আমি আপনাকে ভাইয়া ডাকতে পারবো না, আমি আপনাকে স্যার বলে ডাকবো ৷" এই বলে নেহা চুপ হয়ে গেল ৷ আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না ৷ ভাইয়া ডাকতে সমস্যা কোথায় বুঝতে পারলাম না ৷ আমি তো তার ভাইয়ের মতোই ৷ স্যার কেন বলতে হবে, আমি তো প্রফেশোনাল শিক্ষক না ৷কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি নেহাকে বললাম, ঠিক আছে তোমার যেটা ভাল লাগে সেটা বলেই ডাকো ৷
,
এখানে এসেছি তিন মাস হয়ে গেছে ৷ ছয় তলা বিল্ডিং এর তিন তালায় আমরা থাকি ৷ বাবা অযথা আগের বাসাটা পাল্টালো ৷ ওখান থেকে নাকি অফিস দূরে হয় ৷ আমি অর্নাস তৃতীয় বর্ষে পড়ি ৷ এখানে আসার পর কেমন করে যেন আমার বাবা মা নেহাদের পরিবারের সাথে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় ৷ আমার তো এখন মনে হয় আমাদের পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই আত্বীয়তা ছিল ৷ নেহার বাবা মা এই ফ্ল্যাটের দুই তলায় থাকে ৷ নেহা আমাদের বাসায় অনেকবার এসেছে ৷ অনেক বার বলতে দিনে দুই একবার আসবেই ৷ নেহা এবার ক্লাস টেনে পড়ে ৷ নেহার সাথে আমার তেমনভাবে কোনো কথা কখনো হয়নি কিন্তু আমার আম্মুর সাথে সব সময় বক বক করে ৷ এতো কি গল্প করে আমি বুঝি না ৷ আজকাল আবার মা নেহাকে রান্না করা শিখাচ্ছে ৷ কাল রাতে খাবারের সময় মা বললো,"নিশো কাল থেকে নেহাকে একটু পড়াতে সময় দিস ৷ মেয়েটা পড়াতে মনোযোগী না ৷ বাসায় পড়ে না, স্কুল কোচিং এ যা পড়ে ওইটুকুই ৷ বাকি সময় এটা ওটা করে নষ্ট করে ৷ ওর মার সাথে আজ কথা বললাম তখন বললো বাসায় কম পড়ে ৷ আমি ভাবলাম তুই বসেই থাকিস ওকে একটু সময় দিস ৷ এবছর ফাইনাল পরিক্ষা না পড়লে কেমন করে চলবে ৷ নেহার মাকে বলেছি নেহাকে কাল থেকে পাঠিয়ে দিতে ৷"
মার কথা শুনে একটু বিরক্ত লাগলো ৷ আমি নিজেই পড়তে বসি না তার উপর আবার অন্যকে পড়াতে হবে ৷ খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার ৷ কিন্তু কিছু করার নেই, মাকে না করতেও পারবো না ৷ পরেরদিন বিকেল বেলা নেহা পড়তে এলো ৷ পড়াতে বসার একটু পরেই নেহা বলল, “আমি আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকতে পারবো না, আমি স্যার বলে ডাকবো"৷
,
কিছুদিন পড়ানোর পর বুঝলাম সে ছাত্রী ভাল, শুধু ভাল না একটু বেশিই ভাল ৷ কোনো কিছু বোঝাতে হয় না, সব কিছুই পারে ৷ কোনো কিছু করতে বললে সাথে সাথেই করে দেয়, আমাকে কিছু বোঝাতেও হয় না ৷ এজন্যই হয়তো বাসায় তেমন পড়ে না ৷ ঠিক করলাম নেহাকে আর পড়াবো না ৷ মাকে বলতে হবে ৷ কিন্তু মা কি বলবে সেটাই চিন্তার বিষয় ৷ ঠিক করে রাখলাম আর কিছুদিন পড়ানোর পর নেহাকে আসতে মানা করে দেব ৷
/
নেহাকে পড়ানোর পর সন্ধ্যার আগে বাইরে আসলাম ৷ রাস্তায় আনমনে হাটতে হাটতে ঠিক করলাম আদনান ভাইয়ের কাছে যাব ৷ আমাদের আগে যেখানে বাসা ছিল আদনান ভাই ওখানেই থাকে ৷ তখন আমাদের বাসা থেকে আদনান ভাইয়ের কাছে যেতে পাচ ছয় মিনিট সময় লাগত ৷ আর এ বাসা থেকে রিক্সা করে যেতে নাহলেও বিশ মিনিট সময় লাগবে ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে অনেকদিন ধরে দেখা করা হয়নি ৷ আদনান ভাই আমাদের ভার্সিটিতে পড়তো ৷ আমি যখন প্রথম বর্ষে ছিলাম তখন আদনান ভাই ফাইনাল বর্ষে ছিল ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়টা খুব সাধারণ ভাবে হয় ৷ ক্যাম্পাসে একদিন বসে ছিলাম ৷ একটু পর আদনান ভাই পাশে এসে বসলো ৷ আদনান ভাইকে আমি আগে থেকেই এমনি চিনতাম ৷ কিন্তু ওই দিন কথা বলার পর আস্তে আস্তে একটা ভাল সর্ম্পক তৈরি হয়ে যায় ৷ চিলেকোঠার দরজায় নক করতেছি কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছি না ৷ ঘুমাচ্ছে নাকি? এ অসময়ে তো ঘুমানোর কথা না ৷ অফিস থেকে এসে ঘুমিয়েছে মনে হচ্ছে ৷ আদনান ভাই এ বাসার চিলেকোঠায় থাকে ৷ আগে অবশ্য মেসে থাকতো ৷ চাকরিতে জয়েন করার পর এখানে উঠেছে ৷ আমি এখন ছাদে বসে আছি ৷ ভাবতেছি চলে যাব, অন্যদিন আবার আসবো ৷ নামার জন্য নিচে যেতেই দেখলাম আদনান ভাই উপরে উঠছে ৷ হাতে বাজারের ব্যাগ, বাজারে গিয়েছিল ৷ তাহলে ঘরে কে? দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো ৷ আদনান ভাই আমার সামনে দিয়ে উপরে উঠে গেল ৷ আমিও সাথে সাথে গেলাম ৷ ছাদে উঠে দেখলাম আদনান ভাই বসে আছে ৷ আমি বললাম --
.
--ঘরে ঢুকবেন না?
.
--তুমি দরজায় শব্দ করার পর দরজা কেউ খুলে দিয়েছিল?
.
--না ৷
.
--আমি ডাকলেও খুলবে না ৷
.
--আমি ভাবলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন তাই চলে যাচ্ছি কিন্তু আপনি তো বাইরে ৷ তাহলে ভেতরে কে?
.
--আমার ছোটবেলার বন্ধু ৷ যেহেতু তুমি ডাকার পরও দরজা খুলে দেয়নি মনে হয় ঘুম আসছে ৷গ্রাম থেকে এসেছে বিকেলে ৷ ঘুম এলে তাকে ডেকে কোনো লাভ নেই ৷ ঘুমানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে উঠবে না ৷
.
--যাদের ঘুম বেশি তাদেরই ভাল ৷ ঘুমিয়ে থাকা অবস্হায় কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না ৷
.
--নিশো,কেমন আছো? অনেক দিন পর এলে ৷ বাসা বদলানোর পর আর আসো নি ৷
.
--ইচ্ছা করলেই আসতে পারতাম কিন্তু আসিনি ৷ আপনি তো আমার কথা শোনেন না এসে কি করবো?
.
--বিয়ে এবার করতে হবে নিশো ৷ বাবা মাও ফোন করলে এই কথায় সব সময় বলে ৷ মা একটা মেয়ে দেখে রেখেছে ৷ ঠিক করেছি সে যেমনই হোক তাকেই বিয়ে করবো ৷ মা খুশি হলে আমার আর কিছু লাগবে না ৷ কিছুদিনপর গ্রামে যাব সব কিছু ঠিকঠাক করতে ৷
.
--অবশেষে তাহলে বিয়েতে রাজি হলেন ৷
.
--নিশো সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে হয় ৷ যে সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে সেই সুখে থাকে ৷ আমাকেও অনেক আগে পরিবর্তন হওয়া লাগতো তাহলে এতো কষ্ট পেতে হতো না ৷
.
--ওসব নিয়ে আর ভাবেন না ৷ সবার জীবনেই কিছু খারাপ পরিচ্ছেদ থাকে ৷
.
কথা বলতে বলতে নয়টা বেজে গেল ৷ আদনান ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় হাটছি ৷ আসলেই সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করতে হয় ৷ আদনান ভাইয়ের একটা সর্ম্পক ছিল ৷ তখন আদনান ভাই ফাইনাল বর্ষে ছিল ৷ আরমিন আপুর বাসায় অনেক আগে থেকেই বিয়ের কথা চলছিলো ৷ আদনান ভাইকে অনেক বার বলেছিল এ কথা কিন্তু আদনান ভাইয়ের করার কিছু ছিল না ৷ বেকার ছেলে হয়ে কিভাবে একটা মেয়েকে তার জীবনের সাথে জড়াবে ৷ আরমিন আপু নিজেই তার পরিবারে আদনান ভাইয়ের কথা বলেছিল কিন্তু তারা রাজি হয়নি ৷ তারা বেকার কোনো ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দেবে না ৷ আরমিন আপুর বিয়ের পর আদনান ভাই অনেক ভেঙ্গে পরেছিল ৷ ফাইনাল পরিক্ষায় রেজাল্ট খারাপ না করলেও অন্য সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল ৷ তারপর আর কখনো অন্যকোনো রিলেশনে জড়ায়নি ৷ আমি অনেকবার বলেছি বিয়েটা করেন, বয়স তো কমছে না ৷ জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না ৷ এসব নিয়ে কিছু বললে আদনান ভাই বলে,"অন্যকে উপদেশ সবাই দিতে পারে, কিন্তু নিজে তা বুঝে না "৷ তখন আমি আর কি বলবো বুঝতে পারি না ৷ সত্যই অন্যকে সবাই বুঝাতে পারে,কিন্তু নিজে কেউ বাস্তবতা বুঝতে চায় না ৷
বাসায় পৌছে দেখি রাত দশটা বেজে গেছে ৷ আদনান ভাইয়ের ওখান থেকে খেয়ে এসেছি ৷ তাই মাকে বললাম আর খাব না ৷ রুমে ঢুকে শুয়ে পরলাম ৷ আমরা মানুষরা আসলে কেউ সুখি না ৷ সবার জীবনের গল্পেই দুঃখের ছোয়া আছে ৷ আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, মানুষ হয়ে জম্ম নেওয়া সুখের কোনো বিষয় না ৷ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসার কোনো চিহ্ন নেই ৷ যখন ঘুমাতে চাই তখন ঘুম পায় না,যখন চাই না তখনই ঘুম এসে জমা হয় চোখে ৷ হাতে ফোন নিয়ে "তপুর-মন ভাল নেই" গানটা শুনছি ৷ ভাবলাম ফেসবুক থেকে একটু ঘুরে আসি ৷ ফেসবুকে আজকাল তেমন সময় দেওয়া হয় না ৷ একটা সময় ছিল যখন সারা দিনরাত ফেবুতে পরে থাকতাম ৷ এখন ফেসবুক আমাকে টানে না তাই আমিও কাছে যাই না ৷ ফেসবুকে ঢুকে দেখি অনেকগুলো মেসেজ এসেছে ৷ সবগুলো বন্ধুরা দিয়েছে ৷ বন্ধুরা মাঝে মাঝেই বলে,“কিরে নিশো তুই আর ফেসবুকে তেমন আসিস না কেন? আগেতো সারাদিন রাত ফেবুতে থাকতি ৷ তুই কি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতি যা আমরা জানি না, পরে ছ্যাকা খেয়েছিস এজন্য আর আসিস না?" আমি কি বলবো বুঝতে পারি না ৷ মাঝে মাঝে চুপ থাকি আবার মাঝে মাঝে কিছু একটা বলে কথা ঘুরিয়ে ফেলি ৷ বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখলাম নেহা মেসেজ দিয়েছে ৷ লিখেছে-"স্যার কি করেন"৷ এই মেয়ের সমস্যা কি আমি বুঝতে পারি না ৷ কয়েকদিন আগে রুমে শুয়েছিলাম ৷ হঠাৎ দরজা থেকে নেহা বললো, স্যার আপনাকে চাচী খেতে যেতে বললো ৷ পড়ানোর সময় স্যার বলে ঠিক আছে ৷ এমনি সময়ে কেন স্যার বলতে হবে ৷ আমি কি ওদের স্কুলের মাস্টার? যদিও আমার সাথে কম কথা বলে কিন্তু যা বলে সেটাই আমার বিরক্তি ধরিয়ে দেয় ৷ আমি অচেনা আইডি তেমন একটা অ্যাকচেপ্ট করিনা ৷ নেহাকে পড়ানোর কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন নেহা বললো -"আমি আপনাকে কতদিন আগে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি কিন্তু আপনি ঝুলিয়ে রেখেছেন ৷ ছবি দেওয়া নাই কিন্তু নাম দেওয়া আছে তাও চিনেন না? অ্যাকচেপ্ট করবেন,আমার পুরো নামে খোলা আছে-নাবিয়ান রহমান নেহা" ৷ আমি তখন কিছু বলিনি ৷ সেদিন রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখি নাবিয়ান রহমান নেহা নামের একটা আইডি আমার লিস্টে ৷ সত্যি আমি জানতাম না নেহার পুরো নাম ৷ জানলে হয়তো অ্যাকচেপ্ট করতাম বা করতাম না ৷ যেহেতু নিজে থেকে বললো তাই আর ঝুলিয়ে রাখলাম না ৷ অ্যাকচেপ্ট করার একটু পরেই দেখি মেসেজ দিয়েছে "ধন্যবাদ" ৷ আমি কিছু বলি নি ৷ আজও কিছু বললাম না ৷ মেসেজ সিন করলাম না, ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসলাম ৷ কানে হেডফোন, হেডফোনে গান চলছে-
.
স্বপ্ন দেখার খোলা চোখে, হয়না সাহস আর মনে
করি না কিছু পাওয়ার আশা
ব্যর্থ আমার প্রার্থনারা ৷
,
এখানে এসেছি তিন মাস হয়ে গেছে ৷ ছয় তলা বিল্ডিং এর তিন তালায় আমরা থাকি ৷ বাবা অযথা আগের বাসাটা পাল্টালো ৷ ওখান থেকে নাকি অফিস দূরে হয় ৷ আমি অর্নাস তৃতীয় বর্ষে পড়ি ৷ এখানে আসার পর কেমন করে যেন আমার বাবা মা নেহাদের পরিবারের সাথে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় ৷ আমার তো এখন মনে হয় আমাদের পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই আত্বীয়তা ছিল ৷ নেহার বাবা মা এই ফ্ল্যাটের দুই তলায় থাকে ৷ নেহা আমাদের বাসায় অনেকবার এসেছে ৷ অনেক বার বলতে দিনে দুই একবার আসবেই ৷ নেহা এবার ক্লাস টেনে পড়ে ৷ নেহার সাথে আমার তেমনভাবে কোনো কথা কখনো হয়নি কিন্তু আমার আম্মুর সাথে সব সময় বক বক করে ৷ এতো কি গল্প করে আমি বুঝি না ৷ আজকাল আবার মা নেহাকে রান্না করা শিখাচ্ছে ৷ কাল রাতে খাবারের সময় মা বললো,"নিশো কাল থেকে নেহাকে একটু পড়াতে সময় দিস ৷ মেয়েটা পড়াতে মনোযোগী না ৷ বাসায় পড়ে না, স্কুল কোচিং এ যা পড়ে ওইটুকুই ৷ বাকি সময় এটা ওটা করে নষ্ট করে ৷ ওর মার সাথে আজ কথা বললাম তখন বললো বাসায় কম পড়ে ৷ আমি ভাবলাম তুই বসেই থাকিস ওকে একটু সময় দিস ৷ এবছর ফাইনাল পরিক্ষা না পড়লে কেমন করে চলবে ৷ নেহার মাকে বলেছি নেহাকে কাল থেকে পাঠিয়ে দিতে ৷"
মার কথা শুনে একটু বিরক্ত লাগলো ৷ আমি নিজেই পড়তে বসি না তার উপর আবার অন্যকে পড়াতে হবে ৷ খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার ৷ কিন্তু কিছু করার নেই, মাকে না করতেও পারবো না ৷ পরেরদিন বিকেল বেলা নেহা পড়তে এলো ৷ পড়াতে বসার একটু পরেই নেহা বলল, “আমি আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকতে পারবো না, আমি স্যার বলে ডাকবো"৷
,
কিছুদিন পড়ানোর পর বুঝলাম সে ছাত্রী ভাল, শুধু ভাল না একটু বেশিই ভাল ৷ কোনো কিছু বোঝাতে হয় না, সব কিছুই পারে ৷ কোনো কিছু করতে বললে সাথে সাথেই করে দেয়, আমাকে কিছু বোঝাতেও হয় না ৷ এজন্যই হয়তো বাসায় তেমন পড়ে না ৷ ঠিক করলাম নেহাকে আর পড়াবো না ৷ মাকে বলতে হবে ৷ কিন্তু মা কি বলবে সেটাই চিন্তার বিষয় ৷ ঠিক করে রাখলাম আর কিছুদিন পড়ানোর পর নেহাকে আসতে মানা করে দেব ৷
/
নেহাকে পড়ানোর পর সন্ধ্যার আগে বাইরে আসলাম ৷ রাস্তায় আনমনে হাটতে হাটতে ঠিক করলাম আদনান ভাইয়ের কাছে যাব ৷ আমাদের আগে যেখানে বাসা ছিল আদনান ভাই ওখানেই থাকে ৷ তখন আমাদের বাসা থেকে আদনান ভাইয়ের কাছে যেতে পাচ ছয় মিনিট সময় লাগত ৷ আর এ বাসা থেকে রিক্সা করে যেতে নাহলেও বিশ মিনিট সময় লাগবে ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে অনেকদিন ধরে দেখা করা হয়নি ৷ আদনান ভাই আমাদের ভার্সিটিতে পড়তো ৷ আমি যখন প্রথম বর্ষে ছিলাম তখন আদনান ভাই ফাইনাল বর্ষে ছিল ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়টা খুব সাধারণ ভাবে হয় ৷ ক্যাম্পাসে একদিন বসে ছিলাম ৷ একটু পর আদনান ভাই পাশে এসে বসলো ৷ আদনান ভাইকে আমি আগে থেকেই এমনি চিনতাম ৷ কিন্তু ওই দিন কথা বলার পর আস্তে আস্তে একটা ভাল সর্ম্পক তৈরি হয়ে যায় ৷ চিলেকোঠার দরজায় নক করতেছি কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছি না ৷ ঘুমাচ্ছে নাকি? এ অসময়ে তো ঘুমানোর কথা না ৷ অফিস থেকে এসে ঘুমিয়েছে মনে হচ্ছে ৷ আদনান ভাই এ বাসার চিলেকোঠায় থাকে ৷ আগে অবশ্য মেসে থাকতো ৷ চাকরিতে জয়েন করার পর এখানে উঠেছে ৷ আমি এখন ছাদে বসে আছি ৷ ভাবতেছি চলে যাব, অন্যদিন আবার আসবো ৷ নামার জন্য নিচে যেতেই দেখলাম আদনান ভাই উপরে উঠছে ৷ হাতে বাজারের ব্যাগ, বাজারে গিয়েছিল ৷ তাহলে ঘরে কে? দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো ৷ আদনান ভাই আমার সামনে দিয়ে উপরে উঠে গেল ৷ আমিও সাথে সাথে গেলাম ৷ ছাদে উঠে দেখলাম আদনান ভাই বসে আছে ৷ আমি বললাম --
.
--ঘরে ঢুকবেন না?
.
--তুমি দরজায় শব্দ করার পর দরজা কেউ খুলে দিয়েছিল?
.
--না ৷
.
--আমি ডাকলেও খুলবে না ৷
.
--আমি ভাবলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন তাই চলে যাচ্ছি কিন্তু আপনি তো বাইরে ৷ তাহলে ভেতরে কে?
.
--আমার ছোটবেলার বন্ধু ৷ যেহেতু তুমি ডাকার পরও দরজা খুলে দেয়নি মনে হয় ঘুম আসছে ৷গ্রাম থেকে এসেছে বিকেলে ৷ ঘুম এলে তাকে ডেকে কোনো লাভ নেই ৷ ঘুমানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে উঠবে না ৷
.
--যাদের ঘুম বেশি তাদেরই ভাল ৷ ঘুমিয়ে থাকা অবস্হায় কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না ৷
.
--নিশো,কেমন আছো? অনেক দিন পর এলে ৷ বাসা বদলানোর পর আর আসো নি ৷
.
--ইচ্ছা করলেই আসতে পারতাম কিন্তু আসিনি ৷ আপনি তো আমার কথা শোনেন না এসে কি করবো?
.
--বিয়ে এবার করতে হবে নিশো ৷ বাবা মাও ফোন করলে এই কথায় সব সময় বলে ৷ মা একটা মেয়ে দেখে রেখেছে ৷ ঠিক করেছি সে যেমনই হোক তাকেই বিয়ে করবো ৷ মা খুশি হলে আমার আর কিছু লাগবে না ৷ কিছুদিনপর গ্রামে যাব সব কিছু ঠিকঠাক করতে ৷
.
--অবশেষে তাহলে বিয়েতে রাজি হলেন ৷
.
--নিশো সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে হয় ৷ যে সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে সেই সুখে থাকে ৷ আমাকেও অনেক আগে পরিবর্তন হওয়া লাগতো তাহলে এতো কষ্ট পেতে হতো না ৷
.
--ওসব নিয়ে আর ভাবেন না ৷ সবার জীবনেই কিছু খারাপ পরিচ্ছেদ থাকে ৷
.
কথা বলতে বলতে নয়টা বেজে গেল ৷ আদনান ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় হাটছি ৷ আসলেই সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করতে হয় ৷ আদনান ভাইয়ের একটা সর্ম্পক ছিল ৷ তখন আদনান ভাই ফাইনাল বর্ষে ছিল ৷ আরমিন আপুর বাসায় অনেক আগে থেকেই বিয়ের কথা চলছিলো ৷ আদনান ভাইকে অনেক বার বলেছিল এ কথা কিন্তু আদনান ভাইয়ের করার কিছু ছিল না ৷ বেকার ছেলে হয়ে কিভাবে একটা মেয়েকে তার জীবনের সাথে জড়াবে ৷ আরমিন আপু নিজেই তার পরিবারে আদনান ভাইয়ের কথা বলেছিল কিন্তু তারা রাজি হয়নি ৷ তারা বেকার কোনো ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দেবে না ৷ আরমিন আপুর বিয়ের পর আদনান ভাই অনেক ভেঙ্গে পরেছিল ৷ ফাইনাল পরিক্ষায় রেজাল্ট খারাপ না করলেও অন্য সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল ৷ তারপর আর কখনো অন্যকোনো রিলেশনে জড়ায়নি ৷ আমি অনেকবার বলেছি বিয়েটা করেন, বয়স তো কমছে না ৷ জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না ৷ এসব নিয়ে কিছু বললে আদনান ভাই বলে,"অন্যকে উপদেশ সবাই দিতে পারে, কিন্তু নিজে তা বুঝে না "৷ তখন আমি আর কি বলবো বুঝতে পারি না ৷ সত্যই অন্যকে সবাই বুঝাতে পারে,কিন্তু নিজে কেউ বাস্তবতা বুঝতে চায় না ৷
বাসায় পৌছে দেখি রাত দশটা বেজে গেছে ৷ আদনান ভাইয়ের ওখান থেকে খেয়ে এসেছি ৷ তাই মাকে বললাম আর খাব না ৷ রুমে ঢুকে শুয়ে পরলাম ৷ আমরা মানুষরা আসলে কেউ সুখি না ৷ সবার জীবনের গল্পেই দুঃখের ছোয়া আছে ৷ আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, মানুষ হয়ে জম্ম নেওয়া সুখের কোনো বিষয় না ৷ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসার কোনো চিহ্ন নেই ৷ যখন ঘুমাতে চাই তখন ঘুম পায় না,যখন চাই না তখনই ঘুম এসে জমা হয় চোখে ৷ হাতে ফোন নিয়ে "তপুর-মন ভাল নেই" গানটা শুনছি ৷ ভাবলাম ফেসবুক থেকে একটু ঘুরে আসি ৷ ফেসবুকে আজকাল তেমন সময় দেওয়া হয় না ৷ একটা সময় ছিল যখন সারা দিনরাত ফেবুতে পরে থাকতাম ৷ এখন ফেসবুক আমাকে টানে না তাই আমিও কাছে যাই না ৷ ফেসবুকে ঢুকে দেখি অনেকগুলো মেসেজ এসেছে ৷ সবগুলো বন্ধুরা দিয়েছে ৷ বন্ধুরা মাঝে মাঝেই বলে,“কিরে নিশো তুই আর ফেসবুকে তেমন আসিস না কেন? আগেতো সারাদিন রাত ফেবুতে থাকতি ৷ তুই কি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতি যা আমরা জানি না, পরে ছ্যাকা খেয়েছিস এজন্য আর আসিস না?" আমি কি বলবো বুঝতে পারি না ৷ মাঝে মাঝে চুপ থাকি আবার মাঝে মাঝে কিছু একটা বলে কথা ঘুরিয়ে ফেলি ৷ বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখলাম নেহা মেসেজ দিয়েছে ৷ লিখেছে-"স্যার কি করেন"৷ এই মেয়ের সমস্যা কি আমি বুঝতে পারি না ৷ কয়েকদিন আগে রুমে শুয়েছিলাম ৷ হঠাৎ দরজা থেকে নেহা বললো, স্যার আপনাকে চাচী খেতে যেতে বললো ৷ পড়ানোর সময় স্যার বলে ঠিক আছে ৷ এমনি সময়ে কেন স্যার বলতে হবে ৷ আমি কি ওদের স্কুলের মাস্টার? যদিও আমার সাথে কম কথা বলে কিন্তু যা বলে সেটাই আমার বিরক্তি ধরিয়ে দেয় ৷ আমি অচেনা আইডি তেমন একটা অ্যাকচেপ্ট করিনা ৷ নেহাকে পড়ানোর কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন নেহা বললো -"আমি আপনাকে কতদিন আগে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি কিন্তু আপনি ঝুলিয়ে রেখেছেন ৷ ছবি দেওয়া নাই কিন্তু নাম দেওয়া আছে তাও চিনেন না? অ্যাকচেপ্ট করবেন,আমার পুরো নামে খোলা আছে-নাবিয়ান রহমান নেহা" ৷ আমি তখন কিছু বলিনি ৷ সেদিন রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখি নাবিয়ান রহমান নেহা নামের একটা আইডি আমার লিস্টে ৷ সত্যি আমি জানতাম না নেহার পুরো নাম ৷ জানলে হয়তো অ্যাকচেপ্ট করতাম বা করতাম না ৷ যেহেতু নিজে থেকে বললো তাই আর ঝুলিয়ে রাখলাম না ৷ অ্যাকচেপ্ট করার একটু পরেই দেখি মেসেজ দিয়েছে "ধন্যবাদ" ৷ আমি কিছু বলি নি ৷ আজও কিছু বললাম না ৷ মেসেজ সিন করলাম না, ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসলাম ৷ কানে হেডফোন, হেডফোনে গান চলছে-
.
স্বপ্ন দেখার খোলা চোখে, হয়না সাহস আর মনে
করি না কিছু পাওয়ার আশা
ব্যর্থ আমার প্রার্থনারা ৷
আজ আমি সব হারানো
আমি শূন্যতায় ভেসে হাহাকার দেখি
লাগে ভয় যেন আমার
দেখা হলনা আলো, সুধায় অন্ধকার ৷
আমি শূন্যতায় ভেসে হাহাকার দেখি
লাগে ভয় যেন আমার
দেখা হলনা আলো, সুধায় অন্ধকার ৷
কেউ বোঝেনি আমায়, চেনেনি তো কেউ
দেখেও কতবার তবু দেখেনি কেউ......নেশার বোঝা,পোপেয়ে ৷
কানে হেডফোন লাগিয়েই ঘুমিয়ে পরলাম ৷ সকালে ঘুম থেকে উঠলাম মার ডাকে ৷ ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়টা বাজতে চলেছে ৷ তৈরি হয়ে ভার্সিটি গেলাম ৷
,
এখন বিকাল চারটা বাজে ৷ রুমে শুয়ে থেকে "এল ক্যামিনো-এ ব্রেকিং ব্যাড" মুভি দেখছি ৷ আজ নেহা পড়তে আসবে না, মুভি দেখতে কোনো সমস্যা নেই ৷ কিন্তু হঠাৎ নেহা রুমের ভিতর ঢুকে গেল ৷ হাতে তার বই ৷ আমি বুঝতে পারছি না, মেয়েটাকে মানা করার পরও কেন পড়তে এলো? নাকি ভুলে এসেছে ৷ কাল পড়ানোর সময় নেহাকে আর আসতে মানা করে দিয়েছি ৷ সে অবশ্য কারণ জানতে চাইলে বলেছিলাম- এখানে পড়া আর বাসায় পড়া একই কথা ৷ এখানে না এসে বাসায় ভাল করে পড়বে ৷
.
--কি ব্যাপার নেহা তুমি?
.
--আমি কি বলেছিলাম আমি আসবো না?
.
--কিন্তু আমি মানা করে দিয়েছিলাম ৷
.
--আপনি মানা করলেই হবে না ৷ আমি আপনার কথায় পড়তে আসি না ৷ চাচী মানা করলে তারপর থেকে আসবো না ৷ কাল আমি চাচীকে বলেছিলাম আপনি আসতে বারণ করেছেন ৷ চাচী বলেছে-“নিশোর না করাতে কিছু হবে না "৷ আমি কি চাচীকে ডাক দিব?
.
--না থাক লাগবে না ৷
.
--আমি আপনাকে ফেসবুকে মেসেজ দিলে উত্তর দেন না কেন?
.
--কথা কম বলে পড়া শুরু করো ৷
.
আজকাল এ মেয়েটা মুখে মুখে কথা বলা শুরু করেছে ৷ সেদিন পড়তে পড়তে হঠাৎ বলে উঠলো- " আচ্ছা নিশো, তুমি কখনো প্রেম করেছো?" আমি শুনে চুপ হয়ে গেলাম ৷ বলে কি মেয়েটা, এতো সাহস কোথায় পেল ৷ তুমি করে বলছে আবার নাম ধরেও ডাকছে ৷ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বললো-“না মানে স্যার, আপনি কখনো কোনো সর্ম্পকে জড়িয়েছেন?" পড়তে এসেছো চুপচাপ পড়ে চলে যাও ৷ আমি এটা বলার পর সেদিন আর কিছু বলে নি ৷
পড়া শেষ করে নেহা চলে গেল ৷ দরজায় গিয়ে বললো-
.
--মেসেজের উত্তর দিবেন ৷ অন্যের ঠিকই দেন ৷ আমি ছাত্রী, আমার মেসেজের উত্তর দেওয়া যায় না? নাকি ভয় করেন আমার প্রেমে পরে যাবেন?
.
এটা বলেই সে চলে গেল ৷ মেয়েটা একটু বেশি বেশি করতিছে ৷ আগে তো চুপচাপ থাকতো ৷
.
/
.
আজ ভার্সিটি যাব না ৷ কিছু ভাল লাগছে না, সারা রাত ঘুমায়নি ৷ সময়ের সাথে নিজেকে বদলাতে না পারলে এরকম হয় ৷ জীবনে কোনো কিছু ঠিক ভাবে চলে না ৷ মনটা আজ খুবই মেঘলা ৷ যদিও আকাশে মেঘ নেই ৷ আকাশে মেঘ থাকলে ভাল হতো ৷ আকাশের মেঘের বৃষ্টির সাথে আমার ভেতর জমে থাকা মেঘও বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরত ৷ কাল ঘুমিয়ে পড়ার একটু পরেই মোবাইল বেজে উঠলো ৷ হাতে ফোন নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার ৷ কে আবার ফোন দিল ভাবতে ভাবতে ফোন কানে ধরলাম ৷ নাম্বার অচেনা হলেও অপর পাশ থেকে চিরচেনা কন্ঠস্বর থেকে ভেসে এলো,“কেমন আছিস, নিশো" ৷ আমার মুখ থেকে কথা হারিয়ে গেল ৷ কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না ৷ একটুপর আবার বললো-" কথা বলছিস না কেন? চিনতে পারছিস না? " মনে মনে একটু হাসলাম, আমি যদি তার কন্ঠ না চিনতে পারি তাহলে আর কে চিনতে পারবে? বললাম-
.
--তানিম, কেমন আছিস রে?
.
--ভাল আবার ভাল না ৷ ঠিক জানি না রে ৷ আমরা মানুষরা আসলে কেমন থাকতে চাই তা নিজেরাই জানি না ৷ কিছু মানুষের ভাল থাকার ব্যবস্হা থাকলেও সে ইচ্ছা করে ভাল থাকে না ৷ আর বাকিরা শত চেষ্টা করেও একটু ভাল থাকতে পারে না ৷
.
--কিছু হয়েছে তোর?
.
--না কিছু হয়নি ৷ কেমন আছিস ?
.
এভাবেই কিছুক্ষণ কথা বলেছিলাম তানিমের সাথে ৷ তারপর রাতে আর ঘুম আসে নি ৷ পুরনো স্মৃতিগুলো ঘুমাতে দেয়নি ৷ কত রাত জেগেছি তানিমের জন্য ৷ সেগুলোর সাথে কালকের রাতটাও যোগ হলো ৷
,
আমি ভাবতাম প্রেম আমাকে কখনো টানবে না ৷ বন্ধুরা যখন স্কুল কলেজে একটার পর একটা রিলেশনে জড়াতো তখন আমিই তাদের মধ্যে সিঙ্গেল ছিলাম ৷ বন্ধুরা যখন বলতো- “নিশো তুই কখনো রিলেশন করবি না?" আমি বলতাম - প্রেম করে অযথা সময় নষ্ট করার সময় আমার নেই ৷ আর সত্য বলতে প্রেম আমি কখনো করি নি ৷
তানিম আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিল ৷ অর্নাস প্রথম বর্ষে তার সাথে আমার পরিচয় হয় ৷ হাই,হ্যালো থেকে আস্তে আস্তে কথা বাড়তে থাকে ৷ কত রাত যে আমরা কথা বলে কেটে দিয়েছি তার ঠিক নেই ৷ এভাবে একটা বছর কেটে যায় ৷ আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছি ৷ ততদিনে তানিম আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে গেছে ৷ তবে আমি অনেক আগেই অনুভব করেছিলাম, ভালবাসা এখন আমাকে টানে ৷ আমি ঠিক করেছিলাম তানিমকে আমার মনের কথা বলে দিব ৷ অনেকদিন অনেক ভাবে বুঝিয়েছি কিন্তু সরাসরি কখনো বলি নি ৷ তানিমও আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি বুঝি ৷ তবুও মনের মধ্যে একটা ভয় ছিল ৷ ভয়টা হচ্ছে তানিম আমার এক বছরের বড় ৷ যখন আমরা কথা বলা শুরু করি তখন থেকেই আমরা ব্যাপারটা জানতাম ৷ ঠিক করলাম এবার যেদিন দেখা করবো সেদিন বলবো মনের কথা ৷ কিছুদিন পর তানিম নিজেই দেখা করতে বললো ৷ আমি বেশ খুশি হলাম ৷ তানিমের সাথে ইচ্ছা করলেই দেখা করা হয় না ৷ ওদের এলাকায় যেতে অনেকটা পথ যেতে হয় ৷
তানিমের সাথে দেখা করতে এসেছি ৷ কিভাবে বলবো ঠিক করে নিচ্ছি ৷ তানিম হঠাৎ বললো "আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে" ৷ আমি ভাবলাম মজা করতিছে ৷ বললাম, মজা করিস না ৷ আমার একটা সিরিয়াস কথা বলার আছে ৷ তানিম বললো,"আমি জানি তুই কি বলবি ৷ চাইলেই সবকিছু নিজেদের মতো করে হয় না ৷ মানুষের সব ইচ্ছা পূর্ণ হয় না ৷ আমি শেষবারের মতো তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম,এজন্য তোকে আসতে বলেছি ৷ তুই সব সময় আমার জীবনে একটা ভাল বন্ধু হয়ে থাকবি ৷ "
আমার মাথা কাজ করছিল না ৷ কি করবো বুঝতে পারছিলাম না ৷ তানিম যাওয়ার পর ওখানেই বসে রইলাম ৷ কি ভেবেছিলাম আর কি হয়ে গেল ৷ মানুষের জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেব কখনো মিলে না ৷
,
তিনদিন পর বাসায় ফিরছি ৷ আদনান ভাইয়ের গ্রামে গিয়েছিলাম ৷ বাবা মাকে বলেছিল যেতে কিন্তু অফিস রেখে যাওয়া সম্ভব না তাই শুধু আমি গিয়েছিলাম ৷ অনেকদিন পর গ্রামে গিয়ে ভালই লাগছে ৷ মাকে কত করে বলি চলো আমাদের গ্রামের বাসা থেকে ঘুরে আসি কিন্তু যেতেই চায় না ৷ বিয়েতে আদনান ভাইকে অনেক হাসি খুশি দেখলাম ৷ ভাবী বেশ মায়াবতী ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে মানিয়েছে ৷ বাসার নিচে আসতেই নেহার সাথে দেখা ৷ রাগী লুক দেখিয়ে বাইরে চলে গেল ৷ এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের কি সমস্যা আমি বুঝি না ৷ বাসায় ঢুকেই মাকে জিঙ্গাসা করলাম-
.
--নেহাকে আমার নাম্বার দিয়েছো কেন?
.
--কি হয়েছো তোর? এসেই এ কথা বলছিস ৷ ওর নাকি পড়াতে কি সমস্যা ছিল সেটা বুঝে নিতে আমার কাছ থেকে নাম্বার নিল ৷
.
আমি আর কিছু বললাম না ৷ কিছু না বলাই ভলো ৷ মা আবার কি না কি ভেবে বসবে ৷ গ্রামে থাকা অবস্হায় নেহা ফোন করেছিল ৷ দ্বিতীয় দিন কল করেছিল ৷ প্রথমে বুঝতে পারি নি,বুঝতে পারার পর বললাম -
--কি জন্য কল দিয়েছো?
.
--আপনি কয়দিন থাকবেন বিয়েতে?
.
--কেন ?
.
--এমনি জানার জন্য বলছি ৷
.
--নাম্বার কোথায় পেয়েছো?
.
--চাচীর কাছ থেকে নিয়েছি ৷
.
--বাচ্চা মেয়ে বাচ্চার মতো থাকো ৷ আর ফোন দিবা না ৷ আমার যেদিন ইচ্ছা সেদিন যাব ৷
.
এটা বলেই কল কেটে দিয়েছিলাম ৷ ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম ৷ একটু ঘুম দিতে হবে ৷ বিয়ে বাড়িতে ভাল মত ঘুম হয়নি ৷ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় নেহা এসে হাজির ৷ আমি বললাম, আজ পড়াবো না ৷ কাল থেকে এসো ৷ নেহা বললো-
.
--আমি পড়তে আসি নি ৷ দেখছেন না হাতে বই নেই ৷
.
--তাহলে কি জন্য এসেছো?
.
--আমি আপনাকে এটা বলতে এসেছি যে, আমি আর আপনার কাছে পড়বো না ৷ একটা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করে আর আপনি তাকে সব সময় এড়িয়ে চলেন ৷ মেসেজ দিলে কখনো উত্তর দেন না ৷ পড়ানোর সময় তাকিয়ে থাকি তখন দেখেও না দেখার অভিনয় করেন ৷ এজন্য পড়তে আসতেও না করে দিয়েছিলেন ৷ ফোন করলাম তখনও অপমান করলেন ৷ আর শোনেন আমি বাচ্চা না, সব কিছু বোঝার বয়স আমার হয়েছে ৷ জীবনে এগিয়ে যেতে হয় ৷ একজন চলে গিয়েছে তারজন্য অন্যকে কষ্ট দিবেন? আমি জানি আপনি বুঝেন আমি কি চাই ৷ আপনি তো বাচ্চা না ৷ আপনার ডায়েরি খুজে দেখেন পাবেন না ৷ সব কিছু জেনেই ভালবেসেছি ৷ যে সব কিছু জেনে কাছে আসতে চায় তাকে কাছে রাখতে হয় ৷
.
এতো কিছু শুনিয়ে চলে গেল ৷ হ্যা, আমি বুঝি নেহা আসলে কি চায় ৷ আমিও তানিমকে এভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করতাম ৷ ডেস্ক খুলে দেখি ডায়েরি নেই ৷ ডায়েরিতে অনেক দিন ধরে হাত দেয়নি ৷ এজন্য বুঝতে পারিনি কেউ একজন আমার ডায়েরী নিয়ে গেছে ৷ ডায়েরীতে আমার আর তানিমের সব কিছু লিখেছিলাম ৷ আমি আর কিছু ভাবলাম না, ঘুমিয়ে পরলাম ৷
,
নেহা আর পড়তে আসে না ৷ বাসায় এসে মার সাথে কথা বললেও আমার দিকে একবারও তাকায় না ৷ নেহার সামনে দিয়ে গেলেও এমন ভাবে পাশ কেটে চলে যায় মনে হয় তার সামনে কেউ ছিল না ৷ ইদানিং মেয়েটার অনুপস্থিতি আমার ভিতর অনুভূতি তৈরি করছে ৷ আমি ঠিক করেছিলাম, আর কখনো কারো জন্য এরকম ভাববো না ৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমাদের ইচ্ছার উপর কিছু থাকে না, সব কিছু হয়ে যায় ৷ রাতে ফেসবুকে ঢুকলাম, দেখলাম নেহা মেসেজ দিয়েছে ৷ যদিও এখন ফেসবুকে নেই নেহা ৷ মেসেজ ওপেন করে দেখি লিখেছে- “আপনি কিন্তু আমাকে অনেক কাদাচ্ছেন" ৷ আচ্ছা আমার কি উত্তর দেওয়া উচিত? হ্যা অবশ্যই উত্তর দেওয়া উচিত ৷
আমি লিখতে শুরু করলাম৷
,
,
,
,
,
Joker (Anonymous)
দেখেও কতবার তবু দেখেনি কেউ......নেশার বোঝা,পোপেয়ে ৷
কানে হেডফোন লাগিয়েই ঘুমিয়ে পরলাম ৷ সকালে ঘুম থেকে উঠলাম মার ডাকে ৷ ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়টা বাজতে চলেছে ৷ তৈরি হয়ে ভার্সিটি গেলাম ৷
,
এখন বিকাল চারটা বাজে ৷ রুমে শুয়ে থেকে "এল ক্যামিনো-এ ব্রেকিং ব্যাড" মুভি দেখছি ৷ আজ নেহা পড়তে আসবে না, মুভি দেখতে কোনো সমস্যা নেই ৷ কিন্তু হঠাৎ নেহা রুমের ভিতর ঢুকে গেল ৷ হাতে তার বই ৷ আমি বুঝতে পারছি না, মেয়েটাকে মানা করার পরও কেন পড়তে এলো? নাকি ভুলে এসেছে ৷ কাল পড়ানোর সময় নেহাকে আর আসতে মানা করে দিয়েছি ৷ সে অবশ্য কারণ জানতে চাইলে বলেছিলাম- এখানে পড়া আর বাসায় পড়া একই কথা ৷ এখানে না এসে বাসায় ভাল করে পড়বে ৷
.
--কি ব্যাপার নেহা তুমি?
.
--আমি কি বলেছিলাম আমি আসবো না?
.
--কিন্তু আমি মানা করে দিয়েছিলাম ৷
.
--আপনি মানা করলেই হবে না ৷ আমি আপনার কথায় পড়তে আসি না ৷ চাচী মানা করলে তারপর থেকে আসবো না ৷ কাল আমি চাচীকে বলেছিলাম আপনি আসতে বারণ করেছেন ৷ চাচী বলেছে-“নিশোর না করাতে কিছু হবে না "৷ আমি কি চাচীকে ডাক দিব?
.
--না থাক লাগবে না ৷
.
--আমি আপনাকে ফেসবুকে মেসেজ দিলে উত্তর দেন না কেন?
.
--কথা কম বলে পড়া শুরু করো ৷
.
আজকাল এ মেয়েটা মুখে মুখে কথা বলা শুরু করেছে ৷ সেদিন পড়তে পড়তে হঠাৎ বলে উঠলো- " আচ্ছা নিশো, তুমি কখনো প্রেম করেছো?" আমি শুনে চুপ হয়ে গেলাম ৷ বলে কি মেয়েটা, এতো সাহস কোথায় পেল ৷ তুমি করে বলছে আবার নাম ধরেও ডাকছে ৷ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বললো-“না মানে স্যার, আপনি কখনো কোনো সর্ম্পকে জড়িয়েছেন?" পড়তে এসেছো চুপচাপ পড়ে চলে যাও ৷ আমি এটা বলার পর সেদিন আর কিছু বলে নি ৷
পড়া শেষ করে নেহা চলে গেল ৷ দরজায় গিয়ে বললো-
.
--মেসেজের উত্তর দিবেন ৷ অন্যের ঠিকই দেন ৷ আমি ছাত্রী, আমার মেসেজের উত্তর দেওয়া যায় না? নাকি ভয় করেন আমার প্রেমে পরে যাবেন?
.
এটা বলেই সে চলে গেল ৷ মেয়েটা একটু বেশি বেশি করতিছে ৷ আগে তো চুপচাপ থাকতো ৷
.
/
.
আজ ভার্সিটি যাব না ৷ কিছু ভাল লাগছে না, সারা রাত ঘুমায়নি ৷ সময়ের সাথে নিজেকে বদলাতে না পারলে এরকম হয় ৷ জীবনে কোনো কিছু ঠিক ভাবে চলে না ৷ মনটা আজ খুবই মেঘলা ৷ যদিও আকাশে মেঘ নেই ৷ আকাশে মেঘ থাকলে ভাল হতো ৷ আকাশের মেঘের বৃষ্টির সাথে আমার ভেতর জমে থাকা মেঘও বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরত ৷ কাল ঘুমিয়ে পড়ার একটু পরেই মোবাইল বেজে উঠলো ৷ হাতে ফোন নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার ৷ কে আবার ফোন দিল ভাবতে ভাবতে ফোন কানে ধরলাম ৷ নাম্বার অচেনা হলেও অপর পাশ থেকে চিরচেনা কন্ঠস্বর থেকে ভেসে এলো,“কেমন আছিস, নিশো" ৷ আমার মুখ থেকে কথা হারিয়ে গেল ৷ কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না ৷ একটুপর আবার বললো-" কথা বলছিস না কেন? চিনতে পারছিস না? " মনে মনে একটু হাসলাম, আমি যদি তার কন্ঠ না চিনতে পারি তাহলে আর কে চিনতে পারবে? বললাম-
.
--তানিম, কেমন আছিস রে?
.
--ভাল আবার ভাল না ৷ ঠিক জানি না রে ৷ আমরা মানুষরা আসলে কেমন থাকতে চাই তা নিজেরাই জানি না ৷ কিছু মানুষের ভাল থাকার ব্যবস্হা থাকলেও সে ইচ্ছা করে ভাল থাকে না ৷ আর বাকিরা শত চেষ্টা করেও একটু ভাল থাকতে পারে না ৷
.
--কিছু হয়েছে তোর?
.
--না কিছু হয়নি ৷ কেমন আছিস ?
.
এভাবেই কিছুক্ষণ কথা বলেছিলাম তানিমের সাথে ৷ তারপর রাতে আর ঘুম আসে নি ৷ পুরনো স্মৃতিগুলো ঘুমাতে দেয়নি ৷ কত রাত জেগেছি তানিমের জন্য ৷ সেগুলোর সাথে কালকের রাতটাও যোগ হলো ৷
,
আমি ভাবতাম প্রেম আমাকে কখনো টানবে না ৷ বন্ধুরা যখন স্কুল কলেজে একটার পর একটা রিলেশনে জড়াতো তখন আমিই তাদের মধ্যে সিঙ্গেল ছিলাম ৷ বন্ধুরা যখন বলতো- “নিশো তুই কখনো রিলেশন করবি না?" আমি বলতাম - প্রেম করে অযথা সময় নষ্ট করার সময় আমার নেই ৷ আর সত্য বলতে প্রেম আমি কখনো করি নি ৷
তানিম আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিল ৷ অর্নাস প্রথম বর্ষে তার সাথে আমার পরিচয় হয় ৷ হাই,হ্যালো থেকে আস্তে আস্তে কথা বাড়তে থাকে ৷ কত রাত যে আমরা কথা বলে কেটে দিয়েছি তার ঠিক নেই ৷ এভাবে একটা বছর কেটে যায় ৷ আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছি ৷ ততদিনে তানিম আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে গেছে ৷ তবে আমি অনেক আগেই অনুভব করেছিলাম, ভালবাসা এখন আমাকে টানে ৷ আমি ঠিক করেছিলাম তানিমকে আমার মনের কথা বলে দিব ৷ অনেকদিন অনেক ভাবে বুঝিয়েছি কিন্তু সরাসরি কখনো বলি নি ৷ তানিমও আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি বুঝি ৷ তবুও মনের মধ্যে একটা ভয় ছিল ৷ ভয়টা হচ্ছে তানিম আমার এক বছরের বড় ৷ যখন আমরা কথা বলা শুরু করি তখন থেকেই আমরা ব্যাপারটা জানতাম ৷ ঠিক করলাম এবার যেদিন দেখা করবো সেদিন বলবো মনের কথা ৷ কিছুদিন পর তানিম নিজেই দেখা করতে বললো ৷ আমি বেশ খুশি হলাম ৷ তানিমের সাথে ইচ্ছা করলেই দেখা করা হয় না ৷ ওদের এলাকায় যেতে অনেকটা পথ যেতে হয় ৷
তানিমের সাথে দেখা করতে এসেছি ৷ কিভাবে বলবো ঠিক করে নিচ্ছি ৷ তানিম হঠাৎ বললো "আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে" ৷ আমি ভাবলাম মজা করতিছে ৷ বললাম, মজা করিস না ৷ আমার একটা সিরিয়াস কথা বলার আছে ৷ তানিম বললো,"আমি জানি তুই কি বলবি ৷ চাইলেই সবকিছু নিজেদের মতো করে হয় না ৷ মানুষের সব ইচ্ছা পূর্ণ হয় না ৷ আমি শেষবারের মতো তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম,এজন্য তোকে আসতে বলেছি ৷ তুই সব সময় আমার জীবনে একটা ভাল বন্ধু হয়ে থাকবি ৷ "
আমার মাথা কাজ করছিল না ৷ কি করবো বুঝতে পারছিলাম না ৷ তানিম যাওয়ার পর ওখানেই বসে রইলাম ৷ কি ভেবেছিলাম আর কি হয়ে গেল ৷ মানুষের জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেব কখনো মিলে না ৷
,
তিনদিন পর বাসায় ফিরছি ৷ আদনান ভাইয়ের গ্রামে গিয়েছিলাম ৷ বাবা মাকে বলেছিল যেতে কিন্তু অফিস রেখে যাওয়া সম্ভব না তাই শুধু আমি গিয়েছিলাম ৷ অনেকদিন পর গ্রামে গিয়ে ভালই লাগছে ৷ মাকে কত করে বলি চলো আমাদের গ্রামের বাসা থেকে ঘুরে আসি কিন্তু যেতেই চায় না ৷ বিয়েতে আদনান ভাইকে অনেক হাসি খুশি দেখলাম ৷ ভাবী বেশ মায়াবতী ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে মানিয়েছে ৷ বাসার নিচে আসতেই নেহার সাথে দেখা ৷ রাগী লুক দেখিয়ে বাইরে চলে গেল ৷ এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের কি সমস্যা আমি বুঝি না ৷ বাসায় ঢুকেই মাকে জিঙ্গাসা করলাম-
.
--নেহাকে আমার নাম্বার দিয়েছো কেন?
.
--কি হয়েছো তোর? এসেই এ কথা বলছিস ৷ ওর নাকি পড়াতে কি সমস্যা ছিল সেটা বুঝে নিতে আমার কাছ থেকে নাম্বার নিল ৷
.
আমি আর কিছু বললাম না ৷ কিছু না বলাই ভলো ৷ মা আবার কি না কি ভেবে বসবে ৷ গ্রামে থাকা অবস্হায় নেহা ফোন করেছিল ৷ দ্বিতীয় দিন কল করেছিল ৷ প্রথমে বুঝতে পারি নি,বুঝতে পারার পর বললাম -
--কি জন্য কল দিয়েছো?
.
--আপনি কয়দিন থাকবেন বিয়েতে?
.
--কেন ?
.
--এমনি জানার জন্য বলছি ৷
.
--নাম্বার কোথায় পেয়েছো?
.
--চাচীর কাছ থেকে নিয়েছি ৷
.
--বাচ্চা মেয়ে বাচ্চার মতো থাকো ৷ আর ফোন দিবা না ৷ আমার যেদিন ইচ্ছা সেদিন যাব ৷
.
এটা বলেই কল কেটে দিয়েছিলাম ৷ ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম ৷ একটু ঘুম দিতে হবে ৷ বিয়ে বাড়িতে ভাল মত ঘুম হয়নি ৷ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় নেহা এসে হাজির ৷ আমি বললাম, আজ পড়াবো না ৷ কাল থেকে এসো ৷ নেহা বললো-
.
--আমি পড়তে আসি নি ৷ দেখছেন না হাতে বই নেই ৷
.
--তাহলে কি জন্য এসেছো?
.
--আমি আপনাকে এটা বলতে এসেছি যে, আমি আর আপনার কাছে পড়বো না ৷ একটা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করে আর আপনি তাকে সব সময় এড়িয়ে চলেন ৷ মেসেজ দিলে কখনো উত্তর দেন না ৷ পড়ানোর সময় তাকিয়ে থাকি তখন দেখেও না দেখার অভিনয় করেন ৷ এজন্য পড়তে আসতেও না করে দিয়েছিলেন ৷ ফোন করলাম তখনও অপমান করলেন ৷ আর শোনেন আমি বাচ্চা না, সব কিছু বোঝার বয়স আমার হয়েছে ৷ জীবনে এগিয়ে যেতে হয় ৷ একজন চলে গিয়েছে তারজন্য অন্যকে কষ্ট দিবেন? আমি জানি আপনি বুঝেন আমি কি চাই ৷ আপনি তো বাচ্চা না ৷ আপনার ডায়েরি খুজে দেখেন পাবেন না ৷ সব কিছু জেনেই ভালবেসেছি ৷ যে সব কিছু জেনে কাছে আসতে চায় তাকে কাছে রাখতে হয় ৷
.
এতো কিছু শুনিয়ে চলে গেল ৷ হ্যা, আমি বুঝি নেহা আসলে কি চায় ৷ আমিও তানিমকে এভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করতাম ৷ ডেস্ক খুলে দেখি ডায়েরি নেই ৷ ডায়েরিতে অনেক দিন ধরে হাত দেয়নি ৷ এজন্য বুঝতে পারিনি কেউ একজন আমার ডায়েরী নিয়ে গেছে ৷ ডায়েরীতে আমার আর তানিমের সব কিছু লিখেছিলাম ৷ আমি আর কিছু ভাবলাম না, ঘুমিয়ে পরলাম ৷
,
নেহা আর পড়তে আসে না ৷ বাসায় এসে মার সাথে কথা বললেও আমার দিকে একবারও তাকায় না ৷ নেহার সামনে দিয়ে গেলেও এমন ভাবে পাশ কেটে চলে যায় মনে হয় তার সামনে কেউ ছিল না ৷ ইদানিং মেয়েটার অনুপস্থিতি আমার ভিতর অনুভূতি তৈরি করছে ৷ আমি ঠিক করেছিলাম, আর কখনো কারো জন্য এরকম ভাববো না ৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমাদের ইচ্ছার উপর কিছু থাকে না, সব কিছু হয়ে যায় ৷ রাতে ফেসবুকে ঢুকলাম, দেখলাম নেহা মেসেজ দিয়েছে ৷ যদিও এখন ফেসবুকে নেই নেহা ৷ মেসেজ ওপেন করে দেখি লিখেছে- “আপনি কিন্তু আমাকে অনেক কাদাচ্ছেন" ৷ আচ্ছা আমার কি উত্তর দেওয়া উচিত? হ্যা অবশ্যই উত্তর দেওয়া উচিত ৷
আমি লিখতে শুরু করলাম৷
,
,
,
,
,
Joker (Anonymous)
No comments:
Post a Comment
comment