ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Wednesday, May 2, 2018

পাত্রী দেখা

ভালোবাসার গল্প, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, valobashar golpo, premer golpo, love story

-বাবা এই মেয়ের কি দোষ ছিল!
.
গিয়েছিলাম পাত্রী দেখতে! সেখান থেকে কেবল মাত্র বাসায় এসে পৌঁছালাম। সোফায় বসতে না বসতে মা কথাটা বলে ওঠল। তার কথায় হতাশার ভাবটা স্পষ্ট টের পাচ্ছি! যেন এই বলতে চাচ্ছে আমি মানা না করলেও পারতাম!
.
মেয়ে বলতে মাশাল্লাহ্! দেখতে শুনতে ভালই ছিল। এবার এইচ এস সি পরীক্ষা দিচ্ছে। মেয়ের মাঝে এমন কোন দোষ নেই যে যাতে না করে বসব। এ বিষয়টি নিয়ে মা সোফায় বসতে বসতে কথাটি বলল!
.
কিছু বলতেছি না আমি। চুপ করে আছি। রাস্তায় মা জিজ্ঞেস করেছিল পছন্দ হয়েছে কি না! আমি সোজা কথায় বলে দিয়েছি "না"। এর পর মা আর কোন কথা বলে নি। পুরু রাস্তা চুপ চাপ। কিন্তু বাসায় এসে মা ওপরের কথাটি বলল। এখন আমার দিকে তাকিয়ে আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে আমি কি বলি!
.
কিন্তু আমি পরেছি সমস্যায়! বিরাট সমস্যা! এর আগের সব গুলোর কোন না কোন ভাবে কাটিয়ে নিয়েছি। সব অজুহাত তো দেখানো শেষ। কিন্তু এবার নতুন করে কি বলব? সেইটাও তো খুজে পাচ্ছি না!
.
আরও কিছুক্ষণ ভাবার পর মায়ের কথায় সাড়া দিলাম_
.
-দেখ মা, মেয়ের মাঝে কোন সমস্যাই নেই! আমি সত্যি বলতেছি কোন সমস্যাই নেই!
-তাহলে বিয়ে করে নে না একে!
-আসলে মা ছোট একটা সমস্যা আছে!
-আবারও বানিয়ে কিছু বলবি তাই না!
.
মা আমার মতলব বুঝে নিয়েছে যে আমি কিছু বানিয়ে বলব এখন। হুম, ভাবনাটা যে মিথ্যা তা বলব না। কিন্তু বানিয়ে বলতেই হবে!
.
-আসলে মা মেয়েটা একটু বেশিই চিকন!
-চিকন!
.
মা যেন আকাশ থেকে পরল। যেন কথাটা আমার বলাটা মহা পাপ যার কারনে এত বিষ্মিত হয়ে ওঠল! আর হবেই না কেন! এর আগের বারের মেয়ে দেখার সময় যে খুত ধরেছি সে অনুযায়ী তো বিষ্মিত হওয়ারই কথা। হওয়াটা স্বাভাবিক।
.
-এর আগের মেয়ের বেলায় বললি যে মেয়ে মোটা! বিয়ে করা যাবে না! বললি যে বিয়ের পর আরও মোটা হবে। তাই তোর জন্য চিকন মেয়ে দেখালাম আর এখন বলছিস মেয়ে চিকন! আসলে তুই চাইছিসটা কি?
.
মায়ের কথা সম্পন্ন ঠিক। এর আগের মেয়েকে মোটা বলে পার করে দিয়েছি। যদিও মেয়েটি কোন দিক দিয়েই মোটা বলা যাবে না! কিন্তু মেয়ে তো দেখা বন্ধ করাতে হবে! তাই বলে দিয়েছিলাম চিকন মেয়ে দেখ। বলেছিলাম কাল আর আজই তার মেয়ে খুজ করে দেখাতে নিয়ে গেছে! মাকে নিয়ে আর পারা যায় না!
.
কিন্তু এ মেয়ের কোন দোষই নেই। কিন্তু মাকে তো বুঝাতে হবে! তাই একটাই পথ খুলা আছে আমার জন্য! আর সেইটা হচ্ছে মাকে আবুল তাবুল লজিক দেখিয়ে এ মেয়েকেও ক্যান্সেল করতে হবে!
.
-আসলে মা একটা জিনিস দেখ...
-কি দেখব বল আমায়? নতুন করে কি দেখাতে চাইছিস?
.
আমার কথাটিও শেষ হতে দিল না তার আগেই জুর দিয়ে কথাটি বলল। যেন তার কাছে লজিকের পেছনে লজিক নিয়ে আগে থেকেই রেডি হয়ে আছে! আর আমায় তা খন্ডন করতে হবে। এ যেন এক অন্যরকম যুদ্ধ ক্ষেত্র!
.
-আমায় আগে বলতে তো দাও না কি!
-হুম, বল। কিন্তু মান সম্মত কথা বলবি!
-মেয়েটাকে কেন চিকন বলেছি জানো!
-কেন?
-কয়েকটা জিনিস খেয়াল কর! আমি সেই ছোট বেলা থেকেই কেমন চিকন চিকনই রয়ে গেছি। স্বাস্থের কোন উন্নতি দেখছ?
-তো কি হয়েছে! তুই খাস না তাই মোটাও হোস না। কিন্তু এখানে পয়েন্টের বিষয় বল!
-এই হল মা জাতির সমস্যা, সন্তান যতই গিলুক না কেন সেখানে মা বলেই যাবে আরেকটু নে বাবা!
-দেখ হাবিযাবি বলে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না একদম!
-কই কথা ঘুরাচ্ছি? আমি তো তোমায় বোঝানোর চেষ্টা করতেছি যে 'আমি যদি আজ এই মেয়েকে বিয়ে করি তাহলে কাল আমার বাচ্চারা চিকন হবে। যেখানে আমিও চিকন আর মেয়েও চিকন! আর আমাদের মিলিয়ে বাচ্চা হবে নল খাগড়া! একবার ভেবে দেখ বিষয়টা! তুমি কি চাও এমনটা হোওক?'
.
মা যেন কিছুটা চুপ হল। কাজ কতটুকু হয়েছে জানি না। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধ অস্রটা আমার হাতে। কিন্তু হাতে রাখলে কাজ হবে না। যুদ্ধটা জয় করতে হবে।
.
-দেখ মা, এর আগের মেয়ে গুলোকে এমনিতেই বাদ দেই নি! তাদের পেছনে যথেষ্ট কারন আছে। যেমন ধর মিম নামের মেয়ের কথা! ও লম্বায় প্রায় আমার সমান, যেখানে পাত্র নিয়ে সমস্যা যে আমাদের মেয়ে হলে কই পাব!
-তাহলে তুই কেমন মেয়ে চাইছিস এক্সাকলি তো বলবি আমায়!
-বলাটা কষ্টকর হলেও তোমায় বলতেই হবে এবার কেমন মেয়ে চলবে!
.
এবার মা কে বেগে না ফেললেই নয়! যেদিন থেকে চাকরি জয়েন করলাম বছরও ঘুরতে দিল না সেখানে মেয়ে দেখা শুরু! তখন থেকেই টর্চার আর টর্চার! কেন বুঝে না আমি বিয়ে করব না! আমার বিয়ের বয়স হয় নি তো এখনও!
.
-হুমম... মেয়েটা দেখতে যেমনই হোওক কালো, স্যামলা বা ফর্সা এতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু তার মুখে যেন এক অন্যরকম মায়া লেগে থাকে! যেন সে বলে দেওয়ার আগেই তার মুখ দেখে বুঝে নেওয়া যায় যে সে কি বলতে চায়! মেয়েটা হবে ঠিক এরকম, যেন কাজল দেয়া চোখে নীল শারিতে হাতে কাচের চুরি দেখে যেন মন আপ্লুত হয়ে ওঠে! এখানে দেখার বিষয় না যে মেয়েটার গঠন কেমন! হবে ঠিক এরকম, তার কথার মাঝে থাকবে শ্রদ্ধা আর থাকবে এক মাদকতা যেন আমি বার বার শুনতে চাই! তার মনে সত দ্বিধা থাকা সত্যেও সে হাসলে যেন মনে হয় তা অতি প্রাকৃত! সংসারে যত কষ্টের দিনই আসুক না কেন, সে যেন সব কষ্ট ভুলে হাসি মুখে একবার বলবে আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না! আমি ঠিক এমন একটি মেয়ে চাই!
.
কথা গুলো যে কিভাবে বললাম তা নিজেও জানি না। কেবল বলতে যে পেরেছি এটাই মনে হচ্ছে আমি স্বার্থক হব জীবনে এমন মেয়ে পেয়ে!
.
-পারবে এমন একটা মেয়ে এনে দিতে? যদি পার তাহলে আমি এখনি প্রস্তুত বিয়ে করব!
.
আমি এবার নিশ্চিন্ত যে মা কোন দিন এরকম মেয়ে পাবেও না আর নতুন করে পাত্রীও দেখবে না! তার ঘটকালির চ্যাপ্টার এখানেই ক্লোজ!
.
মা কিছুক্ষণ চুপ করে আছে। আর আমি স্বস্থির নিশ্বাস ফেলছি যে এবার আপদ চলে গেল। আহ কি শান্তি!
.
এর মধ্যেই মা হটাৎ করে বলে ওঠল_
-তো... মেয়েটার নাম কি?
.
আমি পুরু হতবাক! মা বলছে কি! আমি জীবনেও আশা করিনি যে মা এমন কথা বলবে! কখনই না!
.
-দেখ বাবা তুই যতই বড় হোস না কেন আমি তোর মা আর তুই আমার সন্তান। আর আমি মা হয়ে যদি তোর মনের কথা না বুঝতে পারি তাহলে আমি কেমন মা হলাম রে!
.
তার মানে মা সব বুঝে গেছে! আমি কেন আজ পর্যন্ত এত তাল বাহানা করে বিয়ে আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি মা তা সব জানে! তাহলে বলল না কেন এতদিন? তাহলে তো আমার রাস্তাই আরও ক্লিয়ার হয়ে যেত। মা কে অনুর কথা আরও অনেক আগেই বলতে পারতাম! কেন বলল না? কেন?
.
-আসলে আমার ইচ্চা ছিল আমি আর সবার মত আমার ছেলের জন্য মেয়ে দেখব। আর সেই ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্যই তোকে কিছু বলিনি!
.
মা এত চালাক! আমায় কিছু না বলেই নিজের কাজ ঠিকই হাসিল করে নিল আর আমি জানতেই পারলাম না! এর জন্যই মনে হয় মা মাই হয়! যার কোন বিকল্প থাকে না।
.
-তো মেয়ের ডিটেইলসটা দে কথা টথা বলতে হবে তো না কি!
.
সব কিছুই কেমন যেন সহজ হয়ে গেল। যার কথা বলতে আমার বুক এত পরিমাণে কাপত! অনু এত বার বলত যে তোমার আব্বু-আম্মুকে বলবা না কি আমি তোমার বাসায় গিয়ে ওঠে বসব! তবুও বলার সে সাহসটুকু পেতাম না। আর মা তার এক সহজ সমাধান দিয়ে দিল! আই লাভ ইউ মা।
.
.
পরিশিষ্টঃ এরপর বিয়েটা চট জলদি হয়ে গেল। আর এখন বাসর ঘরের সামনে। অনু বলত "বিয়েটা শুধু হতে দাও একবার তোমায় দেখিয়ে দেব তখন কত ধানে কত চাল"। আজ বিয়েটাও হয়ে গেছে। আর অনু যা বলে তা করে দেখায়! এখন চিন্তায় আছি কি যে আছে কপালে তা আল্লাহ্ মাবুদই জানে! হে আল্লাহ্ রক্ষা করো আমায়!
.
এরপর বিসমিল্লাহ্ বলে ভেতরে পা বাড়ালাম। জানি না এরপর কি হতে যাচ্ছে আমার সাথে! দোয়া করবেন সবাই যেন ভাল কিছুই হয়! খোদা হাফেজ।
.
.
লেখক Shaion Khan (কালা বাবু)

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *