ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Thursday, September 26, 2024

ফেসবুকে ফেইক আইডির প্রেম

ভালোবাসার গল্প, ভালবাসার গল্প

 আমার গার্লফ্রেন্ড একটা ছেলের সাথে ছবি পোস্ট করেছে! ছবিটা দেখেই বুঝা যায় দুইজন খুব ক্লোজ। গার্লফ্রেন্ডের এই আইডিতে আমি এড নাই!

আমার গার্লফ্রেন্ড কে জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার এই আইডির কথা আমাকে বলোনি কেন?"
অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কোন আইডি রায়হান? আমার তো একটাই আইডি। সেটাতে তো তুমি আছ।"
পোস্ট বের করে সুইটি কে দেখালাম। সুইটি চোখ বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল," ওমা দেখছ বাবু! ছেলেটা কী ফাজিল! আমার ছবি দিয়ে ফেক আইডি খুলছে। তুমি এক্ষুণি রিপোর্ট করো।"
আমি আইডিতে রিপোর্ট করলাম। এরপরে ওই আইডিটা খুঁজে পাইনি। মনে হয় ফেসবুক ব্যান করে দিয়েছে। এর কিছুদিন পরে আরেকটা আইডি দেখলাম। সুইটি দেখে বলল, বাবু! আমি আর ফেসবুক চালাব না! এ সব ফাজিল ছেলেরা শুধু আমার ছবি দিয়ে কয়দিন পরপর ফেক আইডি খুলে। আবার দেখ ছবি এডিট করে অন্য ছেলের সাথে ছবি পোস্ট করে! ভাগ্যািস! তুমি দেখছ। যদি আব্বু দেখত তাহলে আমাকে মেরেই ফেলত। সুইটির আব্বু অবশ্য বিদেশে থাকে।
শুক্রবারে সুইটি কে কল দিলাম। " আজ বের হতে পারবা? "
"না, বাবু আজ বের হতে পারব না।"
ভেবেছিলাম শুক্রবার আর বের হবো না। এক বন্ধু জোর করে নিউমার্কেটে নিয়ে গেল। সুইটি একটা ছেলের সাথে নিউমার্কেটে এসেছে। রাতে আমাকে বলল, "বাবু তুমি রবিন কে চিনো না? ও তো আমার কাজিন। আম্মু আমাকে পাঠিয়েছে একটা জিনিস কিনতে। তুমি কি আমায় অবিশ্বাস্য করো রায়হান?"
"না, না অবিশ্বাস্য কেন করব।"
সুইটির সাথে আমার দুইবছরের সম্পর্ক। মেয়েটা খুবই ভালো। দেখতেও বেশ সুন্দর!
রবিনের সাথে আমার একদিন দেখা হলো টি এস সি তে। রবিন অবশ্য আমাকে দেখে ডাকল, "রায়হান ভাই।"
আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে চিনলাম আরে এটা তো সুইটির কাজিন। রবিন আমার কাছে এসে বলল," আপনি রায়হান ভাই না?"
রবিন আমাকে কী করে চিনল বুঝতে পারলাম না। সুইটি কি ওর ফ্যামিলিতে আমার কথা বলেছে? মেয়েটা দেখি খুবই কাজের!
"হ্যাঁ, আমিই রায়হান। আপনি?"
"আমি রবিন। আপনি তো সুইটির কাজিন তাই না?"
হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। রবিন বলল, "সুইটি আপনার কথা প্রায়ই বলে।"
"সুইটি আপনার কে হয়?"
"আপনি খুব ভালো মানুষ তাই বলছি। সুইটি আমার গার্লফ্রেন্ড। "
আমার কথা হারিয়ে গেছে! কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কতদিনের সম্পর্ক আপনাদের?"
"তিন বছর ভাই। "
ছেলে দেখি আমার সিনিয়র!
"ভাই সময় আছে?"
"হ্যাঁ ভাই।"
ছেলেটার মুখে এখনো হাসি লেগে আছে। একটু পরে অবশ্য হাসিটা থাকবে না! আমরা মধুর ক্যান্টিনে আসলাম। আগে একটু চা খেয়ে নেই। রবিনের হাসিটা দেখতে ভালো লাগছে! ও ভাবছে গার্লফ্রেন্ডের কাজিনের সাথে সম্পর্কে ভালো হচ্ছে। সামনে কাজে লাগবে! বলা তো যায় না যদি পালিয়ে বিয়ে করতে হয়।
চা খেতে খেতে বললাম রবিন তুমি কি "সুইটির কোনো ফেক আইডি দেখেছ?"
রবিন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল," হ্যা ভাই। কয়েকটা ফাজিল পোলা এই কাজ করেছে! "
ঠিক আমার মতোই ওকে বুঝান হয়েছে! "আইডিটা এখন নাই তাই না?"
"আমি রিপোর্ট করার পর আর নাই।"
"আইডি ঠিকই আছে। তোমাকে ব্লক করা হয়েছে! "
এবার অন্য আইডি থেকে সুইটির আইডি খুঁজে বের করলাম। রবিন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
"ভাই আপনি এ সব জানলেন কি করে?"
একটু হেসে বললাম, "আমিও তোমার মতো একজন ক্যান্ডিডেট! "
"বলেন কি!"
"আমি তো জানতাম তুমি সুইটির কাজিন।"
একটা ফেক আইডি খোলা ছেলেকে মেসেজ দিলাম। "আমি সুইটির কাজিন। তোমার সাথে কথা আছে যোগাযোগ করো।"
আমি আর রবিন হতবাক হয়ে শুনছি রাসেলের কথা। রাসেল হলো সুইটির ছবি দিয়ে ফেক আইডি খুলেছে। এটা অবশ্য সুইটির কথা। আসল ঘটনা রাসেলের সাথে সুইটির সম্পর্কে চার বছর ধরে চলে!
রবিন বলল, "ভাই আপনি তো আমার এক বছরের সিনিয়র! "
তিনজন মিলে আর দুইটা আইডির রাজন আর আসলাম কে পাওয়া গেল। এরা সবাই সুইটির বয়ফ্রেন্ড। রাজনের সাথে সম্পর্ক পাঁচ বছর আর আসলাম আমাদের সবার সিনিয়র। ওর সাথে সুইটির সম্পর্ক ছয় বছর! প্রতি বছর একজন করে যোগ হয়!
সুইটি এখন আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ করছে না। ওর বাবা বিদেশ থেকে আসছে। কাজেই এখন ও খুব ব্যস্ত থাকবে। এটা অবশ্য আমাদের সবাইকে আলাদাভাবে জানিয়েছে সুইটি!
একজন মধ্যবয়স্ক লোকের সাথে সুইটি কে দেখলাম আমরা। এখন আমরা পাঁচজন একসাথে সুইটিকে ফোলো করি!
রাতে সুইটিকে মেসেজ করলাম," আজ তোমার বাবার সাথে তোমাকে দেখলাম। তোমরা শপিং গেছিলা বুঝি?"
"হ্যাঁ, পরে কথা হবে। এখন আমাকে মেসেজ দিবে না। "
রবিন আমাকে কল দিয়ে বলল, "ভাই জলদি আসেন। "
"কী হয়েছে ভাই?"
"আসেন আপনাকে বলছি সব।" ছেলেটাকে খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছে।
আমি রবিনের সাথে দেখা করতে গেলাম একটা রেস্টুরেন্টে। গিয়ে দেখি রাসেল আর আসলামও এসেছে। মনে হয় সুইটির নতুন কোনো বয়ফ্রেন্ড পাওয়া গেছে!
"কী হয়েছে রবিন?"
আজ সুইটির বাবার সাথে দেখা। একটা দশ বছরের মেয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম সুইটির ছোটো বোন হবে।
আমি সামনে গিয়ে সালাম দিলাম, "আংকেল কেমন আছেন? "
উনি আমাকে চিনতে পারল না। চেনার কথাও না! আমি বললাম, "আমি সুইটির ক্লাসমেট। "
"আমাকে আংকেল ডাকছেন কেন!"
"আপনি সুইটির বাবা না?"
বিরক্ত হয়ে বললেন, "সুইটি আমার স্ত্রী। এটা সুইটির মেয়ে!"
ভাই আমি দ্রুত পালিয়ে এসেছি। পরে খবর নিয়ে জানলাম উনি সুইটির দ্বিতীয় হাসবেন্ড!
Nabil Mahmud

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *