ইদানীং একটা বিষয় আমি খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করছি।অবন্তিকা আমাকে সব কিছুতে'ই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
-অবন্তিকা!!
-হুম।
-ফোনে এতোক্ষণ কি করছিলে..?
-মানে!!
-মানে তোমার ফোন আমি এতক্ষণ বিজি পাচ্ছিলাম কেন?
-বিজি?!!...কই নাতো!
- প্রায় দুই ঘন্টা যাবত আমি তোমার ফোনে লাগাতার কল করে যাচ্ছি... কিন্তু বার বার ওয়েটিং'য়ে দেখাচ্ছিলো।কারণ
-কোনো কারণ নেই।এমনি হয়তো নেটওয়ার্ক প্রব্লেম ছিলো।
-ওহ তাই?...কিন্তু নেটওয়ার্ক প্রব্লেম থাকলে তো ফোনে কলই ঢুকত'না।আর সেটা তো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো?
-(ফোনের ওপাশে বিরক্তির আভাষ)
-সত্যি করে বলো অবন্তিকা কি করছিলে যে তোমাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিলোনা?(জোড়
-কি করছিলাম মানে??তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো??
-ধরে নাও সেটাই!!
[এ কথা বলার সাথে সাথে তুই তাকারী থেকে শুরু করে যত প্রকার বাংলিশ বোকা এবং ঝাড়ি আছে সব বলে অবন্তিকা ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দিলো]
.
ইয়া আল্লাহ...মাবুদ.
.
এটা'তো ছিলো কয়েকদিন আগের ঘটনা।
আরো চমকপ্রদ ঘটনা আছে।
.
গত কাল অবন্তিকা'কে আবার কল দিলাম দেখা করার জন্য ।
-ওহে.. অবন্তিকা!!
-হুম।
-একটা কথা বলি শুনবেন?
-হুম বলো।
-অনেকদিন তো হয়ে গেলো আপনার চাদখানা মুখ দেখিনা।চলেন আজকে আমরা দুজন দেখা করি।
-সময় নেই..অন্য একদিন করবো।
-অন্যদিন কেন??..আর কি করেন যে আমার সাথে দেখা করার সময় পর্যন্তও নেই?
-ওই এতো প্রশ্ন করো কেন তুমি হ্নম?(রেগে গিয়ে)
-যে'টা জিজ্ঞেস করছি সেটার ঠিক ঠাক উত্তর চাই অবন্তিকা।
-অনেক ধরনের কাজ থাকে আমার বুঝবেনা!
-কত ধরনের?
-হারামী..কুত্তা
.
[আবুলের মতো ফোন হাতে দাঁড়িয়ে ভাবছি... যাহ বাবা!!এটা আমার সাথে কি হলো?!!..হে খোদা. ...এতো আবেগ রাখি কই??আবেগে'তো আমার কান্না করে দিতে মন চাইতেছে।যে মেয়েটাকে দেখা করার কথা বললে নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগে গিয়ে বসে অপেক্ষা করতো সে আজ আমার সাথে দেখা না করার জন্য বিভিন্ন মনগড়া কাজের বাহানা দেয়।]
.
অবন্তিকার সাথে আমার ফার্স্ট পরিচয় হয়েছিলো এক সন্ধ্যায়।
সেদিন সন্ধ্যাবেলা আমি বারান্দায় বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছিলাম আর গুনগুন করে গান গাইছিলাম।শীতের সন্ধ্যায় গরম গরম কফি। বাহ!!... কি ফিলিংস!! কিন্তু এই ফিলিংস টার বারোটা বাজলো যখন বাড়ির সামনে ইয়া বড় চারটা হাড়কিপ্টা কুকুরের" ঘেউ ঘেউ"আওয়াজ আমার কানে ভেসে এলো।মনটা চাচ্ছিলো তখন বারান্দা থেকে এক লাফ দিয়ে নেমে কুকুরগুলার লেজ ধরে উরাধুরা ঘুরান্টি দেই।কিন্তু অনেক কস্টে মনের রাগখানা কন্ট্রোল করলাম।
হারামজাদা কুকুরগুলা এই অসময়ে চিল্লাচিল্লি করতেছে কেন দেখতে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দা থেকে একটা উকি মারলাম।
আরে.....!! এতো দেখি অন্য কেস।হারামজাদা কুকুরগুলা এতোক্ষণ ধরে একটা মেয়েকে দেখে এরকম ঘেউ ঘেউ করতেছে।আর ঐ মেয়েটা কামড় খাবার ভয়ে এক কোনায় দাড়িয়ে থেকে পপকনের মতো ভয়ে কাপছে।
আর কোনো দেরি না করে বাসায় থাকা তালের মোটা লাঠিটা নিয়ে এক দৌড় দিয়ে সোঝা মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।কুকুর বাছাধনেরা এবার ওদের ফোকাস টা মেয়েটার উপর থেকে সরিয়ে আমার উপর দিলো।
হাহাহাহা.......
.
মেয়েটা দেখি এখনো পপকনের মতো ফুটতেছে সরি কাপতেছে।লাঠী কাধে যুদ্ধ জয় করা বীরদের ন্যায় গর্বিত কন্ঠে বালিকাকে অভয় করে বললাম...
-
-আপনার কোনো ভয় নেই!!আমি ওদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছি!"
-থ্যাংকস!
(মনে মনে বললাম -এতো কস্ট করে কুকুরকুণ্ডলী তাড়ালাম সামান্য থ্যাংকস পাবার জন্য!হায়রে পোড়া কপাল আমার)
-কি বললেন??
-না কিছুনা।তা এ সন্ধ্যাবেলায় একা একা কোথায় যাচ্ছিলেন?আপনার
-ইয়ে মানে...আমি প্রতিদিন এ সময় প্রাইভেট শেষ করে বাসায় ফিরি।কিন্তু আজকে কেন যেন কুকুরগুলো আমাকে দেখে বিকট শব্দে ঘেউ ঘেউ করছিলো।
-বুঝলাম।
আসলে ওরা নতুন কাউকে দেখলে এরকম করে।আর এভাবে একা বের হবেননা।বের হলে বড় কোনো গার্জিয়ান কে নিয়ে রাস্তায় বের হবেন।তা নাম কি আপনার??
(নাম জিজ্ঞেস করাতে বালিকা আমার দিকে এমন ভাবে ঘুরঘুর করে তাকালো যেন আমি বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছি)
-অবন্তিকা।~~~~ব
.
কুকুরজাতি পাউরুটি প্রিয়।
তাই এরপর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমি কুকুরের দলগুলোকে পাউরুটির প্রলোভন দেখিয়ে আমার বাড়ির সামনে এনে বসিয়ে রাখতাম আর লাঠী হাতে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েটার হেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতাম।
যেই অবন্তিকা আসতো..... কুকুরগুলা ঘেউ ঘেউ চিল্লানী দিতো আর আমি গিয়ে বেচারাদের গণধোলাই দিয়ে তাড়িয়ে দিতাম।রোজ সন্ধ্যাতেই আমি এই একই রুটিন ফলো করতাম।
আর এভাবেই প্রথম দিন নাম,দ্বিতীয় দিন পরিচয় ,তৃতীয় দিন বাসার ঠিকানা,চতুর্থ দিন ফোন নাম্বার ইত্যাদি সব কিছু জোগাড় করে ফেললাম।একসময় মন দেওয়া-নেওয়াও সম্পন্ন হলো।সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে চলে এলো।প্রবেশ করলাম রিলেশন নামক প্যারার জগতে।
.
ভালোই চলছিলো সবকিছু আর বিশ্বাস করুন প্রথম প্রেমের অর্থাৎ রিলেশনশিপের সব কিছুই সুন্দর লাগে। প্রতিটা মুহূর্ত গোছানো থাকে।আমাদেরটা'ও
.
শেষ বারের মতো অবন্তিকাকে কল দিয়ে বিকালে পার্কে দেখা করতে বললাম।প্রথমে রাজী হতে চায়নি কিন্তু জোর করাতে রাজী হয়ে যায়।
বিকাল ৩টা......
অবন্তিকা এবং আমি লেকের সামনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।অবন্তিক
-কেন ডেকেছো?
-চুপিচুপি ধামাকা করতে....!
-মানে কি?ওই খবরদার তুমি আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেনা বলে দিলাম।নইলে আমি চিৎকার করে লোকজন জড়ো করবো কিন্তু।
-হাহাহা....বোকা
-বুঝলামনা....
-বুঝতে হবেনা।আচ্ছা তোমার হাতটা দাও তো দেখি অবন্তিকা।
-কেন??
-আহা প্রশ্ন করোনা।আগে দাও তার পর বলছি।
(অবন্তিকা হাত বাড়িয়ে দেয়.. আমি ওকে সুন্দরমত প্লাস্টিকের বানানো কিছু গোলাপ ফুল হাতে ধরিয়ে দিলাম!!)
-এটা কি??
-প্লাস্টিকের গোলাপ।
-সেটা তো আমিও দেখতে পাচ্ছি। বাট এটা আমাকে দিলে কেন?
-ফিউচারে আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী বহন করবে এই লাল প্লাস্টিকের গোলাপফুলগুলো।
-যাহ শয়তান.....
-আচ্ছা অবন্তিকা একটু ওইদিকে তাকাও তো...!
-কেন?
-এতো প্রশ্ন করো কেন?বলছি তাকাতে তাকাও
(অবন্তিকা অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে লেকের দিকে তাকায়)
.
এমন সময় পিছন থেকে দৌড়ে এসে ওকে সজোরে দিলাম এক লাথি। ব্যাস অবন্তিকা সোঝা লেকের পানিতে ধপাস করে পড়লো।আশেপাশের সব লোকজন সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে।হাহাহ...
তারপর পাশের গাছ থেকে আগে থেকে রাখা সবজির বস্তাটা নিয়ে আসলাম।ইচ্ছা মতো টমেটো, গাজর,শশা,মুলা,আ
এরপর অবন্তিকাকে জোরে শুনিয়ে বললাম,
"ও গো..! তোমার সাথে ব্রেকাপ করলাম গো!আর ধামাকা টা কেমন লাগলো পরে জানিও!"
.
আমি পিছন দিকে ফিরে হাটা দেয়া শুরু করলাম।
আর মনে মনে ২টা লাইন গুনগুন করে বলতে লাগলাম.......
:ও গো অবন্তিকা!! :
:তোমার প্রেম আমার কাছে যাস্ট একটা মরীচিকা :
রাইটারের নাম→Arnaf Rah Man
No comments:
Post a Comment
comment