ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Thursday, November 16, 2017

শিক্ষিত মেয়ে

ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালবাসার গল্প, valobashar golpo
ভালবাসার গল্প
জমিলা বেগম অত্যন্ত খুঁতখুঁতে স্বভাবের মহিলা।যেকোন ব্যাপারে পান থেকে চুন খসলে মাথায় রক্ত উঠে যায়।আর এবার তো একমাত্র ছেলের জন্য মেয়ে দেখছেন।মেয়েকে অবশ্যই সর্বগুণে গুণান্বিত হতে হবে।সবথেকে বড় যে গুণটি থাকতে হবে তা হচ্ছে মেয়েকে অবশ্যই অশিক্ষিত হতে হবে।খুব বেশি হলে এইট পাশ হতে পারবে।ফাইভ পাশ হলে আরও ভালো।ছেলের নাম আবির।আবিরেরও এতে কোন আপত্তি নেই।তবে ছেলের একটাই শর্ত মেয়ে অশিক্ষিত হলেও শহুরে মেয়ে হতে হবে। গেঁয়ো মেয়ে আনলে বন্ধুদের সামনে বউকে উপস্থাপন করতে লজ্জা লাগবে।অশিক্ষিত হলেও ভালো পরিবারের এবং শুদ্ধভাষী হতে হবে মেয়েকে। এই কারণেই জমিলা বেগম বিপাকে পড়ে গেছেন।অশিক্ষিত গেঁয়ো মেয়ে পাওয়া যতটা না সহজ অশিক্ষিত শহুরে মেয়ে পাওয়া ঠিক ততটাই কঠিন।তবুও উনি থেমে নেই।চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।আটজন ঘটক লাগিয়েছেন মেয়ে দেখার জন্য।অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা মেয়ের সন্ধান মিলল।মেয়ে অসম্ভব রূপবতী।আর মেয়ের সবথেকে বড় যে গুণ তা হচ্ছে মেয়ে টু পাশ।এ যেন সোনায় সোহাগা।এই মেয়েকে ছেলের বউ বানালে কখনও উনার উপর কখনও কথা বলবে না।শিক্ষিত মেয়েরা অহংকারী হয়,শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে পাত্তা দেয়না এরকমটাই ধারণা জমিলা বেগমের।উনিও অশিক্ষিত ছিলেন।।শ্বাশুড়ি রীতিমত অত্যাচার করতেন উনার উপর।অশিক্ষিত একটা মেয়ের বিয়ের পর ডিভোর্স হয়ে গেলে সারাজীবন বাবা মায়ের বোঝা হয়েই থাকতে হয়।ভাই থাকলেও ভাবীদের অমতে খুব বেশিদিন ঠাই মিলেনা ভাইয়ের বাড়িতে।আর তাই শ্বাশুড়ির সব হ্যা তে হ্যা মিলিয়ে অত্যাচার সহ্য করে বরের বাড়িতে পড়ে থাকাটাই শ্রেয় মনে করে সেই মেয়েগুলো।জমিলা বেগমও তাই করতেন।মুখ বুজে শ্বাশুড়ির খোটা,ঝাড়ি,মার সবই সহ্য করে নিতেন আর মনে মনে নিজেকে এই বলে শ্বান্তনা দিতেন যে এরকম দিন উনারও আসবে,একদিন উনিও শ্বাশুড়ি হবেন।তখন নিজের শ্বাশুড়ির উপর জমে থাকা রাগগুলো ছেলের বউয়ের উপর ঢালবেন। নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে একটা ছেলে চাইতেন সব সময়।আল্লাহ মিলিয়েও দিলেন সোনার টুকরো ছেলে।উনার কোন কথাতেই না নেই ছেলের।আজকাল তাই উনি প্রায়ই নিজের কপাল নিয়ে খুব গর্ববোধ করেন।
-
-
জমিলা বেগম,আবির আর ঘটকের সামনে স্নিগ্ধা জবুথবু হয়ে বসে আছে সোফায়।শাড়ি পড়েছে আজ।জমিলা বেগম মিষ্টি ভাষায় অনেক প্রশ্নই করলেন ওকে।
-মা তুমি রান্না পারো?
স্নিগ্ধা মাথা নিচু করে খুব নিচু গলায় বলল,
-পারি
-পা টিপে দিতে পারো?
এই প্রশ্ন শুনে স্নিগ্ধার বাবা মা একে অন্যের সাথে চাওয়া চাওয়ি করলেন।জমিলা বেগম সেদিকে নজর দিলেন না।উনি খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন স্নিগ্ধার দিকে উত্তর শুনার জন্য।
-জ্বী পারি।
এরকমই আরও কিছু অপ্রীতিকর প্রশ্ন করার পর ছেলের দিকে তাকালেন।
-আবির তোর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে স্নিগ্ধাকে?
আবির খুব নির্লিপ্ত গলায় বলল,
-নাহ।তুমি জিজ্ঞেস করলেই চলবে।আমার কোন প্রশ্ন নেই।
বলেই হাই তুলল আবির।তার স্নিগ্ধার ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই এটা বোঝা যাচ্ছে।কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে স্নিগ্ধার আবিরকে পছন্দ হয়েছে।অবশ্য স্নিগ্ধার ব্যাপারে নির্লিপ্ততা ছাড়া আবিরকে অপছন্দ করার আর কোন কারণ নেই।উচ্চশিক্ষিত তার উপর ভালো চাকরি করছে।দেখতেও সুদর্শন।স্নিগ্ধার বাবা মায়ের একটু খোঁচা লাগছিল মনে তবে মেয়ের পছন্দ হয়েছে বলে উনারা আর আপত্তি করেননি।অনেক ছেলেই দেখেছেন মেয়ের জন্য।সব ছেলের মাঝেই মেয়ে কোন না কোন খুঁত বের করেছে।তাই সবার সম্মতিতে শেষ পর্যন্ত ধুমধাম করেই হল ওদের বিয়েটা।
-
-
জমিলা বেগম আজ খুব খুশি।সব মহিলা প্রতিবেশীরা এসেছে বাড়িতে নতুন বউ দেখতে।উনি খুব রসিয়ে রসিয়েই বলছেন,
-একদম লক্ষী বউমা এনেছি ছেলের জন্য।রান্নায় তার কোন জুড়ি নেই।সব ব্যাপারে পটু আমার বউমা।
বলেই স্নিগ্ধার রান্না করা পায়েস এগিয়ে দিলেন সবার দিকে।
-আমার বউমা রান্না করেছে।খেয়ে বলুনতো কেমন হয়েছে।
বলেই সবগুলো দাঁত বের করে প্রশান্তির হাসি হাসলেন।একজন জিজ্ঞেস করল,
- তা তোমার বউমা পড়াশুনা করেছে কতদূর?
জমিলা বেগম বলতে যাবেন তখনই আবির রুমে ঢুকল।প্রশ্নটা আবিরের কানেও পৌঁছুল ।স্নিগ্ধা সবার মাঝখানেই মাথা নিচু করে চুপচাপ সোফায় বসে ছিল।আবির স্নিগ্ধার পাশে এসে বসল।জমিলা বেগম ভাবছেন ছেলেটা বেহায়া হয়ে গেছে খুব।বিয়ের দুদিন পরেই এতগুলো মহিলার মাঝখানে বউয়ের পাশে এসে বসে কেউ?আবিরের আওয়াজে সংবিত ফিরে এল উনার।
-স্নিগ্ধা ঢাকা ভার্সিটি থেকে অনার্স কমপ্লিট করেছে ফার্মাসীতে।বর্তমানে আমরা একই কোম্পানীতে জব করছি।তবে স্নিগ্ধা আমার উপরের পদে আছে।
বলেই হাসলো আবির।
জমিলা বেগম হা করে তাকিয়ে আছেন ছেলের দিকে কি বলছে এসব!!!হয়ত বউ অশিক্ষিত এটা বলতে লজ্জা করছিল তাই মিথ্যা বলছে এদেরকে।এটা চিন্তা করে মনে মনে একটু শান্তি পেলেন জমিলা বেগম।এর মাঝেই আবির আবার বলল,
-কি হল স্নিগ্ধা তোমার চাকরি সম্পর্কে কিছু বল আন্টিদের।
স্নিগ্ধা বলতে শুরু করল আর তার সাথে জমিলা বেগমের চারপাশ অন্ধকার হয়ে যেতে লাগলো।উনার মাথায় কিছু ঢুকছে না।আবির মনে মনে ভাবছে ঘটক দিয়ে মিথ্যা বলিয়ে বিয়েটা না করলে মা কখনও স্নিগ্ধাকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতেন না।শিক্ষার আলো থেকে যিনি বঞ্চিত শিক্ষিত বউমার মূল্য উনি কিভাবে বুঝবেন?তবে আবির জানে কোন না কোনদিন মা স্নিগ্ধাকে মেনে নেবেন।সময়ের সাথে উনি ঠিকই বুঝতে পারবেন অসাধারণ একটা মেয়েকে ছেলের বউ করে এনেছেন যে সত্যিই সর্বগুণে গুণান্বিত। হঠাত কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ এল কানে।জমিলা বেগম অজ্ঞান হয়ে গেছেন।কোনকিছু মনের মত না হলে এভাবেই অজ্ঞান হয়ে যান উনি।খুব স্বাভাবিক ঘটনা এটা।


হুমায়রা আফিয়া

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *