ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Saturday, March 10, 2018

তোমার আমার প্রেম

ভালোবাসার গল্প, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, valobashar golpo, premer golpo, love story

প্রতিদিনই অর্থিকে ফলো কর ।অরথিও ব্যাপারটা বুঝে। কিন্তু চুপ করেথাকে। কেউ একজন বলেছিল নীরবতাসম্মতির লক্ষণ। এই যুক্তির উপর ভরসা করেএকদিন অর্থিকে ডাক দিলাম।
- এই যে শুনেন।
:- দেখুন আমি জানি আপনি কি বলত  েচাচ্ছেন। অহেতুক নিজের সময় নষ্টকরবেন না। এসবে আমার কোনো আগ্রহনেই।
কথা গুলো শেষ করেই সে চল  গেল ।আমি বোকার মত তার গমন পথেতাকিয়ে থাকলাম। মনে মনে বলতেলাগল কোন গাধায় বলেছে নীরবতাসম্মতির লক্ষণ? যাইহোক আমি অর্থিরপিছু ছাড়িনি। ভালবেসেছি সুতরাং হাল ছেড়ে দিলে হবে না। বেশকিছুদিন যাওয়ার পর একদিন অর্থি আমাকেডাকলো। খুশি মনে গেলাম।
- জ্বি বলেন।
:- আপনাকে না বলেছি সময় নষ্ট করবেননা। আমি এসবে আগ্রহী নই।
- তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে।
:- দেখুন আমি গ্রামের খুব সাদাসিধেমেয়ে। তবে আমি বোকা নই। দয়াকরেআমাকে আর বিরক্ত করবেন না।

মন খারাপ নিয়ে বাসায় এলাম। তবুওচেষ্টা ছাড়লাম না। অর্থির একবান্ধবী আমাকে চিনে। এবার তাকে
দিয়ে ট্রাই করলাম। অনেকপিড়াপিড়ির পর অর্থি আমার সাথেকথা বলার জন্য আমাকে পার্কেডাকলো। পার্কে! আমি তাও খুশিতেআকাশে ভাসা শুরু করলাম। সঠিক সময়নির্দিষ্ট স্থানে যেয়ে হাজির হলাম।
অর্থিও হাজির। যেয়ে হাই দিলাম।অর্থি তার পাশের খালি স্থানটারদিকে ইশারা করে বলল
:- বসেন।কে ঠেকায় আমারে! ধুপ করে বসেপড়লাম।
- ভাল আছ?
:- হ্যা। কতটুকু ভালোবাসেন। ?
- অনেক অনেক অনেক।
:- কয়দিন থাকবে এই ভালবাসা?
দিল বাশ।
- কখনোই ফুরাবে না।
:- ফুরাবে যেদিন লিটনের ফ্ল্যাটেনিতে পারবেন সেদিনই ফুরাবে।
- দেখ হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান না।
:- এই ডায়ালগ অনেক পুরানো। এসবভালবাসা ফ্ল্যাট পর্যন্ত টিকে।তারপর ঢুস।
- আমার ভালবাসা ফুরাবে না।
:- তাহলে চলুন লিটনের ফ্ল্যাটে।তারপর দেখা যাবে এটা ভালবাসানাকি অন্যকিছু।মেজাজটাই বিগড়ে গেল।
- থাক লাগবে না ভালবাসা। আগেভালবাসার সম্মান দিতে শিখ। তারপরনা হয় ভেবে দেখব। আর কখনো
ডিস্টার্ব করব না। বাই।

চলে এলাম। ওর কথাগুলো মনের মধ্যেকাটার মত ফুটছিলো। তাই রাগসামলাতে পারলাম না। বেশ কিছু দিনপার হয়ে গেল। আমি ওর সামনেওযাইনি। সপ্তাহখানেক পর অর্থির সেইবান্ধবীটা বলল অর্থি দেখা করতেচায়। মনের মধ্যে রাগ আছে তবেভালবাসাটাও তো আছে। তাই দেখাকরতে গেলাম। পাশে বসতে বলল।কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলাম।
:- এই ভালবাসা?
- তুমিই তো ভালবাসার অপমানকরেছিলে। কেন ডেকেছো সেটাবলো।
:- একটা গল্প শুনাব। সময় হবে?অর্থির করুণ মুখ দেখ হ্যাঁ বললাম।

:- একটা মেয়ের গল্প। মেয়েটা সবসময়ইহাসিখুশি থাকে। তাদের পরিবারযৌথ পরিবার। বাবা, মা, দাদা,
দাদী, চাচা, চাচী ও চাচাতোভাইবোন এই নিয়ে তাদের যৌথপরিবার। সবাই এক বাসাতেই থাকে।পুরো বাড়ি নেচে বেড়ায় মেয়েটা।সবাই খুব ভালবাসে। পরিবারের মধ্যেসেই একমাত্র মেয়ে। কিন্তুহাসিখুশিটা বেশি দিন টিকলো না।মেয়েটার চাচাতো ভাইয়ের কুনজরমেয়েটার উপর পরলো। ভাই শব্দটার অপব্যবহার করে সেই ছেলেটাদুষ্টামির আড়ালে সবসময় মেয়েটাকেস্পর্শ করে। কিন্তু মেয়েটা কখনো
খারাপ ভাবেনি। কারণ ছোটবেলাথেকে একসাথে বড় হওয়ায়ছোয়াছুয়িটা সাধারণ ব্যাপার। তবে
ছেলেটার মনে যে অদ্ভুত লোভজন্মেছে তা মেয়েটা ভাবতেওপারেনি। অতপর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত
দিনটা এলো। বাড়ির সবাই মেলায়গেছে। বাড়ি দাদা-দাদী (কানেশুনে না) ও মেয়েটা ছিল। অসুস্থথাকায় মেয়েটি যায়নি। অন্যদিকেচালাকি করে ছেলেটা বাড়িফিরে এলো। তারপর উচ্চস্বরে গানবাজানো শুরু করলো। কিছুক্ষণ পরমেয়েটার রুমে এলো। দুজনে কথাবলতে লাগলো। হঠাৎই ছেলেটাক্ষুধার্ত পশুর মত মেয়েটার উপরঝাপিয়ে পরলো। মেয়েটা কল্পনাওকরতে পারেনি এমন কিছু হতে পারে।মেয়েটা চিতকার শুরু করল কিন্তু লাভহল না। উচ্চস্বরে গানের ফলেমেয়েটার চিতকার চার দেয়ালেরমাঝেই বন্ধী হয়ে গেলো। ছেলেটানিজের ক্ষুধা নিবারণ করে পালিয়েগেলো। মেলা থেকে ফিরে এসেমেয়েটার মা মেয়েটাকে দেখেচিতকার দিয়ে উঠলো। মেয়ের এই দশাদেখে মেয়েটার বাবা তখনই হার্টস্ট্রোক করলেন। মেয়েটাকে কাপড়দিয়ে মেয়েটাকে ঢেকে দিল।তারপর বাবা মেয়েকে হাসপাতালেনেয়া হলো। বাবা মারা গেলেন।




চোখের কোনায় জমে থাকা পানিমুছে অর্থি আবার বলতে শুরু করলো
:- অন্যদিকে বাবার মৃত্যুর খবরেজর্জরিত মেয়েটা পরিবারেরসবাইকে সব বলে দিলো। পরিবারেরবড়রা ব্যাপারটা পুলিশকে জানালোনা। পরিবারের মধ্যেই রাখলো।পারিবারিক সালিশি হলো।ছেলেটাই মেয়েটাকে বিয়ে করবে।বাবার মৃত্যুর কারণে বিয়েটাপারিবারিক ভাবে হবে। চুপিচুপিযাকে বলা হয়। পরে ধুমধাম করে আয়োজন করা হবে। কিন্তু বিয়েরআগের দিনেই ছেলেটা পালিয়েগেলো। এবারও পুলিশকে কিছুজানানো হলো না। আবারপারিবারিক সালিশি হল। মেয়েটারভরণপোষণের দায়িত্ব তার চাচানিলো। তারপর মেয়েটাকে পড়ানোরনামে শহরে পাঠিয়ে দিলো।ভরণপোষণ তো দূরে থাক মেয়েটাকেমন আছে সেটাও জিজ্ঞেস করারচাচাটা একবার ফোনটাও করেনি।কিছুদিন পর খবর এলো মেয়েটার মাওমারা গেছে। মেয়েটা বাড়িগেলো। সেই ছেলেটাও ছিলো।কিন্তু কেউ কিছু বলল না যেন সবকিছুইস্বাভাবিক। মায়ের মৃত্যুর কষ্টেমেয়েটা কাতরাচ্ছে ঠিক তখনই একরাতে ছেলেটা আবার মেয়েটাররুমে ঢুকলো। মেয়েটা কোনোরকমপালিয়ে শহরে চলে এলো। শহরেওনানা রকম শারিরীক অত্যাচারেরমুখে পরেছে। কিন্তু মেয়েটা হারমানেনি। অবশেষে এক বান্ধবীরসহায়তায় মেয়েটা নারীআন্দোলনের একটা সংস্থার সাথে
যুক্ত হয়। এরপর দিনগুলো ধীরে ধীরেবদলাতে থাকে। পদে পদে যুদ্ধ কএবাঁচতে লাগলো মেয়েটা। এখন
মেয়েটার মুখে হাসির রেখা দেখাযায়। কিন্তু অন্তরটা আগুনে পোড়া।এবার তুমিই বল এমন মেয়ের মনে
ভালবাসা থাকতে পারে?

বুঝতে বাকি রইলো না এই গল্পটাঅর্থির। আমি স্তব্ধ হয়ে অর্থির দিকেতাকিয়ে রইলাম। মুখ দিয়ে একটা টু শব্দবের হলো না। আমার নীরবতা দেখে
অর্থি বলল:- এমন মেয়ের পিছনে সময় ব্যয় করাবোকামি। তাই বলছি সময় নষ্ট করোনা।অর্থি উঠে চলে গেলো। আমি কিছুবলতে পারলামনা। পরেরদিন বাবামাকে নিয়ে অর্থি যে নারীসংস্থায় কাজ করে সেখানে হাজিরহলাম। সাথে বাদ্যযন্ত্র। অর্থি আমাকেদেখে বেশ অবাক হলো। বিয়েটাসেখানেই করলাম। সেখানের একমহিলা অর্থি গার্ডিয়ানের ভূমিকানিলো। সাথে আমাকে হুমকি থ্রেটওদিলো। "যদি ধোকা দাও তবে
বাংলাদেশের যে জেলাতেওপালাও না কেন খুঁজে করে উপযুক্তশাস্তি দিব।

" ইয়াআআআআআআ লম্বাথ্রেটের পর বিয়েটা শেষ হলো। আমিআমার বাবাকে সব খুলেই বলেছি।
অর্থি জীবনী শুনে আম্মু রাজি হয়েগেলো। আর আম্মু হ্যাঁ মানেই আব্বু হ্যাঁ।তাদেরও প্রেমের বিয়ে তো তাই।

বাসরঘরে ঢুকলাম। অর্থি আমার পায়েপরে কাদতে লাগলো। সালাম করলেঅবাক হতাম না। কিন্তু কাদতে
লাগলো তাই অবাক হলাম। উঠালাম।চোখের জলগুলো মুছে দিয়ে বললাম
- চোখে জল কেন?
:- আমি ভাবিনি তুমি আমাকে এতোভালবাস।
- অনেক বেশি বাসি। যা দেখানোসম্ভব না।
:- এভাবে আজীবন বেসে যাবে তো?
- হ্যাঁ যাব।

অর্থি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।পাঞ্জাবির কাধেঁর দিকটা চোখেরপানিতে ভিজে যাচ্ছে। নীরবেকেদে যাচ্ছে অর্থি। হয়তো এটা সুখেরকান্না। তাই আর থামালাম না।কষ্টে জর্জরিত জীবনে হঠাত্ সুখে একটুহাওয়া বইলে আমাদের দুচোখ দিয়েসেই সুখের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অশ্রুঝরে।

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *