ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Saturday, August 14, 2021

সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম

ভালোবাসার গল্প, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, valobashar golpo, premer golpo, love story

ঠিক বারোটা বাজতেই তার থেকে উইশ পেয়েছিলাম। জন্মদিনের। এতোটা আশ্চর্য হয়েছিলাম, বলার মত না। কি রিপ্লে দিবো, ভেবেই পাচ্ছিলাম না। খুব নার্ভাস লাগছিল। আর সাথে মনের মধ্যে তো প্রচন্ড রকমের ভালো লাগা তো ছিলই। একেবারে লাড্ডু ফোটার মত। যাইহোক। রিপ্লেতে ধন্যবাদের বেশি জানানো হয়নি।

দুদিন পর ল্যাব খাতা সাইন করানোর জন্য তার ডিপার্টমেন্টে গিয়েছিলাম। সালাম দিয়ে ঢুকতে বললো,
-বসো।
ইতঃস্তত বোধ করছিলাম। আবার বললেন,
-দাঁড়িয়ে কেনো? বসো তো।
বসলাম। বললাম,
-ম্যাম, খাতা গত সপ্তাহে কমপ্লিট হয়নি। তাই সাইন করাতে পারিনি।
কিছুই বললেন না। চট করে ল্যাব খাতাটা সাইন করে দিলেন। সাইন করতে করতে বললেন,
-চুল এতো অগোছালো কেনো? চিরুনী নেই? নাকি কিনে দিতে হবে?
মুচকি হাসলাম। আবার বললেন,
-আমি তোমার তিন চার ব্যাচ বড়। খুব বেশি সিনিয়র না। আপু করেই বলতে পারো।
সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করিনি কারণ, তিনি যখন মাস্টার্সে ভর্তি হন, তখন থেকেই তার প্রতি একটা ভালো লাগা ছিল। বললাম,
-সিটি প্রশ্নটা বেশি হার্ড হয়ে গিয়েছিল। আরেকটু সহজ করলেই পারতে।
চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই খাতা নিয়ে কেটে পরলাম।

পরপর দুটি ক্লাস নেননি। খুব নাকি শরীর খারাপ ছিল। ম্যাসেঞ্জারে জিজ্ঞাস করলাম, "শরীর কি খুব খারাপ?' তিনদিনেও ম্যাসেজ সীন হয়নি। কোন রিপ্লে আসেনি। দিনে অন্তত দশবার করে হলেও চেক করেছি। সীন হলো কিনা। অবশেষে রিপ্লাই আসলো। এখন কিছুটা সুস্থ। সেই থেকেই শুরু। টুকটাক কথা হতো নিয়মিত। বেশিদিন অবশ্য আপু ডাকিনি। তখন কিছু সম্বোধন না করে ভাববাচ্যেই কথা বলতাম। বিষয়টা নেহাতই গোপনীয় ছিল। আমি আর তিনি ছাড়া অন্য কেউই জানতোনা।

এরপরের পর্বটা শুধুই বন্ধুত্বের। ক্লাসে সে আমাকে শাসন করতো। আর ক্লাসের বাইরের সময়টাতে আমি তাকে। কতশত খুঁনসুটিতে পাড় হয়ে গেছে শত রজনী। তখন আমার ফোর্থ ইয়ার ফার্স্ট সেমিস্টার শেষের দিকে। সেটিই ছিল তার ডিপার্টমেন্টের সাথে আমাদের লাস্ট সেমিস্টার। এরপর থেকে আর নিয়ম দেখা হতো না। তবে অনলাইনে সম্পর্কটা আরো মজবুত হয়েছিল। সেটা বন্ধুত্বের চাইতে বেশি কিছু।

একদিন সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বল্লো, আধঘন্টার মাঝে দেখা করার জন্য। ইমার্জেন্সি। খুব ঘাবড়ে গেলাম। কারণ, এর আগে কখনো ফোনেই কথা হয়নি। বাইরে দেখা করা তো দূরের বিষয়। যেতে যেতে একঘন্টা পাড় হয়ে গেলো। সে রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বল্লো,
-বেয়াদব, আধাঘন্টা দাঁড় করায়ে রাখছো আমাকে। ফেল করায়ে দিবো একদম!
-সুযোগ থাকলে তো করবা। তোমার সেমিস্টার তো আগেই শেষ।
-আর কতদিন বিয়ে আটকে রাখবো আমি?
-যতদিন আমার পড়াশোনা শেষ না হয়, চাকরি না পাই; ততদিন।
-ছেলেমানুষী রাখো। বাসা থেকে বিয়ের খুব চাপ দিচ্ছে। আর আটকে রাখা সম্ভব না।
-আমার কি করার আছে?
-কিছুই করার নেই?
-না
-তাহলে?
-তাহলে আর কি? বিয়ে করে ফেলো। সুখী হও!
-হ্যা। করবোই। এক মাসের মধ্যেই।
-দাওয়াত দিও। বিয়ে খেয়ে আসবোনে। গিফট দিতে পারবোনা। পকেট ফাঁকা।

যদিও কথাগুলা মজার ছলেই বলছিলাম। তবে মজাটাই কাল হয়েছিল। কিছু না বলেই সেদিন সে চলে গিয়েছিল। সেদিন পর আর কথাই হয়নি। ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ সবখানেই ব্লক দিয়েছিল। এরপর যে আমি খুব সুখে ছিলাম, তা বলা যায় না। অনেক চেষ্টা করেছি যোগাযোগ করার। ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে অযথা ঘুরঘুর করেছি, বাসার সামনে গিয়েছি। অন্য নম্বর থেকে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করেছি। সম্ভব হয়নি। প্রিয়কে হারানোর কষ্ট আমি তখন বুঝেছি।

সাপ্পোরো ওকাডামা এয়ার্পোটে বসে আসি। বিকাল চারটার ফ্লাইটে তার জাপান আসার কথা। ঠিক চারটা সতেরো মিনিটে ঊর্মিলার দেখা পেলাম। তার রেশমি চুলের ভেলায়, কাজল চোখের মায়ায় স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ঠিক যেমন করে অনার্স লাইফের তার প্রথম ক্লাসে তাকিয়ে ছিলাম; আর সে ডাস্টার ছুড়ে মেরেছিল।

সেদিন দ্বিতীয় বারের মত ঊর্মিলার হাত ধরেছিলাম। তিনটে গোলাপ হাতে প্রথমবারের মত প্রেম নিবেদন করেছিলাম; তাও বিয়ের দুইবছর পর। পরদিন পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্লাস। ঊর্মি আর আমার। এই ক্লাসে সে আমার ম্যাম নয়। ক্লাসমেট। আমি অনার্সের পরপরই স্কলারশিপ পেয়ে জাপান চলে আসি। আমি মাস্টার্স শেষ করতে করতে ঊর্মিও একই ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি জন্য ডাক পায়।
হারিয়ে যাওয়া ঊর্মিলাকে আবার ফিরে পেয়েছি। ম্যাম, আপু কিংবা বন্ধু হিসেবে নয়। সহধর্মিণী হিসেবে।


কামরুল ইসলাম তারেক

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *