ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Thursday, October 26, 2017

এটা একটা প্রেমের কাহিনী।

valobashar golpo, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প
হালিম= আচ্ছা নাভিদ ভাই, আমারে কেমন লাগতাছে??
নাভিদ= অনেক নাইছ লাগতাছে
হালিম= I KNOW,, সারা জামানা হালিম কা দিবানা।
নাভিদ= হুম, সবাই হালিম খেতে পছন্দ করে।
হালিম= আপনের ফ্যাশন সেন্স খুবি পোর।
কথাটা শুনার পর নাভিদ আরেকবার হালিমের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয়। একটা হলুদ প্যান্ট তার উপরে একটা সবুজ রঙের প্ল্যাস্টিকের বেল্ট, পায়ে এক জোড়া লাল কেডস, আর একটা ব্ল্যাক টিশার্ট তার উপরে বড় করে লেখা- I AM SINGLE. চোখে সানগ্লাস, কানে ব্লুটুথ। দেখতে একেবারে জমজ নাটকের মশারফ করিমের মত। ভালো করে দেখার পর নাভিদ বলে= রাইট, তোমার ফ্যাশন সেন্স অনেক হাই।
হালিম আর নাভিদ অনেকক্ষণ যাবত রাজউক এর ছিচল্লিশ নাম্বার ব্রিজে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে , উদ্দেশ্য খিলখেত যাওয়া।

কথা বলতে বলতে একটা অটো এসে পরে, অটোর ভিতরে আগে থেকেই তিন জন মেয়ে বসা। নাভিদের কোন ভাবান্তর হয় না কিন্তু হালিম মনে মনে খুব খুশি হয়, জার্নি টা খুব ভালো হবে।

অটো চলতে থাকে, হালিম মেয়েদের সাথে পিছনে বসে, নাভিদ ড্রাইভারের সাথে সামনে। মেয়ে তিনটা হাসাহাসি, খুনসুটি আর আজকের দিনে তাদের সাথে ঘটা ঘটনা গুলো নিয়ে আলাপ করতে থাকে। হালিম ওদের আলোচনা শুনেই বুঝতে পারে যে ওদের মধ্যে একজন আজ ফার্স্ট টাইম ডেটিং এ গিয়েছে, আর বাকি দুইজন পাহারাদার হিসেবে গেছে। যেহেতু ফার্স্ট টাইম তাই একা যেতে সাহস করে নাই।

মেয়ে তিনটা চরম হেংআউটে ব্যস্ত, কিন্তু হালিম লক্ষ করে একটা মেয়ের চোখে মুখে লজ্জার আভা দেখা যাচ্ছে। হালিম মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আর মেয়েটার চোখের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন মেয়েটার কথা বার্তা আর খুনসুটি দেখে হালিম খুবি ইম্প্রেসড। মেয়েটাও হালিমের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করতে থাকে। মেয়েটা একটু অকওয়ার্ড ফিল করে, ওর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চেঞ্জ হতে থাকে। চোখের মনি একটু বড় বড় দেখায়। বুকের সামনে কিছু চুল নিয়ে খেলতে থাকে, মাঝে মাঝে কানের উপরের চুল ও ঠিক করে। এটাই মোক্ষম সময় মেয়েটার সাথে ফ্লাট করার, কিন্তু নাভিদের কারণে আলাপ সামনে বারাতে পারছে না। ফ্লাট করা নাভিদ মোটেই পছন্দ করে না।

হঠাৎ অটো থেমে যায়, নাভিদ অটো থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে হালিম কে বলে= হালিম তোমার ভাড়া দেয়ার দরকার নাই, আমি দিয়ে দিয়েছি।
হালিম= আরে ভাই কি দরকার ছিল?
নাভিদ= কোন সমস্যা নাই।
হালিম= এইবার আপনে দিছেন, নেক্সট টাইম কিন্তু আমি দিমু। আপনে চাইলেও আপনেরে দিতে দিমু না।
নাভিদ= ওকে, সমস্যা নাই, তুমি দিও।
এই বলে নাভিদ রাস্তার পাশের একটা ভবনে প্রবেশ করে।
নাভিদের প্রস্থান এর পরেই ড্রাইভার হালিম কে বলে= ভাইজান আপনের লগের লোক তো হের ডাইরি থুইয়া গেসে গা।
হালিম= আমার কাছে দেন।
অটো আবার চলতে শুরু করে, তার সাথে শুরু হয় হালিমের মেয়ে পটানের মিশন
হালিম= এই তোমার মোবাইল নাম্বার টা দেও তো
কোন ইন্ট্রুডাকশন ছাড়া এইভাবে কথা বলতে দেখে মেয়ে গুলো একটু অবাক, তখন পাশ থেকে প্রথম বান্ধবি বলে উঠে= কেন? ওর নাম্বার আপনারে দিব কেন?
হালিম= আমি ওকে পছন্দ করি, ও আমাকে পছন্দ করে। আমাদের সামনে আলাপ বাড়ানো উচিৎ।
প্রথম বান্ধবি= খবরদার কোন অপরিচিত লোকরে নাম্বার দিবি না সানা।
হালিম= সানা, নাইস নেইম, নাইস টু মিট ইউ সানা। তোমার নাম টা যেমন সানা, দেখতেও তুমি সানার মত মিষ্টি। তোমার নামে মালায়লাম সিনেমাতে একটা নায়িকা আছে। তবে তোমার থেকে কম সুন্দর।
প্রথম বান্ধবি= মিথ্যা কথা সানা নামে কোন নায়িকা নাই।
হালিম= আছে, হের লিঙ্ক না দেখলে আমার রাইতে ঘূম আহে না, সরি, আই মিন হেই খুব ভালো অভিনয় জানে। ওকে এই সব বাদ দিয়া তোমার নাম্বার টা দেও
প্রথম বান্ধবি= সানা নাম্বার দিবি না।
হালিম= এইযে শোনো, আমি বাপের বড় ছেলে। আমার সাথে যদি প্রেম কর তাইলে বড় ছেলে নাটকের পুরা ফিলিংস পাইবা।
প্রথম বান্ধবি= এতো ফিলিংসের দরকার নাই। বড় ছেলেদের সাথে প্রেম করলে টিফিন বাটিতে কইরা খাবার আনতে হয়, দামি দামি গিফট দিতে হয়, আর বড় ছেলেরা পাঁচ টাকার বাদাম খাওয়াইয়া দায়িত্ব শেষ করে।
হালিম= পাঁচ টাকার না বিষ টাকার। তোমার নজর তো ছেলেদের পকেটের দিকে। কোমরের নিচ থেকে চোখ দুইটা বুকের দিকে তুল, দেখবা সেই বুকের ভিতরে আছে তিনশ ফুট হাইওয়ের সমান চওড়া একটা মন আর তার উপরে আছে দূর্বা ঘাসের মত বড় বড় পশম, মাথাটা রাখলেই কি আরাম। 😜😜
প্রথম বান্ধবি= আপনার মত বদমাইশ ছেলে জীবনে দেখি নাই।
হালিম= দেখবা কেমনে, একটু আগে চোখ বন্ধ কইরা ডেটিং মাইরা আইছ। 😜😜
সানা= আপনার নাম কি??
হালিম= তুমি কথা বলতে পারো সানা!! কি মিষ্টি তোমার ভয়েছ, একেবারে পাখির ছানার মত।
সানা= পাখির ছানা, মিষ্টির ছানা বাদ দিয়া আপনার নাম বলেন
হালিম= আমার নাম হালিম, নাম তো সুনাই হগা?
প্রথম বান্ধবি= হালিম!! নানা হালিম না মামা হালিম নাকি পচা হালিম। হাহাহা
সানা= শুনেন আপনাকে আমি আমার নাম্বার দিব না। আপনার মত ছেলেকে আমি ভালো করেই চিনি। আজকে মোবাইল নাম্বার নিবেন, কালকে ফেইসবুক আইডি নিবেন। পরশু দিন ফটো চাইবেন না দিলে অনুনয় বিনয় করবেন, বলবেন একবার দেখেই ডিলেট দিয়ে দিব। এইসব ধান্দা বাজি বাদ দেন। তার উপরে আপনার মত বেহায়া ছেলে আমার পছন্দ না।

এই কথা শুনার পর হালিমের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। ও ভেবেছিল সানা ওর স্মার্টনেস দেখেই পাগল হয়ে গেছে, কিন্তু সহজ সরল মিষ্টি মেয়েটা যে এতো তিতা তিতা কথা সুনিয়ে দিব ও ভাবতেই পারে নাই। হালিম চেয়েছিল আরও কিছুক্ষন ফ্লাট করবে, কিন্তু কথা গুলো শুনার পর হালিম ভাবছে, ভাগ্য ভালো আশেপাশে পরিচিত কেউ ছিলনা, তা নাহলে মান সম্মান আজকে প্লাস্টিক হয়ে যেত। কোনরকম অটো থেকেই নেমে মান সম্মান বাচিয়ে একটা দৌড় দিতে পারলেই চলে।

***
মেছে এসে দেখ মবিন নাভিদের বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে,
হালিম= কিরে মবিন, তুই এইখানে কি করছ??
মবিন= নাভিদ ভাইয়ের কাছে একটা কাজে আইছি। নাভিদ ভাই কই
হালিম = আইতে দেরি অইব।
মবিন= আইলে কইস আমি আইছিলাম।
হালিম= দোস্ত আজকে অটোর মধ্যে জোশ একটা মেয়ে দেখছি। মেয়েটা তো আমারে দেইখা পুরা ফিদা। আমার নাম্বার ও চাইছিল কিন্তু আমি দেই নাই।😮
মবিন= কেন? দেছ নাই কেন?
হালিম= আরে বেটা একটা বেক্তিত্ববোধ আছে না, একটা মেয়ে চাইল আর আমি দিয়া দিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি মেয়েটা আমার স্টাইল দেইখাই ফিদা অইয়া গেছে। 😂😂
মবিন= কস কি তুই? মেয়েরা আজকাল তোর মত জোকার দেখে ফিদা হয়ে যায়। মেয়েদের রুচি দিন দিন এতো খারাপ হইতাছে কেন। _____ওকে বাদ দে, নাভিদ ভাই আইলে কবি আমি আইছিলাম
হালিম= বাঁশ টা কারে মারলি আমারে না মেয়েটারে?
মবিন= তুই আমার দোস্ত, আমি কি তরে বাঁশ দিতে পারি? বাঁশ টা দিছি মেয়েটারে, যে হের রুচি এতো খারাপ কেন? _____ ওকে গেলাম, আইলে কইছ। বলতে বলতে দরজা টান দিয়ে বের হয়ে যায় মবিন।
হালিম= বুঝতাছিনা, আজকে সবাই আমারে বাঁশ মারতাছে কেন। বুজ্জি আমারে আরও স্মার্ট অইতে অইব।

হঠাৎ হালিমের মনে পরে নাভিদের ডাইরির কথা। নাভিদের ডাইরি ওর কাছে। কিছু কিছু মানুষ তাদের আবেগ, উচ্ছাস, অনুভূতি, ভালোলাগা, ভালোবাসা, আর মনের যত পাগলামি সব লুকিয়ে রাখে ডাইরিতে। দেখা যাক নাভিদের মনে কি আছে, সবার সামনে তো ভেম্পায়ার ডেমন সেল্ভেটর এর মত পার্ট নেয়, দেখায় তার মনে কোন আবেগ নাই।
ডাইরিটা খুলতে কন্টাক্ট পেইজের শেষে একেবারে প্রথম পাতায় বড় করে রঙিন কলম দিয়ে একটা হৃদয় আকা, তার ভিতরে বড় করে লেখা রাঁধা, কিন্তু ডায়রিটা পুরাতন হওয়ার কারণে রঙটা পুরা পেইজে ছড়িয়ে গেছে।
হালিম ভাবছে রাঁধা টা কে?
হিন্দুদের একজন দেবী
হিন্দুদের কৃষ্ণ দেবের প্রেমিকা
নাকি অন্য কেও? ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ করে হালিম বলে উঠে= ও মাই গড!! এটা একটা প্রেমের কাহিনী।
এটা একটা প্রেমের কাহিনী – ২য় পর্ব

হাসানুর রহমান

1 comment:

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *