ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Friday, March 3, 2017

ভালবাসার গল্প- অনুভব

 ভালবাসার গল্প, valobashar golpo, ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প,
এত চুপচাপ থাকিস কেন ?সবার সাথে মিশলে কি তোর খুব ক্ষতি হয়ে যাবে ?"

আমি আবিদ ।মাস্টাস্ এ পড়ছি । কম্প্যাসে একটা গাছের নিঁচে একা একা বসে বই পড়তেছিলাম । এমন সময় উপরের কথাটা শুনতে পেলাম ।

আমি এদিক-ওদিক তাকালাম ।হ্যাঁ আমার থেকে কিছুদূরে ।৪-৫ জন বন্ধু-বান্ধবি মিলে আড্ডা দিচ্ছে ।এর মধ্যে একজন মেয়ে রীতিমত ভাষণের ন্যায় কথা বলে যাচ্ছে ।

এই মেয়েটা আমি ভালো করেই চিনি -মেয়েটির নাম ইমু ।এবার অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে।খুবই চঞ্চল ।

আমি জানি কথাগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করেবলছে ।আমি কিছুক্ষণ ইমুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।ইমু কথা বলছে আর আমার দিকে আড়-চোঁখে তাকাচ্ছে ।

আমি কিছুই বললাম না।একতা মুচকি হাসিদিয়ে বইটা ব্যাগে রেখে সেই স্থান ত্যাগকরলাম ।আর চলতে চলতে ভাবতে থাকলামপ্রথম ইমুর নামের চঞ্চল মেয়েটির সাথে কথাবলার সেই মুহূর্তটি ।

ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই আমারডিপার্টমেন্ট সামনে দেখলাম -একটা মেয়েএলোমেলো ভাবে পায়চারী করছে ।আমি তাকে সাহায্য করার জন্য ।তার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম ।
.
তার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়মেয়েটি আমার সামনে এসে দাড়ালো এবং বলল-আমি ইমু ।এবার ভর্তি হয়েছি ।এই ডিপার্টমেন্ট এ আবিদ নামের কেউ কি আছে ???
.
আমি তার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতেতাকালাম ।
.
ইমু আমতা আমতা করে বলল-না_মানে, ছেলেটি ভালো ছাএ হলেও ।ছেলেটির নাকি খুব ভাব । সবার সাথে প্রয়োজন ব্যাতীত কথা বলে না । একা একা থাকে ?ছেলেটাকে আমার দেখারখুব শখ ।
.
আমি বললাম -আপনি তার সম্পর্কে ঠিকশুনেছেন ।
.
ইমু তখন প্রাণবন্ত কন্ঠেই বলল-আবিদ নামেরছেলেটি মনে হয় প্রেম করে ছেঁকা খাইছে তাই এই রকম হইছে ।আহারে ছেলেটার কিকষ্ট ?

আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম-মোটেও সে ছেঁকা খাইনাই।আসি .....।

ইমু আরও কিছু বলতে ছিল কিন্তু আমি সেখানথেকে চলে আসি ।

ইমু পরে হয়ত জেনে ছিল যে ,আমিই আবিদ । পরে এসে সরি বলে গেছে ।এরপর থেকে কখনো পড়ার বিষয় নিয়ে আবার কখনো অন্যবিষয় নিয়ে আমার কাছে আসত ইমু ।

আমার সাথে কথা বলার কোন সুযোগ না পেয়ে বা বলার সাহস না পেয়ে । দূর থেকে আমাকেউদ্দেশ্য করে আমি যেন শুনতে পারি এইভাবে কত কথা বলত ।এই যেমন :-একটু স্ট্যাইল করবি ,জিন্স পড়বি ভালো লাগবে । শার্টের হাতা ভাঁজ করে রাখবি ,আর মাঝে মাঝে নীল পাঞ্জাবী পড়বি ঠিক আছে এগুলো আমার খুবপছন্দের।কিন্তু আমি কিছুই বলতাম না ।

এইভাবেই চলল কিছুদিন ....আজ হঠাৎ করে ইমু এসে বলল -
আপনার সাথেআমার কিছু কথা আছে ?

আমি বললাম-হুম বল ?
ইমু (কিছুটা স্বাভাবিক ভাবেই বলতে চেষ্টাকরল কিন্তু অবশেষে না বলতে পেরে )বলল-আআ্পনি কি কিছুই্ই বুঝেন না ???
আমি ভ্রু দুটি কিছুটা কুজকে তার দিকেতাকিয়ে থাকলাম ।
ইমু( এবার মনে হয় কিছুটা বিব্রত বোধ করছে ।সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘ একটানিশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু )করল-আপনি জানেন,আমার পিছে কত ছেলে ঘুরে ?কিন্তু আমারকাউকেই ভালো লাগে না । কারন আমার মনটাএকজনের কাছে গচ্ছিত আছে ।সে কেজানেন ???
আমি (নরম স্বরে )বললাম -তা জেনে আমি কিকরব ?

ইমু উচ্চস্বরেই বলল-কি করবেন মানে ?আপনাকে জানতে হবেই ।কেন সেই মেয়েটিবেহায়ার মত আপনার কাছে গিয়ে কথা বলতবার-বার । কেন সে কথা বলার সুযোগ নাপেয়ে ছেলেটিকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলত ।যেই মেয়েটি কখনো লাইব্রেরীতে যেত না ।সে কেন লাইব্রেরীতে সবসময় পড়ে থাকত ।এই
সব প্রশ্নের জবাব আপনার কাছেই আছে ।শুধু আপনার কাছেই??
আমি কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়েচলে এসেছিলাম ।

চলে যায় কিছুটা সময় ।বদলে যায় জীবন ।সময়ের পরিক্রমায় ,আজ দাড়িয়ে আছি ইমুদেরবাসার ছাঁদে ।
আজ আমি পড়েছি নীল পাঞ্জাবী ।হাতেব্ল্যাক কালারের ঘড়ি ।চুলটা আজ ডান দিকে সিথী করা নয় ।

ইমু (আমার পাশে এসে দাড়ালো ।কিছুক্ষণআমাকে দেখল পা থেকে মাথা পর্যন্ত।এরপর )বলল-আপনার সাহসতো কম না আমারবাসার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন ।
আমি সেই আগের মত একটা হাসি দিলাম ।
ইমু (রাগী স্বরেই) বলল-এভাবে হাসবেন না ।আমার কথার উওর দিন ??
আমি (নরম স্বরে)বললাম -ভালোবাসি ।
ইমু (স্বাভাবিক ভাবেই) বলল-কাকে ?
আমি বললাম -একটা মেয়ে আছে ,যে আমারসাথেকথা বলার জন্য বিভিন্ন বাহানা নিয়ে আমারকাছে আসত ।আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলত ।
ইমু (কান্নার ভাব এনে) বলল -ছেলেটি যদিমেয়েটিকে ভালোবাসতো তাহলে এভাবে এতদিন কষ্ট দিত না । তার থেকে দূরেও থাকত না ।
আমি (নরম স্বরেই) বললাম- তোমার বিয়ে গুলোকে ভেঙেছে ?? শুধু তুমি একাই পেয়েছ ??আমি পাইনি??
ইমু (এবার গম্ভীর ভাবে) বলল-তাইতো বলিআমি কতকষ্ট করি বিয়ে ভাঙানো জন্য পারি না ।কিন্তু পরে ঠিকই বিয়ে ভেঙে যায় কেন ?

আমি মাথা নিঁচু করে আছি ।কিছুই বলছিনা ।কিছুক্ষণ পরকেউ আমাকে জড়িয়ে ধরেছে অনুভব করলাম ।
ইমু (আমাকে জড়িয়ে ধরেই কান্না মিশ্রিতকন্ঠেবলতে শুরু )করল-আমাকে আর কষ্ট দেওয়া যাবেনা।খুব খুব ভালোবাসতে হবে । আমি কিছু না বলে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেঅন্য হাত দিয়ে তার মাথার হাত বুলাতে লাগলাম ।

ভালোবাসা জিনিসটা একেক জনের কাছেএকেক ভাবে উপস্থিত হয় ।তাই যেন ,কারওপ্রেম কাহিনীর সাথে কারও প্রেম কাহিনীপুরোপুরি মিলে না । ভালোবাসা জিনিসটাপ্রত্যক জন আলাদা আলাদা ভাবে অনুভব করে।ভালোবাসার মানুষগুলোর থাকনা কিছু মুহূর্তস্মৃতিপটে বন্দি।বেঁচে থাকুক অনুভূতি।বেঁচে থাকুক ভালবাসা অনন্ত কাল।


লেখা
 নাঈমুল ইসলাম

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *