ভালবাসার গল্প
|
-
-
জমিলা বেগম,আবির আর ঘটকের সামনে স্নিগ্ধা জবুথবু হয়ে বসে আছে সোফায়।শাড়ি পড়েছে আজ।জমিলা বেগম মিষ্টি ভাষায় অনেক প্রশ্নই করলেন ওকে।
-মা তুমি রান্না পারো?
স্নিগ্ধা মাথা নিচু করে খুব নিচু গলায় বলল,
-পারি
-পা টিপে দিতে পারো?
এই প্রশ্ন শুনে স্নিগ্ধার বাবা মা একে অন্যের সাথে চাওয়া চাওয়ি করলেন।জমিলা বেগম সেদিকে নজর দিলেন না।উনি খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন স্নিগ্ধার দিকে উত্তর শুনার জন্য।
-জ্বী পারি।
এরকমই আরও কিছু অপ্রীতিকর প্রশ্ন করার পর ছেলের দিকে তাকালেন।
-আবির তোর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে স্নিগ্ধাকে?
আবির খুব নির্লিপ্ত গলায় বলল,
-নাহ।তুমি জিজ্ঞেস করলেই চলবে।আমার কোন প্রশ্ন নেই।
বলেই হাই তুলল আবির।তার স্নিগ্ধার ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই এটা বোঝা যাচ্ছে।কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে স্নিগ্ধার আবিরকে পছন্দ হয়েছে।অবশ্য স্নিগ্ধার ব্যাপারে নির্লিপ্ততা ছাড়া আবিরকে অপছন্দ করার আর কোন কারণ নেই।উচ্চশিক্ষিত
-
-
জমিলা বেগম আজ খুব খুশি।সব মহিলা প্রতিবেশীরা এসেছে বাড়িতে নতুন বউ দেখতে।উনি খুব রসিয়ে রসিয়েই বলছেন,
-একদম লক্ষী বউমা এনেছি ছেলের জন্য।রান্নায় তার কোন জুড়ি নেই।সব ব্যাপারে পটু আমার বউমা।
বলেই স্নিগ্ধার রান্না করা পায়েস এগিয়ে দিলেন সবার দিকে।
-আমার বউমা রান্না করেছে।খেয়ে বলুনতো কেমন হয়েছে।
বলেই সবগুলো দাঁত বের করে প্রশান্তির হাসি হাসলেন।একজন জিজ্ঞেস করল,
- তা তোমার বউমা পড়াশুনা করেছে কতদূর?
জমিলা বেগম বলতে যাবেন তখনই আবির রুমে ঢুকল।প্রশ্নটা আবিরের কানেও পৌঁছুল ।স্নিগ্ধা সবার মাঝখানেই মাথা নিচু করে চুপচাপ সোফায় বসে ছিল।আবির স্নিগ্ধার পাশে এসে বসল।জমিলা বেগম ভাবছেন ছেলেটা বেহায়া হয়ে গেছে খুব।বিয়ের দুদিন পরেই এতগুলো মহিলার মাঝখানে বউয়ের পাশে এসে বসে কেউ?আবিরের আওয়াজে সংবিত ফিরে এল উনার।
-স্নিগ্ধা ঢাকা ভার্সিটি থেকে অনার্স কমপ্লিট করেছে ফার্মাসীতে।বর্ত
বলেই হাসলো আবির।
জমিলা বেগম হা করে তাকিয়ে আছেন ছেলের দিকে কি বলছে এসব!!!হয়ত বউ অশিক্ষিত এটা বলতে লজ্জা করছিল তাই মিথ্যা বলছে এদেরকে।এটা চিন্তা করে মনে মনে একটু শান্তি পেলেন জমিলা বেগম।এর মাঝেই আবির আবার বলল,
-কি হল স্নিগ্ধা তোমার চাকরি সম্পর্কে কিছু বল আন্টিদের।
স্নিগ্ধা বলতে শুরু করল আর তার সাথে জমিলা বেগমের চারপাশ অন্ধকার হয়ে যেতে লাগলো।উনার মাথায় কিছু ঢুকছে না।আবির মনে মনে ভাবছে ঘটক দিয়ে মিথ্যা বলিয়ে বিয়েটা না করলে মা কখনও স্নিগ্ধাকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতেন না।শিক্ষার আলো থেকে যিনি বঞ্চিত শিক্ষিত বউমার মূল্য উনি কিভাবে বুঝবেন?তবে আবির জানে কোন না কোনদিন মা স্নিগ্ধাকে মেনে নেবেন।সময়ের সাথে উনি ঠিকই বুঝতে পারবেন অসাধারণ একটা মেয়েকে ছেলের বউ করে এনেছেন যে সত্যিই সর্বগুণে গুণান্বিত। হঠাত কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ এল কানে।জমিলা বেগম অজ্ঞান হয়ে গেছেন।কোনকিছু মনের মত না হলে এভাবেই অজ্ঞান হয়ে যান উনি।খুব স্বাভাবিক ঘটনা এটা।
হুমায়রা আফিয়া
No comments:
Post a Comment
comment