ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Monday, June 3, 2019

এটা একটা প্রেমের কাহিনি-৯

love story, valobashar golpo, ভালোবাসার গল্প, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প,
মালয়েশিয়া টেক-অফ এর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে নাভিদ। একটা ট্রাভেল ব্যাগের এর ভিতরে ওর দরকারি সমস্ত জিনিস-পত্র গুছাতে থাকে। ছোট বেলায় রাধার নাভিদের দিকে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা, ধান ক্ষেতের আইলের উপর দিয়ে রাধার ছুটে চলা, স্মৃতি গুলো কেমন জানি তাজা হয়ে উঠেছে নাভিদের কাছে। স্মৃতি বড় বেদনাদায়ক, যেন কেউ ধারালো ছুড়ি দিয়ে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে ফেলছে। হৃদয় রক্তাক্ত, কিন্তু বাহির থেকে তা দেখা যায়না। চোখে অশ্রু টলমল করছে, কিন্তু এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরার সাহস করেনি তার আগেই বাথরুমে গিয়ে নাভিদ নিজের মুখ ধুয়ে ফেলে।
বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে টেবিলের উপর রাখা মোবাইল বাইব্রেশন এ কাপছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে মবিনের নাম্বার। নাভিদ কল রিসিভ করে।
মোবিন= হ্যালো নাভিদ ভাই, তারাতারি ক্যাম্পাসে আসেন
নাভিদ= কেন? কি হইছে?
মোবিন= আইরিনের সাথে প্রবলেম হইছে।
নাভিদ= আমি কি ব্রোকার? তোদের প্রবলেম সল্ভ করবো।
মোবিন= ভাই প্লিজ।
নাভিদ= আমি পারবোনা, আমার কাজ আছে।
মোবিন= ভাই প্লিজ একবার আসেন।
নাভিদ= ঠিকাছে আসতাছি।
***
মোবিনকে খুজতে খুজতে কলেজের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে দাঁড়ায় নাভিদ, চারপাশে সুবিশাল কলেজ ভবন, তার মধ্যখানে দাঁড়িয়ে কিচুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে হাতে নেয়। মোবিনের নাম্বার ডায়াল করতেই অপর পাশ থেকে আনরিচএব্যাল বলা হয়। নাভিদ কল কেটে আবার এদিক সেদিক তাকাতে থাকে, হঠাত একটি মেয়ের দিকে নাভিদের চোখ আটকে যায়, নীল শাড়ি পরা মেয়েটি নাভিদের দিকে এগিয়ে আসছে, মেয়েটি আর কেও না এযে রাধা। নাভিদ সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হয়, কিন্তু রাধা নাভিদের হাত ধরে আটকে দেয়।
রাধা= দাড়াও,তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
নাভিদ= কিন্তু আমার কোন কথা নেই।
রাধা= আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে।
নাভিদ= I am not interested
রাধা= তোমার ইন্টারেস্ট না থাকলেও শুনতে হবে।
নাভিদ= ঠিকাছে বক, আমার কান খোলা আছে।
রাধা= তুমি নাকি বিদেশ চলে যাচ্ছ?
নাভিদ= আমার সম্পর্কে গোয়েন্দাগিরি করা বন্ধ কর।
রাধা= এখানে থেকে গেলে কি হয়।
নাভিদ= আমি কেন বিদেশ যাব সেটা তোমাকে বলতে হবেনা।
রাধা= ঠিকাছে আমি তোমাকে আটকাবোনা। তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় শত্রু। তোমার জন্য আমি কিছু এনেছি, নারিকেলের নাড়ু, আমি নিজের হাতে বানিয়েছি। তোমার পছন্দ হবে।
নাভিদ= আমি না তোমার প্রতি ইন্টারেস্টেড না তোমার নাড়ুর প্রতি।
রাধা দুহাত দিয়ে নাভিদের হাত মুঠো করে ধরে বলে= কেন নাভিদ? দেখ আমার দিকে, আমি আজ তোমার দেয়া শাড়ি পরে এসেছি, তাহলে তুমি কেন আমার দেয়া জিনিস নেবেনা? কেন আমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখ, কেন তুমি আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকো?
নাভিদ চমকে উঠে, বুঝতে পারে রাধা সব কিছু জানতে পেরেছে।রাধার চোখের পানি টপটপ করে নাভিদের হাতে পরে। রাধা মাথা উচু করে নাভিদের দিকে তাকায়, রাধার চোখ রক্তের মত লাল বর্ণ ধারণ করে। রাধা চোখ মুছে আবার বলতে শুরু করে= তোমার জীবনে প্রেম এসেছে একবার আর আমার জীবনে প্রেম এসেছে অনেকবার কিন্তু আমার প্রত্যেকটা প্রেম কাহিনীতে নায়ক একজনই, তুমি, সুধু তুমিই। তুমি কেন আমার সাথে বারবার এমন কর।
নাভিদ= রাধা, তোমার আর আমার ভালোবাসার শুরুটা হয়েছিল বাল্যকালের দুরন্তপনায়, সময়টা ছিল খুবই রঙিন, কিন্তু সেই রঙিন সময় অন্ধকারে পরিনত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ছোট বেলায় যখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে, তোমার চোখে থাকতো আমার জন্য ভালোলাগা কিন্তু আমি বুঝতাম না বরঞ্চ আমার রাগ হতো আমি তোমাকে কাদিয়ে দিতাম, তুমি তখন আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে, আমি হাসতাম, তখনো তোমার চোখে থাকতো আমার জন্য ভাললাগা।ভালোলাগা ভালোবাসায় কখন পরিনত হয় বুঝতে পারিনি। বাল্যকালে তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছ, তোমার কোমল হৃদয় বারবার আমার জন্য আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। এখন তোমার এই অবস্থার জন্যও আমিই দাই। আমি তোমার যোগ্য নই, আমি তোমাকে ডিসার্ভ করিনা। আমার কাছ থেকে দূরে থাকাই তোমার জন্য ভালো।
রাধা= আমার লাইফের ব্যাপারে তুমি একা ডিসিশন নিতে পারনা। আমাকে দুরে সরিয়ে রাখার কোন রাইট তোমার নেই।
নাভিদ= রাধা তুমি বুঝতেছনা।
রাধা= আমার এতো কিছু বুঝা দরকার নাই।আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি আমাকে ভালবাসো। এতোটুকুই যথেষ্ট। প্লিজ নাভিদ আমাকে ছেড়ে যেওনা।
নাভিদ কিছুক্ষন চুপ থাকে তারপর বলে উঠে= ঠিকাছে, নাড়ুগুলা দাও, প্রচন্ড ক্ষুধা লাগছে।
কথাটা শুনে রাধার গোলাপি ঠোট ডিঙ্গি নৌকার মত বাকা হয়ে যায়। চোখে মুখে আনন্দের উচ্ছাস। যেন ফুল বাগানের সবগুলো ফুল একসাথে হেসে উঠে।খুশিতে জড়িয়ে ধরে নাভিদকে।
নাভিদ= এই রাধা কি করছ, কলেজ ক্যাম্পাস, সবাই দেখছে।
রাধা= তাহলে এমন কোথাও চল, যেখানে কেউ দেখবেনা।
নাভিদ= সেই আগের মতই দুষ্ট রয়েগেছ, একটুও চেঞ্জ হওনাই তুমি।
রাধা= তোমার অপেক্ষায় সারাজীবন আমি একইরকম ভাবে থাকতে পারি।
নাভিদ= তুমি আমাকে কিভাবে এতো ভালবাসতে পারো।
রাধা= যেভাবে তুমি আমাকে তেহারি খায়িয়েছ, সেইভাবে। (কথা টা বলেই রাধা নাভিদের মুখে একটা নাড়ু গুজে দেয়।)
নাভিদ= আচ্ছা চল, মোবিন আর আইরিনের মধ্যে কোন একটা প্রবলেম হইছে। সেটা সল্ভ করার জন্য আমাকে ডাকছে।
রাধা= আরে কোন প্রবেলম ই হয়নাই, তোমাকে মিথ্যা বলে কলেজে আনছে।
নাভিদ= তার মানে সব ওদের প্ল্যান।
রাধা= ঐ সব বাদ দাও। আজকে তোমার সাথে অনেক কথা বলব, অনেক ঘুরবো।
নাভিদ= ঠিকাছে, চল তাহলে।




No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *