রাঁধা
টা কে হতে পারে? মাথাই কিছুই আসছে না। নাকি আবার আমাদের ভার্সিটির রাঁধা, অসম্ভব
এই রাঁধা হতে পারে না, এটা তো নাভিদের চোখের শূল। আমিও একটা বেক্কল, একেবারে
শুধুশুধু ব্রেনে প্রেসার দিচ্ছি, ডাইরি খুলে পরলেই তো বুঝা যাবে এটা কোন রাঁধা,
নাভিদের রাঁধা না কৃষ্ণের রাঁধা।
আরেক
জনের ডাইরি খুলতেও ভয় লাগে, না জানি কোন আলাদিনের দৈত্য বের হয়। ধুরু বিসমিল্লা
বলে আল্লার নামে শুরু করে দেই।
নভেম্বর
২২, ২০১৫
প্রিয়
ডাইরি
ছোট
বেলায় যখন আমি, রাঁধা, রতন একসাথে খেলতাম, রাধার মাথায় ছোট রাবার দিয়ে আটকানো চুলগুলো
দেখতে কেমন আনারসের মত দেখাত, আমি ওর মাথায় বালি দিয়ে দিতাম। রাঁধা রাগ করত, কাদত
কিন্তু কারো কাছে অভিযোগ করত না। রাধাকে আমি একেবারেই দেখতে পারতাম না। কেমন জানি
আমাকে দেখলেই হাসে, ওর হাসি আমাকে আরও এগ্রেসিভ করে তুলত, আমি তেড়ে আসতাম ওর দিকে
আর তখনি ওর চেহারার আলো দপ করে নিভে যেত, সুন্দর নিষ্পাপ হাসি মিলিয়ে যেত ভয় আর
উৎকণ্ঠায়। ওর হাতে জোরে একটা চিমটি দিয়ে চলে আসতাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকত, আমি
এক বারও পিছন দিকে ফিরে দেখতাম না। রাঁধা কখন ওর বাবা মাকে দেখেনি, ওর জন্মের এক
বছর পরেই ওর বাবা-মা মারা যায়।
তখন ইন্টারে পড়তাম, সেইবার দুর্গাপূজার সময়
রতনের সাথে বাজারের মন্দিরে পুজা দেখতে যাই। রতন আমাকে ওর জন্য প্রসাদ আনার জন্য
পিড়াপিড়ি করে, আমি মন্দিরের পুরোহিতকে গিয়ে বলি= দাদু শিন্নী দাও,
পুরোহিত=
কি দিমু??
আমি=
শিন্নী
পুরোহিত=
অই লাডি ডা লো, হেরে শিন্নী দেই।
লাঠির
কথা শুনার সাথে সাথে আমি এক দৌড়ে মন্দিরের বাইরে। আসলে হিন্দুরা নিজেদেরকে যতটা
অস্মপ্রদায়িক দাবি করে বাস্তবে তারা অতটা অস্মপ্রদায়িক না। এখন তো মুসলমানরা
মন্দিরে গিয়ে পুজা দেখে, পুজার প্রসাদ খায়, তখন মন্দিরে মুসলমান প্রবেশ করলেই
মন্দির নাপাক, বাড়িতে কোন মুসলমান প্রবেশ করলে পুরো বাড়িতে আম পাতা দিয়ে গঙ্গা জল
ছিটায়, কিছু কিছু উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা মুসলমানের সংস্পর্শে আসা মাত্রই গোসল করে
পবিত্র হতে দেরি করেনা।
যাক
সেই কথা বাদ দেই। মন্দিরের বাইরে রতনের সাথে আবার দেখা,
আমি
= কিরে... আমাকে দেখি শিন্নী দেয় নাই,
রতন=
তুই শিন্নী কইসছ কেন??
আমি=
তো কি কমু??
রতন=
প্রসাদ কবি
আমি=
ও... তোরা শিন্নিরে প্রসাদ কছ। আগে কবি না, হুদাহুদি দৌড়ানি খাইলাম।
রতন=
দোস্ত আবার যা
আমি=
ধুরু বেটা, আমারে চিন্না লাইছে, এইবার গেলে বাইন্দা রাখব।
রতন=
দোস্ত... যাস না।
আমি=
প্রসাদ খাবি তুই, আর মাইর খামু আমি, দরকার নাই। এর চেয়ে ভালো বাড়িত যাইয়া ঘুমাই।
পিছন
দিকে ফিরে হাটা শুরু করি, ঠিক তখনি কিছু মেয়ের কথার আওয়াজ শুনতে পাই , তার মধ্যে
একটা আওয়াজ খুব চেনা চেনা লাগছিল, আমি মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করি, ঠিক তখনি মেয়েটা
পিছন দিকে ফিরে, মেয়েটা অন্য কেউ না, স্বয়ং রাঁধা। ওকে দেখতে এতো সুন্দর লাগছে?
আমি রাধার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সাদা শাড়ীর উপরে লাল রঙের ছাপ, কপালে লাল টিপ, দিঘির
জলের মত স্বচ্ছ চোখে গাড় কাজল, ঠোঁটে পাকা মরিচের মত টকটকে লাল লিপ্সটিক এর ছোঁয়া
আমাকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে। মনে হয় সেদিন ই প্রথম আমি রাধার জন্য আমার মনে
ভিন্ন কিছু অনুভব করি।
রাঁধা
আমাকে দেখে ফেলে, সাথে সাথে রাধার সেই বিশেষ হাসি, যেভাবে হাসে শুধু আমার জন্য।
রাঁধা আমার দিকে এগিয়ে আসে
রাঁধা=
কেমন আছেন?? আপনে এই খানে??
আমি=
রতনের সাথে আসছি, ও কই জানি গেছে।
রাঁধা=
অই গরু টা আপনেরে একা রেখে ঘুরতে গেছে, একটা ফাজিল। ...প্রসাদ খাইছেন? আসেন...
আমার সাথে আসেন
এই
বলে রাঁধা আমার হাত ধরে টানতে থাকে
আমি=
এই ই ই রাঁধা... হাতটা ছার।
রাঁধা=
ও সরি
আমি=
তোমার কষ্ট করা লাগবে না, আমি প্রসাদ খাইছি, এখন বাসায় যাবো।
রাঁধা=
ও... কালকে আসবেন?? কালকেও পুজা আছে
আমি=
দুর্গা পুজা কয় দিন হয়?
রাঁধা=
দশ দিন, কালকে নবমী।
আমি=
ঠিক আছে, আমি আসবো।
রাধা
অনেক খুশি, ওর চোখে মুখে রাজ্যের হাসি। আমি পিছনে ফিরে হাঁটতে থাকি, রাঁধা আমার
যাওয়ার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে থাকে।
পরের
দিন সকাল সাড়ে এগারোটা বা বারটার দিকে আমি রতকে খুজতে রাধাদের বাসায় যাই, পুরো
বাড়ি খালি, রাঁধা বাড়িতে একা আর রাধার কাকি গোসল খানায়। আমাকে দেখে রাঁধা উত্তর
করে= দাদা বাসায় নাই, আপনে বসেন।
আমি=
নাহ, আমি পরে আসবো,
রাঁধা=
একটু বসেন
আমি=
আরে নাহ, আমার কাজ আছে
রাঁধা=
মাত্র দুই মিনিট
আমি
মনে মনে বলতে থাকি= দুই মিনিট ওর সামনে বসলে কি হবে, বেক্কল মেয়ে, এখন কেও দেখলে
কি বলবে। মাথায় কোন বুদ্ধি সুদ্ধি নাই।
এরই
মধ্যে রাঁধা সোনালী রঙের একটা কাসার বাটিতে করে আমার জন্য কতগুল নাড়ু নিয়ে আসে।
নারিকেলের নাড়ু আমার খুব পছন্দের এইটা হয়ত রাঁধা জানে, কিন্তু নাড়ু থেকে কেমন জানি
একটা ধুপের গন্ধ আসছিল, মনে হয় সোজা দুর্গা দেবীর চরণ থেকে নিয়ে এসেছে। আল্লাহ
তুমি মাফ কর!! মনে মনে ভাবতে থাকি এই নাড়ু খেলে আমি নিশ্চিত বমি করবো অথবা আমার
পেট খারাপ করবে। নাড়ু গুলো আমাকে দিয়ে রাঁধা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখে
মুখে আনন্দের ঝিলিক, বেক্কল মেয়ে আমি কিভাবে খাই সেটাও দেখবে।
আমি
নাড়ু গুলো খেতে থাকি, যতটা বাজে ভেবেছিলাম আসলে ততটা খারাপ না। অনেক ভালো।
আমি=
নারু গুলা অনেক সুস্বাদু।
রাঁধা=
সত্যি!!! আমি বানাইছি।
আমি=
অনেক ভালো হইছে
ঠিক
সেই সময় রাধার কাকিমা শাড়ীর আচল দিয়ে বুক ঢেকে মাথায় একটা তোয়ালে পেচিয়ে ঘরে
প্রবেশ করে। আমার উপস্থিতি রাধার কাকিমা মোটেও ভালো ভাবে নেইনি, তার চেহারায়
বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু রাধার সেই খেয়াল নেই, রাঁধা গালে হাত দিয়ে মিট মিট
করে হাসছে আর আমার খাওয়া দেখছে। খাওয়ার সময় তাকিয়ে থাকলে কিভাবে খাওয়া যায়। এমন
পাগলামি করে কেন?? ছোট বেলায় যে মাইর দিতাম সেই মাইরের কথা মনে নাই। খাওয়া শেষে
রাঁধা আমাকে এক গ্লাস পানি ঢেলে দেয়, আমি এক চুমুকে পুরো গ্লাস শেষ করে দাঁড়িয়ে
যাই। আমার ঠোঁটের কোনায় পানি লেগেছিল, রাঁধা আমাকে মুখ মুছার জন্য ওর ওড়না বারিয়ে
দেয়। ওর কাকিমা দূর থেকে বাকা দৃষ্টিতে সব লক্ষ করে। আমি কি করবো কিছু বুঝে উঠতে
পারছিলাম না। আমু মুখ মুছে তারাতারি স্থান ত্যাগ করি।
সেই
ঘটনার পরের দিন যখন রাঁধার সাথে আবার দেখা হয়, চেহারায় বিষাদের ছাপ, চোখের নিচে
কালো দাগ, গলায় মাফলার পেঁচানো, পায়ে ঠিক মত ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না। এক দিনের ব্যবধানে ওর শরীরের এমন অবস্থা আমি
কিছুতেই বুঝে উঠতে পারিনি। আমি জিজ্ঞেস করি নাই, জিজ্ঞেস করার কোন ইচ্ছেও হয় নাই।
একটা স্বার্থপর ছেলে এর থেকে বেশি কিইবা ভাবতে পারে। কিন্তু রাধার চোখে ছিল
জিজ্ঞাসার দৃষ্টি। রাধার মলিন মুখ দেখে মনে হচ্ছিল ও আমাকে কিছু একটা বলতে চায়।
প্রায়
এক সপ্তাহ পর বন্ধুদের মারফতে আমি জানতে পারি সেই দিন রাধার সাথে ওর কাকা এবং
কাকিমা মারধর করে, শুধু মাত্র এই অপরাধে যে কেন আমাকে ওদের নিয়মিত খাবার বাসনে
খেতে দিল। আমি খুবি অপমান বোধ করি, তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাই রাধার কথা ভেবে। রাধার
কাকা ওর গলা চেপে ধরে, পায়ের নিচে গাছের ডাল দিয়ে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে
এমন কি ওর মুখেও আঘাত করে। খুবি অমানুষিক নির্যাতন করে রাধার সাথে। আমার জন্য
রাধাকে এমন অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করতে হল এই ভাবনা আমাকে আরও অস্থির করে ফেলে।
সেই দিন থেকে ঠিক করি আর কোন দিন ওদের বাড়িতে যাবো না।
কিন্তু
অপর দিকে আমাদের বাড়িতে রাধার আসা যাওয়া বারতে থাকে, আমার ছোট বোনের সাথে কথা বলার
নাম করে আমাদের বাড়িতে আসে, কোন দিন ওর সাথে দেখা হয় কোন দিন হয় না। যে দিন ওর
সাথে দেখা হত সেদিন ও শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। যতক্ষণ পারে আমাকে দেখত। এমনি
একদিন আমি আমার রুমে বসে বসে বই পড়ছিলাম। পিছন দিক থেকে রাঁধা এসে আমার কাধে হাত
রাখে, আমি পিছনে ফিরে দেখি রাঁধা, ঘটনা চক্রে সেইদিন আমাদের বাড়িতে একমাত্র আমি
ছাড়া কেও ছিল না। আমি রাধাকে বললাম= রাঁধা!! তুমি এখানে কি কর?
রাঁধা=
আপনার সাথে একটু কথা আছে
আমি=
কি কথা??
রাঁধা=
বাড়ি থেকে আমার জন্য পাত্র দেখছে।
আমি=
খুবি খুশির সংবাদ
রাঁধা=
আপনে খুশি হইছেন?
আমি=
হুম
রাঁধা=
আপনে সত্যি খুশি হয়েছেন।
আমি=
আরে হ, তুমি এক কথা বারবার জিজ্ঞেস কর কেন??
রাঁধা=
আমি বিয়ে করতে চাই না
আমি=
কেন??
রাঁধা=
আমি আপনাকে ভালবাসি
আমি
আগে থেকেই জানতাম রাঁধা আমাকে ভালবাসে, কিন্তু এই ভালবাসার কোন ভবিষ্যৎ নাই, আমি
রাঁধা কে গ্রহন করতে পারব না। রাধাকে আমার ফিরিয়ে দিতেই হবে। আমি রাঁধা কে বললাম=
রাঁধা তোমার কি মাথা খারাপ হল নাকি??
রাঁধা=
মাথা খারাপ না হলে কি এতো অবজ্ঞা, অবহেলা, অযত্ন এর পরেও কি আপনাকে ভালবাসি।
আমি=
তুমি হিন্দু আমি মুসলমান, তোমার আর আমার মিল কখন সম্ভব না।
রাঁধা=
আমি মুসলমান হতে রাজি আছি
আমি=
পাগলামি কর না, তুমি যদি মুসলমান হও, সবাই বলবে আমি তোমাকে প্রেমের ফাদে ফেলে
মুসলমান বানিয়েছি।
রাঁধা=
আমি জানি না, আমি শুধু জানি আমি আপনাকে ভালবাসি। যদি আপনি আমাকে গ্রহন না করেন আমি
বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবো।
এটা
বলেই রাঁধা দ্রুত গতিতে আমার ঘর ত্যাগ করে। রাধার বলে যাওয়া কথা গুলো আমার মাথায়
ঘুরপাক খেতে থাকে। একদিকে রতনের বন্ধুত্ব অপর দিকে রাধার নিষ্পাপ ভালবাসা, আমি কি করবো।
সব কিছু কেমন জানি এলোমেলো লাগছিল।
দুই
দিন যাবত রাধার সাথে আমার কোন দেখা নেই, ভেবেছিলাম আর কোন দিন রাধার সামনেই পরবো
না, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ছোট বোনের কাছে জানতে পারি রাঁধার ভীষণ
অসুখ, ওর কাকিমা খুব একটা যত্ন নেয়না, রতনও টোটো কোম্পানির ম্যানেজার, সারাদিন এই
পাড়া অই পাড়া ঘুরে বেড়ায়। কেন জানি বারবার রাধাকে দেখতে মন চাইতাছে, রাধার মায়াবী
মুখ, নিষ্পাপ চাহনি বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ভাবতে ভাবতে রাধাদের বাড়ির
উঠানে গিয়ে দাড়াই, রাধার কাকিমা উঠানে বসে
বসে কুশী কাটা আর সুতা দিয়ে সোফা বানাচ্ছিল, আমি কোন কথা না বলে সোজা রাধার ঘরে
প্রবেশ করি।
রাঁধা
বিছানায়া শুয়ে ছিল, মুখটা কেমন ফ্যাঁকাসে দেখাচ্ছে, চোখ গুলো গর্তে চলে গেছে, ওর
হাতে ছিল লেমিনেটিং করা আমার একটা ফটোগ্রাফ। আমি ফটোগ্রাফ টা হাতে নিয়ে রাধার পাশে
বসি, রাঁধা চোখে মেলে আমার দিকে তাকায়। কিছু বলার চেষ্টা করেও বলেনা। আমি রাঁধা কে
জিজ্ঞেস করি= রাঁধা... কি হয়েছে তোমার?
রাঁধা
কোন উত্তর করেনা শুধু চোখ দুটো বন্ধ করে,
সাথে সাথে দুই ফোঁটা অশ্রু রাধার গাল গড়িয়ে পরে। আমি আবারও প্রশ্ন করি= তুমি নাকি
ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করনা।
রাঁধা
কোন উত্তর না করে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আমি=
রাঁধা যদি কথা না বল আমি কিন্তু চলে যাবো।
রাঁধা
আমার হাতটা শক্ত করে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
আমি রাঁধা কে প্রশ্ন করি= রাঁধা
কিছু একটা তো বলবে??
রাঁধা=
আমি আপনাকে ছাড়া বাচবনা, আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি। আমাকে আপনার কাছ থেকে দূরে
রাখবেন না।
আমি=
তুমি চিন্তা করো না, আমি সব সময় তোমার সাথেই থাকবো, কিন্তু এখন তোমাকে সুস্থ হতে
হবে। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবে, খাওয়ার পর মনে করে
ওষুধ খাবে। ... মনে থাকবে তো??
রাঁধা
মাথা নাড়ায়, অবুঝ বাচ্চাদের মত আমার সব কথা মেনে নেয়। আমি রাধার মাথায় হাত বুলিয়ে
চলে আসি।
পরের
দিন সকালে ঘরে বসে বসে একটা বাতিল ব্রাশ দিয়ে আমার টেবিল ফ্যান টা পরিষ্কার
করছিলাম, এমন সময় রাঁধা এসে হাযির। ওকে দেখেই আমি জিজ্ঞেস করলাম= তোমার শরীর এখন
কেমন রাঁধা??
রাঁধা=
ভালো, তুমি কেমন আছো??
রাধার
সাহস দেখে আমি অবাক গতকাল আপনি বলে সম্বধন করতো আর আজকে সরাসরি তুমি!!! আমি একটু
কৌতুহুলি দৃষ্টিতে রাধার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম=ভালো
রাঁধা=
জানো? আজকে আমার খুব ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা কেউ হ্যাপি কালার দিয়ে
রঙ করে দিয়েছে, পুরো পৃথিবীটা কত রঙিন।
আমি=
হ্যাপি কালার আবার কোনটা??
রাঁধা
= তুমি কিছুই বুঝনা, হ্যাপি কালার মানে হল সুন্দর সুন্দর রঙ।
এমন
সময় বাইরে থেকে রতনের ডাক শুনা যায়, আমি রাঁধা কে বলি তোমার দাদা আসছে, তুমি কোথাও
লুকাও। রতন ঘরে এসে বলে= যা তেহারি নিয়ে আয়।
বাজারে
আমাদের একটা তেহারির দোকান আছে নাম “সুবর্ণগ্রাম তেহারি ঘর”। রান্না
বান্নার কাজ সব বারিতেই হয়। অনেক আগে রতনকে একবার তেহারি খায়িয়েছিলাম, সেই থেকে
প্রায়ই আমার ঘরে হানা দেয় তেহারি খাওয়ার জন্য। আমি রতনকে বলি= দোস্ত তেহারি তো
নাই, তুই কালকে আয়
রতন=
চাপা মারিছ না, তারাতারি লইয়া আয়।
খাটের
নিচে রাঁধা লুকিয়ে আছে, এখন যদি রতনকে আমি তেহারি খাওয়াই তাহলে বিষয়টা জানাজানি
হয়ে যাবে। এই কারণে আমি রতনকে তেহারি না খাওয়ানের যত বাহানা দিতে থাকি কিন্তু রতনও
নাছর বান্দা, তেহারি খেয়েই যাবে। অবশেষে আমি বাদ্ধ হয়ে রতনের জন্য এক প্লেট তেহারি
নিয়ে আসি। রতন খাটের উপর বসে তেহারি খেতে থাকে, আমি রতনের পাশে বসি। হঠাৎ রাঁধা পায়ের
মধ্যে ভীষণ জোরে একটা চিমটি দেয় সাথে সাথে রতনের পায়ে একটা লাথি লাগে
রতন=
কিরে লাথি দেছ কেন?
আমি=
আরে বেটা মশা কামর দিছে
রতন
খেতে থাকে, রাঁধা আমার পায়ে চিমটি দিতে থাকে আর আমি কিভাবে রতনকে তারাতারি বিদায়
করবো সেই ফিকির করতে থাকি। আমি রতকে বলি= দোস্ত আমার অনেক মাথা বেথা করতাছে, তুই
খাইয়া দরজা টান দিয়া জাইছ।
রতন=
ওকে
রতন
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিদায় নেয়, খাটের নিচ থেকে রাঁধা বের হয়ে আসে।
রাঁধা
= তুমি আমার দাদাকে তেহারি খাওয়াইছ কেন??
আমি=
আমি খাওয়াই নাই, তোমার দাদা জোর করে খাইছে
রাঁধা=
তার মানে দাদা নিয়মিত তোমার ঘরে তেহারি খায়
আমি=
হুম, তুমি কাউকে বলনা।
রাঁধা=
একটা শর্ত আছে।
আমি=
কি শর্ত??
রাঁধা
= আমাকেও তেহারি খাওয়াতে হইব
রাধার
কথা শুনে আমার চোখ চড়কগাছ। আমি থ হয়ে রাধার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি
রাঁধা=
কি যাও... নিয়ে আসো
আমি
একটা মৃদু হাসি দিয়ে তেহারি আনতে যাই।
দেখতে
দেখতে রাঁধা এক প্লেট সাবাড় করে ফেলে।
রাঁধা=
তেহারিত খুব সুস্বাদু, যাও আরেক প্লেট নিয়ে আসো
আমি=
রাঁধা প্রথম প্রথম এতো খাওয়া ভালো না, পেট খারাপ করবে। তেহারি অনেক ফেটি খাবার।
তুমি মোটা হয়ে যাবে
রাঁধা=
কেন মোটা হয়ে গেলে কি আমাকে ভালবাসবে না??
আমি=
হুম, বাসব
রাঁধা=
তাহলে যাও নিয়ে আসো।
দেখতে
দেখতে রাঁধা আরও এক প্লেট সাবাড় করে ফেলে।
রাঁধা=
অনেক খেয়েছি এখন একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার
আমি=
হুম, যাও... বাসায় গিয়ে একটু ঘুমাও
সব
কিছু ঠিকঠাক মতই চলছিল, কিন্তু কিভাবে বা কার মাদ্ধমে জানি একদিন রতন জানতে পারে
আমার আর রাধার সম্পর্কের কথা। রতন আমার সাথে উঠা-বসা, চলা ফেরা, কথা বার্তা কমিয়ে
দেয়। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনা কি কারণে রতনের এমন পরিবর্তন। একদিন বিকালে রতন
আমাকে ওর সাথে বালির চরে যাওয়ার প্রস্তাব করে। আমি ভাবলাম অনেক দিন যাবত আমার উপর
রতনের রাগ, এখন যদি রতনের প্রস্তাবে সারা দেই তাহলে রতন আর আমার সম্পর্কের দুরত্ব
কিছুটা কমবে। আমি রতনের প্রস্তাবে সারা দিয়ে ওর সাথে বালির চরে যাই।
সেখানে
আগে থেকেই রতনের কিছু দূর সম্পর্কের আত্মীয় উপস্থিত ছিল, আমরা এক সাথে হাঁটতে
থাকি। কিছুদুর যাবার পর রতনের এক আত্মীয় আমার মাথায় একটা থাপ্পড় দেয়, থাপ্পড় টা
রতন দিলে আমি দুষ্টামি ভেবে ভুলে যেতাম, কিন্তু সে রতনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়
যাকে আমি চিনিই না। জিজ্ঞেস করলাম= থাপ্পড় মারলেন কেন??
সাথে
সাথে রতনের আরেকজন আত্মীয় আমার মাথায় আরকেটা থাপ্পড় মেরে বলে= থাপ্পড় মারছে তো কি
হইছে।
আমি
রতনকে জিজ্ঞেস করি= কি হইছে রতন?? এমন
করতাছছ কেন??
সাথে
সাথে রতন ও ওর সাথের লোকজন আমার উপর হামলে পরে। ওরা আমাকে লাথিসঠা দিয়ে মারতে
মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে। ভাগ্যগুণে দূর থেকে কিছু লোক ওদের কে দেখে ফেলে। তারা
চিৎকার করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে, তাদেরকে দেখে রতন ও ওর সাথের লোকজন দ্রুত
পালিয়ে যায়। বন্ধু যখন শত্রু হয় তখন সেটাই হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সম্পর্ক।
ওরা
আমাকে খুব গুরুতর ভাবে আহত করে, আমার আমার চিকিৎসার ব্যায় বহন করতে করতে আমার
পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে
পরে। আর এদিকে আমার আহত হবার খবর শুনে রাঁধা সাইলেন্ট স্ট্রোক করে, ও একেবারে
নিঃচুপ হয়ে যায়, কারো সাথে কোন কথা বলে না। খাওয়া দাওয়া, গোসল কোন কিছুই ঠিক মত
করে না, সারাদিন শুধু বাড়ির পিছনের টেকে
এলোমেলো চুল গুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে বসে থাকে আর কি জানি ভাবে। কখন কখন হাউ মাউ করে
করে কেদে উঠে।
এক
দিন রাঁধা তার হাতের রগ কেটে ঘরের মেঝেতে পরে থাকে, যতক্ষণে সবাই টের পায় ততক্ষণে
অনেক ব্লিডিং হয়। রাধার হাতে তখনও ছিল রক্তে ভেজা একটা চিরকুট, তাতে আমাকে
উদ্দেশ্য করে দুই তিনটা লাইন লেখা ছিল।
নাভিদ কোথায় তুমি, প্লিজ আমার কাছে ফিরে এসো,
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তুমিই তো বলেছ, সবসময় আমার পাশে থাকবে। আমি খুবি ভিতু,
আমি ভয় পাই তোমাকে হারানোর। আমার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সব কিছু তোমার সাথে ভাগ
করতে মনে চায়, তুমি কি দেখ না আমার চোখে? আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো, প্লিজ আমার
কাছে ফিরে এসো।
ইতি
তোমার
রাঁধা
আমি
আর রাঁধা দুইজনেই মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকি, হয়ত আর কোন দিন দেখা হবে না, বলা হবেনা
মনের কথা চোখে চোখ রেখে, হাতে হাত রেখে। হয়ত আড়ালেই থেকে যাবে আমার ভালোবাসার
গল্প, কেউ কোন দিন বলবে না, কেউ কোন দিন শুনবে না, কেউ কোন দিন জানবেও
না............
এটা...
একটা প্রেমের কাহিনী
written by হাসানুর রহমান
No comments:
Post a Comment
comment