ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Saturday, August 10, 2019

মেয়ে দেখা - অনুভূতির স্বীকারোক্তি


অনেকক্ষণ যাবত তার রুমে বসে আছি কিন্তু সে কোথায়? আজ আমার আসার কথা ছিল সে জানে, তাহলে এখন কোথায়? বসে বসে ভাবছি, আমি খুব খুঁতখুঁতে, মানুষের কথা-বার্তা, শারীরিক ভঙ্গিমা, ব্যবহার্য্য জিনিস পত্র দেখে অনেকটা মানুষের ব্যক্তিত্ব অনুমান করার চেষ্টা করি। 
ভাবতে ভাবতে চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা এক পাতা ভিটামিন-ই ক্যাপসুলের উপর। আধুনিক সৌন্দর্য সচেতন মেয়েরা ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ব্যবহার করে। মনে মনে সিদ্ধান্তে উপনিত হলাম “মেয়েটা আধুনিক”। পাশেই তিব্বত স্নো এর কৌটা, যেটা এখন প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও খুব একটা দেখা যায়না। এবার আমি কনফিউজড “মেয়েটা কি আধুনিক নাকি সেকেলে”। আগের দিনে গ্রামের ঘর গুলোতে স্টিলের শোকেস এর ভিতর দেখা যেত দুই একটা তিব্বত স্নো, পাশেই কতগুলো এরোমেটিক অথবা কসকো সাবান একটার উপরে একটা করে কলাম করে সাজানো ।
.
বলতে বলতে স্মৃতিকাতর হয়ে পরলাম, অনেক পুরোনোদিনের কথা মনে পরে গেল। অনেক আগে একবার দাদির সাথে নারায়নগঞ্জ বেড়াতে গিয়েছিলাম।সবুজ ধান ক্ষেতের মধ্যখানে সাপের মত আকাবাকা চিকন আইলের উপর দিয়ে আমি, আমার দাদি আর দাদির বড় বোন হাটছিলাম, জুতো ছিড়েগিয়েছিল, তাই জুতো হাতে নিয়েই হাটছিলাম, পায়ের নিচে কোমল ও শীতল মাটি। প্রত্যেকটা পদে এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
সামনেই দেখা যাচ্ছে এক বিশাল গাপ গাছ, গাছ টা তার চারপাশে সমান ভাবে ডালপালা বিস্তৃত করে ব্যাঙের ছাতার মত আকৃতি ধারণ করেছে। গাছের কাছে আসতেই দাদি একটা গল্প বলেঃ “ এই গাছে একটা শয়তান আছে, ছোট বেলায় দেখতাম,এই গাছের নিচ দিয়ে হিন্দুরা লাইন ধরে লাঙ্গলবন্দ স্নানের জন্য যেতো, যে সবার পিছনে থাকতো তাকে শয়তান উল্টো করে মাটির নিচে গেড়ে রাখতো।
গল্পটা শুনে খুব ভয় পেয়েছিলাম, তবে এখন জানি এটা নিছকই একটা গল, ঠাকুরমার ঝুলির মত। এই গল্পগুলো আমাদের লোকসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ঠিক আজকের দিনের “গলা কাটা” এর মতো, “গলা কাটা” নিয়ে এখন যেই মুখরোচক গল্পগুলো শোনা যায় হয়ত একশত বছর পর এগুলোই স্থান পাবে আমাদের লোকসাহিত্যে।
.
হঠাত চোখ যায় মোম রঙে আকা একটা ছবির উপরে, সবুজ শ্যামল একটা গ্রাম, গ্রামের মাথায় লাল সূর্য, আর মধ্যখান দিয়ে প্রবাহিত নীল রঙের নদী, নদীর পাড়ে বড় একটি বট গাছ, সেই গাছের ছায়ায় কতগুলো বাচ্চা আর একটা মেয়ে কানামাছি খেলছে। মেয়েটা নিশ্চয় সে। এতো সুন্দর ছবি আকা কোন সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন মনের মানুশের দ্বারাই সম্ভব। হঠাত কারো আওয়াজে আমার ভাবনায় ছেদ পরে।
একজন অনিন্দ সুন্দরী বসে আছে আমার সামনে। মানুষ কি এতো সুন্দর হয়। খয়েরী রঙের ডাগর ডাগর চোখে আমার দিকে কৌতুহুলি দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের পলকে পলকে বড় বড় পাপড়িগুলো ময়ুরের পেখমের মত ওঠা নামা করছে। সে যেন এক সজিব অনুভূতি, যেন শীতের সকালে শিশিরে ভেজা সাদা ফুল। সে একটু হাসল, শিশুদের মত ভাঁজহীন হালকা গোলাপি ঠোঁট একটু ছড়িয়ে নতুন চাদের মত বাকা হয়ে গেল, যেন বর্ষার মৌসুমে ভেজা বাতাসের ঝাপটা শরীরকে শীতল করে দিয়ে গেল





No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *