২০১৩
সাল, তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি। দেশের জন্য কিছু করতে হবে এই ভেবে একটা রাজনৈতিক দলে
যোগ দেই। ২০১৩ সালের কথা যাদের মনে আছে তারা সবাই জানে যে সেই বছর অনেক হরতাল সংঘটিত
হয়েছে। আমিও হরতালে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতাম। আমার মনে আছে একবার একটা গাড়ির সামনের আয়না
ভেঙ্গে সেলফি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলাম।
কিন্তু
কিছু দিন যাওয়ার পরে পুলিশ-প্রশাসন খুব বেপরোয়া হয়ে উঠে পড়ে। তারা হরতালে গুলি চালানো
শুরু করে। আমাদের আর কি করা যেহেতু সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ তাই হরতাল করতেই হবে।
তাই সিদ্ধান্ত হলো খুব ভোরে যখন রাস্তা ঘাট জনমানব শুন্য থাকে তখন হরতাল করব।
পরের
দিন ফজরের নামাযের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে আমরা হরতাল আরম্ভ করি রাস্তা মোরে আসার পর
আমাদের জেলা সভাপতি তার সমাপনি বক্তব্য আরম্ভ করে। বক্তৃতা লম্বা হতে থাকে আর রাস্তায়
দুয়েকটা গাড়ি, কয়েকটা রিক্সা আর একটা স্কুল ভ্যান এসে থামে। ভ্যানের ভিতর কতগুলো গার্লস
স্কুলের মেয়ে থাকে। তার মধ্যে একটা মেয়ের দিকে আমার চোখ আটকে যায়। মেয়েটা বসে বসে পড়ছে
আর কলম কামড়াচ্ছে আর একটু পর পর মাথা উঠিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছে। মেয়েটার চোখ দুটো
দারুন সুন্দর আমি কিসের সাথে ঐ চোখের তুলনা করব ভেবে পাইনা ওর চোখ কি ভ্রমরের মত কালো
নাকী দিঘির জলের মত কালো, নীল স্কুল ড্রেসে যেন নীল পরি।
জেলা
সভাপতির বক্তব্য শেষ হয়, আমরা রাস্তা ছেড়ে দেই, গাড়িগুলো চলে যায়, স্কুল ভ্যানটাও চলে
যায় সাথে নিয়ে যায় আমার প্রথম প্রেম।
সেই
দিন থেকে আমি রোজ ফজরের নামাজের আগে এসে সেই রাস্তার মোরে এসে দাঁড়িয়ে থাকি। উদ্দেশ্য
সেই মেয়েটাকে দেখা। এটা আমার দৈনিক রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। একদিন হোস্টেল সুপার টের পায়
আমি ফজরের নামায না পড়ে কোথায় যানি যাই। সেই দিন হোস্টেলে ফেরার পর হোস্টেল সুপার আমাকে
ডাক দেয়= মাহবুব এদিকে আস (হোস্টেল সুপারের হাতে আযরাইলের মত বিশাল বেত)
আমি=
জি স্যার...
হোস্টেল
সুপার= আজ ফজরের নামায পরছো?
আমি
= জি স্যার পরছি।
হোস্টেল
সুপার = বলত ইমাম সাহেব কোন কোন সূরা দিয়া নামায পরাইছে?
আমি=
সূরা ফিল , সূরা কুরাইশ
হোস্টেল
সুপার= মাশাল্লাহ
এর
পর হোস্টেল সুপার অন্য রুম থেকে দুইজন কে ডাক দিল, দিয়ে বলল, আমাকে টাইট করে ধরতে।
এর পর আমার পিছন দ্বারে পাচ মিনিট যাবত বেত্রাঘাত চলতেই থাকল । বাড়ি দিতে দিতে একেবারে
জবা ফুলের মত লাল টকটকা বানায়া দিছে। কোথাও না পারি বসতে না পারি কাউকে বলতে, কিন্তু
তারপরেও সেই মেয়েটাকে দেখার আগ্রহ একটুও কমেনি।
প্রতিদিন
ফজরের নামাযের আগে থেকে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি মেয়েটাকে এক পলক দেখার জন্য। যেদিন
দেখাপাই সেইদিন কেমন যানি রঙ্গিন রঙ্গিন লাগে আর যেদিন দেখাপাইনা মনে হয় দিনটা কেমন
অন্ধকার, মেঘাচ্ছন্ন, আকাশে সূর্য দেখা যায়না এমন। একদিন সাহস করে ঠিক করলাম আগামিকাল
গিয়ে মেয়েটাকে প্রপজ করব। সেইদিন আর সারা রাত ঘুম হয়নি। ভোর হতেই আমি বিছানা ছেড়ে সেই
রাস্তায় গিয়ে দাড়াই। কিন্তু আজকের দৃশ্য ভিন্ন, মেয়েটা আগে থেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে
সাথে আছে আরো দুইজন বান্ধবি। আমি ভাবলাম এইটাই মোক্ষম সুযোগ প্রস্তাব করার। পা বাড়াতেই
দেখি একটু দূর থেকে একটা ছেলে মোবাইল দিয়ে মেয়েটাকে ভিডিও করছে, সেই ছেলেটার সাথে আরো
কয়েকটা ছেলে, সবার গায়ে স্কুল ড্রেস। দূর থেকে আরেকটা ছেলেকে আসতে দেখা যাচ্ছে তার
গায়েও স্কুল ড্রেস হাতে কতগুলো গোলাপ। ছেলেটা কাছে এসেই মেয়েটার সামনে সিনেমার স্টাইলে
হাটু গেঁড়ে ফুলগুলো দিয়ে প্রপোজ করে, মেয়েটা খুশিতে কয়েকবার মাথা নাড়ায়। মেয়েটার হাসি
সেই মূহূর্তে দেখার মত ছিল। এখানে এর থেকে বেশি কিছু হবে তা আমার ভাবনাতেই আসে নাই।
কিন্তু আমার ভাবনায় কার আসে যায়, আমার ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে ছেলেটা দাঁড়িয়ে ইমরান হাশমির
মত ফ্রেঞ্চ কিস করতে থাকে মেয়েটা অতি উৎসাহে ছেলেটার মাথা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে। আর আশে
পাশের ছেলেমেয়েরা হাত তালি দিতে থাকে।
দুঃখ
ভারাক্রান্ত ভগ্ন হৃদয় নিয়ে আমি হোস্টেলে ফেরত যাই। হোস্টেলের মেইন গেটের সামনে হোস্টেল
সুপার দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই বলে উঠে= কি ব্যাপার মন্ত্রী সাহেব আপনি নাকি রাজনীতি
তে ঢুকছেন? তা দেশ টাকে কতটুকু উদ্ধার করলেন?
আমি=
এ জাতিকে উদ্ধার করা অসম্ভব, এ জাতির অধপতন নিশ্চিত, আমি এ জাতিকে বদদোয়া দেই।
হোস্টেল
সুপার= ভিতরে ঢুক, আমি আসতেছি।
আমি
মনে মনে বলতে থাকি = কি জন্য আসবেন তা তো জানি, আমার পিছন দ্বার পিটায় জবা ফুল বানায়া
দিবেন।
No comments:
Post a Comment
comment