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখি আরনিয়া মাথাটা নিচু করে কান্না করছে। বুঝতে পারছি আমি তা। মনে মনে বললাম, সেদিন যদি তুমি এভাবে পিছনে ফিরে তাকাতে দেখতে আমিও তোমার মত করে কান্না করছিলাম আরনিয়া।
.
এভাবে কেটে গেল ৭ দিন। আমি এ ৭ দিন একবারো ভার্সিটিতে যায়নি। ফোন অফ রেখে দিয়েছি। আরনিয়াকে আমি সত্যিইভালোবাসি। তাই তাকে ছাড়া কেমন যেন লাগছে। তাই ৭ দিন পর ভার্সিটিতে আসলাম। দুর থেকে দেখি আরনিয়া ভার্সিটির শহীদ মিনারে সিঁড়িতে মাথাটা নিচি করে বসে আছে। আমি আস্তে করে হাটছি, গায়ে সেই আগেকার পোশাক। আবারো সেই ক্ষ্যাতবয় হয়ে গেছি। ঢিলে পোশাক আর প্যান্ট। চুলগুলো একসাইডে রাখা,চটি জুতো আর ফোটা ফ্রেমের চশমা।
- চলো আমার সাথে।
আমার কথা শুনে আরনিয়া চমকে উঠল। আমাকে দেখে সে দাঁড়িয়ে গেল। মুখের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে কোথায় ছিলাম, কেমন আছি এসবই জিঙ্গাসা করবে। আমি বললাম..
- কি হল চুপ কেনো? কথা শুনতে পারছো না?
- আবির সরি আমি। তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না। আমার দোষ, প্লীজ। আমি সব ভুল বুঝতে পারছি। তুমি যেমনই হয়না কেনো আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- হিহিহিহিহি...
- হাসবে না এভাবে একদম।
খানিকটা সময় চুপ থেকে এক দৃষ্টিতে আরনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। চোখের নিচে কালি পড়ে আছে। হয়ত সারারাত কান্না করার জন্য এমন হয়েছে। মুখে শুকনো শুকনো ভাবো হয়ত না খেয়েই সময় পার করেছে। আমি বললাম তখন..
- আরনিয়া শোনো, স্মার্টনেস আর স্টাইল দিয়ে ভালোবাসা হয় না। স্টাইল আর স্মার্ট কেবল সবাইকে দেখানোর জন্য। আর ভালোবাসা হল এক সাথে সবসময় হাসি খুশি সুখ দুঃখ কান্নার মাঝে বেঁচে থাকা। কেউ দেখতে কালো বলে তার মনে যে ভালোবাসা নেই এটা ভাবা ঠিক না। যে দেখতে ক্যাবলা,ক্ষ্যাত সে যে কাউকে ভালোবাসতে পারবে না এটা ভাবা ঠিক না। প্রত্যেক মানুষের মনে ভালোবাসা আছে। পরিবর্তন দিয়ে অন্যদের দেখানোর আশাতে ভালোবাসা হয় না। অন্যদের দেখিয়ে স্মার্টনেস দেখানোর মাঝে ভালোবাসা থাকে না। আর আমি তোমাকে ভালোবাসি। যা তুমি যেমনই হওনা কেনো। মন দেখে ভালোবাসতে হয় বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে নয। যে বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে ভালোবাসে। ওটা ভালোবাসা না। ওটা কদিন পর শেষ হয়ে যায়। আমি সবকিছু করেছি তোমাকে দেখানোর জন্যই যে পরিবর্তিত মানুষ কেমন হয়।
চলো এখন, এসব বাদ দাও। চলো দুজনে মিলে শুকনো ভাজা ছোলা খেতে খেতে ভ্যানে করে ঘুরে আসি। কতদিন এমন একসাথে ঘুরি নাই চলো তো।
.
আরনিয়া কিছু বললো না। কেবল চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার হাত ধরে হাটতে লাগল।
.

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *