ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Tuesday, February 11, 2020

ডায়েরি

ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালবাসার গল্প, love story, valobashar golpo
আমি আপনাকে ভাইয়া ডাকতে পারবো না, আমি আপনাকে স্যার বলে ডাকবো ৷" এই বলে নেহা চুপ হয়ে গেল ৷ আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না ৷ ভাইয়া ডাকতে সমস্যা কোথায় বুঝতে পারলাম না ৷ আমি তো তার ভাইয়ের মতোই ৷ স্যার কেন বলতে হবে, আমি তো প্রফেশোনাল শিক্ষক না ৷কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি নেহাকে বললাম, ঠিক আছে তোমার যেটা ভাল লাগে সেটা বলেই ডাকো ৷
,
এখানে এসেছি তিন মাস হয়ে গেছে ৷ ছয় তলা বিল্ডিং এর তিন তালায় আমরা থাকি ৷ বাবা অযথা আগের বাসাটা পাল্টালো ৷ ওখান থেকে নাকি অফিস দূরে হয় ৷ আমি অর্নাস তৃতীয় বর্ষে পড়ি ৷ এখানে আসার পর কেমন করে যেন আমার বাবা মা নেহাদের পরিবারের সাথে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় ৷ আমার তো এখন মনে হয় আমাদের পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই আত্বীয়তা ছিল ৷ নেহার বাবা মা এই ফ্ল্যাটের দুই তলায় থাকে ৷ নেহা আমাদের বাসায় অনেকবার এসেছে ৷ অনেক বার বলতে দিনে দুই একবার আসবেই ৷ নেহা এবার ক্লাস টেনে পড়ে ৷ নেহার সাথে আমার তেমনভাবে কোনো কথা কখনো হয়নি কিন্তু আমার আম্মুর সাথে সব সময় বক বক করে ৷ এতো কি গল্প করে আমি বুঝি না ৷ আজকাল আবার মা নেহাকে রান্না করা শিখাচ্ছে ৷ কাল রাতে খাবারের সময় মা বললো,"নিশো কাল থেকে নেহাকে একটু পড়াতে সময় দিস ৷ মেয়েটা পড়াতে মনোযোগী না ৷ বাসায় পড়ে না, স্কুল কোচিং এ যা পড়ে ওইটুকুই ৷ বাকি সময় এটা ওটা করে নষ্ট করে ৷ ওর মার সাথে আজ কথা বললাম তখন বললো বাসায় কম পড়ে ৷ আমি ভাবলাম তুই বসেই থাকিস ওকে একটু সময় দিস ৷ এবছর ফাইনাল পরিক্ষা না পড়লে কেমন করে চলবে ৷ নেহার মাকে বলেছি নেহাকে কাল থেকে পাঠিয়ে দিতে ৷"
মার কথা শুনে একটু বিরক্ত লাগলো ৷ আমি নিজেই পড়তে বসি না তার উপর আবার অন্যকে পড়াতে হবে ৷ খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার ৷ কিন্তু কিছু করার নেই, মাকে না করতেও পারবো না ৷ পরেরদিন বিকেল বেলা নেহা পড়তে এলো ৷ পড়াতে বসার একটু পরেই নেহা বলল, “আমি আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকতে পারবো না, আমি স্যার বলে ডাকবো"৷
,
কিছুদিন পড়ানোর পর বুঝলাম সে ছাত্রী ভাল, শুধু ভাল না একটু বেশিই ভাল ৷ কোনো কিছু বোঝাতে হয় না, সব কিছুই পারে ৷ কোনো কিছু করতে বললে সাথে সাথেই করে দেয়, আমাকে কিছু বোঝাতেও হয় না ৷ এজন্যই হয়তো বাসায় তেমন পড়ে না ৷ ঠিক করলাম নেহাকে আর পড়াবো না ৷ মাকে বলতে হবে ৷ কিন্তু মা কি বলবে সেটাই চিন্তার বিষয় ৷ ঠিক করে রাখলাম আর কিছুদিন পড়ানোর পর নেহাকে আসতে মানা করে দেব ৷
/
নেহাকে পড়ানোর পর সন্ধ্যার আগে বাইরে আসলাম ৷ রাস্তায় আনমনে হাটতে হাটতে ঠিক করলাম আদনান ভাইয়ের কাছে যাব ৷ আমাদের আগে যেখানে বাসা ছিল আদনান ভাই ওখানেই থাকে ৷ তখন আমাদের বাসা থেকে আদনান ভাইয়ের কাছে যেতে পাচ ছয় মিনিট সময় লাগত ৷ আর এ বাসা থেকে রিক্সা করে যেতে নাহলেও বিশ মিনিট সময় লাগবে ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে অনেকদিন ধরে দেখা করা হয়নি ৷ আদনান ভাই আমাদের ভার্সিটিতে পড়তো ৷ আমি যখন প্রথম বর্ষে ছিলাম তখন আদনান ভাই ফাইনাল বর্ষে ছিল ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়টা খুব সাধারণ ভাবে হয় ৷ ক্যাম্পাসে একদিন বসে ছিলাম ৷ একটু পর আদনান ভাই পাশে এসে বসলো ৷ আদনান ভাইকে আমি আগে থেকেই এমনি চিনতাম ৷ কিন্তু ওই দিন কথা বলার পর আস্তে আস্তে একটা ভাল সর্ম্পক তৈরি হয়ে যায় ৷ চিলেকোঠার দরজায় নক করতেছি কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছি না ৷ ঘুমাচ্ছে নাকি? এ অসময়ে তো ঘুমানোর কথা না ৷ অফিস থেকে এসে ঘুমিয়েছে মনে হচ্ছে ৷ আদনান ভাই এ বাসার চিলেকোঠায় থাকে ৷ আগে অবশ্য মেসে থাকতো ৷ চাকরিতে জয়েন করার পর এখানে উঠেছে ৷ আমি এখন ছাদে বসে আছি ৷ ভাবতেছি চলে যাব, অন্যদিন আবার আসবো ৷ নামার জন্য নিচে যেতেই দেখলাম আদনান ভাই উপরে উঠছে ৷ হাতে বাজারের ব্যাগ, বাজারে গিয়েছিল ৷ তাহলে ঘরে কে? দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো ৷ আদনান ভাই আমার সামনে দিয়ে উপরে উঠে গেল ৷ আমিও সাথে সাথে গেলাম ৷ ছাদে উঠে দেখলাম আদনান ভাই বসে আছে ৷ আমি বললাম --
.
--ঘরে ঢুকবেন না?
.
--তুমি দরজায় শব্দ করার পর দরজা কেউ খুলে দিয়েছিল?
.
--না ৷
.
--আমি ডাকলেও খুলবে না ৷
.
--আমি ভাবলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন তাই চলে যাচ্ছি কিন্তু আপনি তো বাইরে ৷ তাহলে ভেতরে কে?
.
--আমার ছোটবেলার বন্ধু ৷ যেহেতু তুমি ডাকার পরও দরজা খুলে দেয়নি মনে হয় ঘুম আসছে ৷গ্রাম থেকে এসেছে বিকেলে ৷ ঘুম এলে তাকে ডেকে কোনো লাভ নেই ৷ ঘুমানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে উঠবে না ৷
.
--যাদের ঘুম বেশি তাদেরই ভাল ৷ ঘুমিয়ে থাকা অবস্হায় কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না ৷
.
--নিশো,কেমন আছো? অনেক দিন পর এলে ৷ বাসা বদলানোর পর আর আসো নি ৷
.
--ইচ্ছা করলেই আসতে পারতাম কিন্তু আসিনি ৷ আপনি তো আমার কথা শোনেন না এসে কি করবো?
.
--বিয়ে এবার করতে হবে নিশো ৷ বাবা মাও ফোন করলে এই কথায় সব সময় বলে ৷ মা একটা মেয়ে দেখে রেখেছে ৷ ঠিক করেছি সে যেমনই হোক তাকেই বিয়ে করবো ৷ মা খুশি হলে আমার আর কিছু লাগবে না ৷ কিছুদিনপর গ্রামে যাব সব কিছু ঠিকঠাক করতে ৷
.
--অবশেষে তাহলে বিয়েতে রাজি হলেন ৷
.
--নিশো সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে হয় ৷ যে সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে সেই সুখে থাকে ৷ আমাকেও অনেক আগে পরিবর্তন হওয়া লাগতো তাহলে এতো কষ্ট পেতে হতো না ৷
.
--ওসব নিয়ে আর ভাবেন না ৷ সবার জীবনেই কিছু খারাপ পরিচ্ছেদ থাকে ৷
.
কথা বলতে বলতে নয়টা বেজে গেল ৷ আদনান ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় হাটছি ৷ আসলেই সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করতে হয় ৷ আদনান ভাইয়ের একটা সর্ম্পক ছিল ৷ তখন আদনান ভাই ফাইনাল বর্ষে ছিল ৷ আরমিন আপুর বাসায় অনেক আগে থেকেই বিয়ের কথা চলছিলো ৷ আদনান ভাইকে অনেক বার বলেছিল এ কথা কিন্তু আদনান ভাইয়ের করার কিছু ছিল না ৷ বেকার ছেলে হয়ে কিভাবে একটা মেয়েকে তার জীবনের সাথে জড়াবে ৷ আরমিন আপু নিজেই তার পরিবারে আদনান ভাইয়ের কথা বলেছিল কিন্তু তারা রাজি হয়নি ৷ তারা বেকার কোনো ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দেবে না ৷ আরমিন আপুর বিয়ের পর আদনান ভাই অনেক ভেঙ্গে পরেছিল ৷ ফাইনাল পরিক্ষায় রেজাল্ট খারাপ না করলেও অন্য সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল ৷ তারপর আর কখনো অন্যকোনো রিলেশনে জড়ায়নি ৷ আমি অনেকবার বলেছি বিয়েটা করেন, বয়স তো কমছে না ৷ জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না ৷ এসব নিয়ে কিছু বললে আদনান ভাই বলে,"অন্যকে উপদেশ সবাই দিতে পারে, কিন্তু নিজে তা বুঝে না "৷ তখন আমি আর কি বলবো বুঝতে পারি না ৷ সত্যই অন্যকে সবাই বুঝাতে পারে,কিন্তু নিজে কেউ বাস্তবতা বুঝতে চায় না ৷
বাসায় পৌছে দেখি রাত দশটা বেজে গেছে ৷ আদনান ভাইয়ের ওখান থেকে খেয়ে এসেছি ৷ তাই মাকে বললাম আর খাব না ৷ রুমে ঢুকে শুয়ে পরলাম ৷ আমরা মানুষরা আসলে কেউ সুখি না ৷ সবার জীবনের গল্পেই দুঃখের ছোয়া আছে ৷ আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, মানুষ হয়ে জম্ম নেওয়া সুখের কোনো বিষয় না ৷ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসার কোনো চিহ্ন নেই ৷ যখন ঘুমাতে চাই তখন ঘুম পায় না,যখন চাই না তখনই ঘুম এসে জমা হয় চোখে ৷ হাতে ফোন নিয়ে "তপুর-মন ভাল নেই" গানটা শুনছি ৷ ভাবলাম ফেসবুক থেকে একটু ঘুরে আসি ৷ ফেসবুকে আজকাল তেমন সময় দেওয়া হয় না ৷ একটা সময় ছিল যখন সারা দিনরাত ফেবুতে পরে থাকতাম ৷ এখন ফেসবুক আমাকে টানে না তাই আমিও কাছে যাই না ৷ ফেসবুকে ঢুকে দেখি অনেকগুলো মেসেজ এসেছে ৷ সবগুলো বন্ধুরা দিয়েছে ৷ বন্ধুরা মাঝে মাঝেই বলে,“কিরে নিশো তুই আর ফেসবুকে তেমন আসিস না কেন? আগেতো সারাদিন রাত ফেবুতে থাকতি ৷ তুই কি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতি যা আমরা জানি না, পরে ছ্যাকা খেয়েছিস এজন্য আর আসিস না?" আমি কি বলবো বুঝতে পারি না ৷ মাঝে মাঝে চুপ থাকি আবার মাঝে মাঝে কিছু একটা বলে কথা ঘুরিয়ে ফেলি ৷ বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখলাম নেহা মেসেজ দিয়েছে ৷ লিখেছে-"স্যার কি করেন"৷ এই মেয়ের সমস্যা কি আমি বুঝতে পারি না ৷ কয়েকদিন আগে রুমে শুয়েছিলাম ৷ হঠাৎ দরজা থেকে নেহা বললো, স্যার আপনাকে চাচী খেতে যেতে বললো ৷ পড়ানোর সময় স্যার বলে ঠিক আছে ৷ এমনি সময়ে কেন স্যার বলতে হবে ৷ আমি কি ওদের স্কুলের মাস্টার? যদিও আমার সাথে কম কথা বলে কিন্তু যা বলে সেটাই আমার বিরক্তি ধরিয়ে দেয় ৷ আমি অচেনা আইডি তেমন একটা অ্যাকচেপ্ট করিনা ৷ নেহাকে পড়ানোর কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন নেহা বললো -"আমি আপনাকে কতদিন আগে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি কিন্তু আপনি ঝুলিয়ে রেখেছেন ৷ ছবি দেওয়া নাই কিন্তু নাম দেওয়া আছে তাও চিনেন না? অ্যাকচেপ্ট করবেন,আমার পুরো নামে খোলা আছে-নাবিয়ান রহমান নেহা" ৷ আমি তখন কিছু বলিনি ৷ সেদিন রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখি নাবিয়ান রহমান নেহা নামের একটা আইডি আমার লিস্টে ৷ সত্যি আমি জানতাম না নেহার পুরো নাম ৷ জানলে হয়তো অ্যাকচেপ্ট করতাম বা করতাম না ৷ যেহেতু নিজে থেকে বললো তাই আর ঝুলিয়ে রাখলাম না ৷ অ্যাকচেপ্ট করার একটু পরেই দেখি মেসেজ দিয়েছে "ধন্যবাদ" ৷ আমি কিছু বলি নি ৷ আজও কিছু বললাম না ৷ মেসেজ সিন করলাম না, ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসলাম ৷ কানে হেডফোন, হেডফোনে গান চলছে-
.
স্বপ্ন দেখার খোলা চোখে, হয়না সাহস আর মনে
করি না কিছু পাওয়ার আশা
ব্যর্থ আমার প্রার্থনারা ৷
আজ আমি সব হারানো
আমি শূন্যতায় ভেসে হাহাকার দেখি
লাগে ভয় যেন আমার
দেখা হলনা আলো, সুধায় অন্ধকার ৷
কেউ বোঝেনি আমায়, চেনেনি তো কেউ
দেখেও কতবার তবু দেখেনি কেউ......নেশার বোঝা,পোপেয়ে ৷
কানে হেডফোন লাগিয়েই ঘুমিয়ে পরলাম ৷ সকালে ঘুম থেকে উঠলাম মার ডাকে ৷ ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়টা বাজতে চলেছে ৷ তৈরি হয়ে ভার্সিটি গেলাম ৷
,
এখন বিকাল চারটা বাজে ৷ রুমে শুয়ে থেকে "এল ক্যামিনো-এ ব্রেকিং ব্যাড" মুভি দেখছি ৷ আজ নেহা পড়তে আসবে না, মুভি দেখতে কোনো সমস্যা নেই ৷ কিন্তু হঠাৎ নেহা রুমের ভিতর ঢুকে গেল ৷ হাতে তার বই ৷ আমি বুঝতে পারছি না, মেয়েটাকে মানা করার পরও কেন পড়তে এলো? নাকি ভুলে এসেছে ৷ কাল পড়ানোর সময় নেহাকে আর আসতে মানা করে দিয়েছি ৷ সে অবশ্য কারণ জানতে চাইলে বলেছিলাম- এখানে পড়া আর বাসায় পড়া একই কথা ৷ এখানে না এসে বাসায় ভাল করে পড়বে ৷
.
--কি ব্যাপার নেহা তুমি?
.
--আমি কি বলেছিলাম আমি আসবো না?
.
--কিন্তু আমি মানা করে দিয়েছিলাম ৷
.
--আপনি মানা করলেই হবে না ৷ আমি আপনার কথায় পড়তে আসি না ৷ চাচী মানা করলে তারপর থেকে আসবো না ৷ কাল আমি চাচীকে বলেছিলাম আপনি আসতে বারণ করেছেন ৷ চাচী বলেছে-“নিশোর না করাতে কিছু হবে না "৷ আমি কি চাচীকে ডাক দিব?
.
--না থাক লাগবে না ৷
.
--আমি আপনাকে ফেসবুকে মেসেজ দিলে উত্তর দেন না কেন?
.
--কথা কম বলে পড়া শুরু করো ৷
.
আজকাল এ মেয়েটা মুখে মুখে কথা বলা শুরু করেছে ৷ সেদিন পড়তে পড়তে হঠাৎ বলে উঠলো- " আচ্ছা নিশো, তুমি কখনো প্রেম করেছো?" আমি শুনে চুপ হয়ে গেলাম ৷ বলে কি মেয়েটা, এতো সাহস কোথায় পেল ৷ তুমি করে বলছে আবার নাম ধরেও ডাকছে ৷ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বললো-“না মানে স্যার, আপনি কখনো কোনো সর্ম্পকে জড়িয়েছেন?" পড়তে এসেছো চুপচাপ পড়ে চলে যাও ৷ আমি এটা বলার পর সেদিন আর কিছু বলে নি ৷
পড়া শেষ করে নেহা চলে গেল ৷ দরজায় গিয়ে বললো-
.
--মেসেজের উত্তর দিবেন ৷ অন্যের ঠিকই দেন ৷ আমি ছাত্রী, আমার মেসেজের উত্তর দেওয়া যায় না? নাকি ভয় করেন আমার প্রেমে পরে যাবেন?
.
এটা বলেই সে চলে গেল ৷ মেয়েটা একটু বেশি বেশি করতিছে ৷ আগে তো চুপচাপ থাকতো ৷
.
/
.
আজ ভার্সিটি যাব না ৷ কিছু ভাল লাগছে না, সারা রাত ঘুমায়নি ৷ সময়ের সাথে নিজেকে বদলাতে না পারলে এরকম হয় ৷ জীবনে কোনো কিছু ঠিক ভাবে চলে না ৷ মনটা আজ খুবই মেঘলা ৷ যদিও আকাশে মেঘ নেই ৷ আকাশে মেঘ থাকলে ভাল হতো ৷ আকাশের মেঘের বৃষ্টির সাথে আমার ভেতর জমে থাকা মেঘও বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরত ৷ কাল ঘুমিয়ে পড়ার একটু পরেই মোবাইল বেজে উঠলো ৷ হাতে ফোন নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার ৷ কে আবার ফোন দিল ভাবতে ভাবতে ফোন কানে ধরলাম ৷ নাম্বার অচেনা হলেও অপর পাশ থেকে চিরচেনা কন্ঠস্বর থেকে ভেসে এলো,“কেমন আছিস, নিশো" ৷ আমার মুখ থেকে কথা হারিয়ে গেল ৷ কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না ৷ একটুপর আবার বললো-" কথা বলছিস না কেন? চিনতে পারছিস না? " মনে মনে একটু হাসলাম, আমি যদি তার কন্ঠ না চিনতে পারি তাহলে আর কে চিনতে পারবে? বললাম-
.
--তানিম, কেমন আছিস রে?
.
--ভাল আবার ভাল না ৷ ঠিক জানি না রে ৷ আমরা মানুষরা আসলে কেমন থাকতে চাই তা নিজেরাই জানি না ৷ কিছু মানুষের ভাল থাকার ব্যবস্হা থাকলেও সে ইচ্ছা করে ভাল থাকে না ৷ আর বাকিরা শত চেষ্টা করেও একটু ভাল থাকতে পারে না ৷
.
--কিছু হয়েছে তোর?
.
--না কিছু হয়নি ৷ কেমন আছিস ?
.
এভাবেই কিছুক্ষণ কথা বলেছিলাম তানিমের সাথে ৷ তারপর রাতে আর ঘুম আসে নি ৷ পুরনো স্মৃতিগুলো ঘুমাতে দেয়নি ৷ কত রাত জেগেছি তানিমের জন্য ৷ সেগুলোর সাথে কালকের রাতটাও যোগ হলো ৷
,
আমি ভাবতাম প্রেম আমাকে কখনো টানবে না ৷ বন্ধুরা যখন স্কুল কলেজে একটার পর একটা রিলেশনে জড়াতো তখন আমিই তাদের মধ্যে সিঙ্গেল ছিলাম ৷ বন্ধুরা যখন বলতো- “নিশো তুই কখনো রিলেশন করবি না?" আমি বলতাম - প্রেম করে অযথা সময় নষ্ট করার সময় আমার নেই ৷ আর সত্য বলতে প্রেম আমি কখনো করি নি ৷
তানিম আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিল ৷ অর্নাস প্রথম বর্ষে তার সাথে আমার পরিচয় হয় ৷ হাই,হ্যালো থেকে আস্তে আস্তে কথা বাড়তে থাকে ৷ কত রাত যে আমরা কথা বলে কেটে দিয়েছি তার ঠিক নেই ৷ এভাবে একটা বছর কেটে যায় ৷ আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছি ৷ ততদিনে তানিম আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে গেছে ৷ তবে আমি অনেক আগেই অনুভব করেছিলাম, ভালবাসা এখন আমাকে টানে ৷ আমি ঠিক করেছিলাম তানিমকে আমার মনের কথা বলে দিব ৷ অনেকদিন অনেক ভাবে বুঝিয়েছি কিন্তু সরাসরি কখনো বলি নি ৷ তানিমও আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি বুঝি ৷ তবুও মনের মধ্যে একটা ভয় ছিল ৷ ভয়টা হচ্ছে তানিম আমার এক বছরের বড় ৷ যখন আমরা কথা বলা শুরু করি তখন থেকেই আমরা ব্যাপারটা জানতাম ৷ ঠিক করলাম এবার যেদিন দেখা করবো সেদিন বলবো মনের কথা ৷ কিছুদিন পর তানিম নিজেই দেখা করতে বললো ৷ আমি বেশ খুশি হলাম ৷ তানিমের সাথে ইচ্ছা করলেই দেখা করা হয় না ৷ ওদের এলাকায় যেতে অনেকটা পথ যেতে হয় ৷
তানিমের সাথে দেখা করতে এসেছি ৷ কিভাবে বলবো ঠিক করে নিচ্ছি ৷ তানিম হঠাৎ বললো "আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে" ৷ আমি ভাবলাম মজা করতিছে ৷ বললাম, মজা করিস না ৷ আমার একটা সিরিয়াস কথা বলার আছে ৷ তানিম বললো,"আমি জানি তুই কি বলবি ৷ চাইলেই সবকিছু নিজেদের মতো করে হয় না ৷ মানুষের সব ইচ্ছা পূর্ণ হয় না ৷ আমি শেষবারের মতো তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম,এজন্য তোকে আসতে বলেছি ৷ তুই সব সময় আমার জীবনে একটা ভাল বন্ধু হয়ে থাকবি ৷ "
আমার মাথা কাজ করছিল না ৷ কি করবো বুঝতে পারছিলাম না ৷ তানিম যাওয়ার পর ওখানেই বসে রইলাম ৷ কি ভেবেছিলাম আর কি হয়ে গেল ৷ মানুষের জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেব কখনো মিলে না ৷
,
তিনদিন পর বাসায় ফিরছি ৷ আদনান ভাইয়ের গ্রামে গিয়েছিলাম ৷ বাবা মাকে বলেছিল যেতে কিন্তু অফিস রেখে যাওয়া সম্ভব না তাই শুধু আমি গিয়েছিলাম ৷ অনেকদিন পর গ্রামে গিয়ে ভালই লাগছে ৷ মাকে কত করে বলি চলো আমাদের গ্রামের বাসা থেকে ঘুরে আসি কিন্তু যেতেই চায় না ৷ বিয়েতে আদনান ভাইকে অনেক হাসি খুশি দেখলাম ৷ ভাবী বেশ মায়াবতী ৷ আদনান ভাইয়ের সাথে মানিয়েছে ৷ বাসার নিচে আসতেই নেহার সাথে দেখা ৷ রাগী লুক দেখিয়ে বাইরে চলে গেল ৷ এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের কি সমস্যা আমি বুঝি না ৷ বাসায় ঢুকেই মাকে জিঙ্গাসা করলাম-
.
--নেহাকে আমার নাম্বার দিয়েছো কেন?
.
--কি হয়েছো তোর? এসেই এ কথা বলছিস ৷ ওর নাকি পড়াতে কি সমস্যা ছিল সেটা বুঝে নিতে আমার কাছ থেকে নাম্বার নিল ৷
.
আমি আর কিছু বললাম না ৷ কিছু না বলাই ভলো ৷ মা আবার কি না কি ভেবে বসবে ৷ গ্রামে থাকা অবস্হায় নেহা ফোন করেছিল ৷ দ্বিতীয় দিন কল করেছিল ৷ প্রথমে বুঝতে পারি নি,বুঝতে পারার পর বললাম -
--কি জন্য কল দিয়েছো?
.
--আপনি কয়দিন থাকবেন বিয়েতে?
.
--কেন ?
.
--এমনি জানার জন্য বলছি ৷
.
--নাম্বার কোথায় পেয়েছো?
.
--চাচীর কাছ থেকে নিয়েছি ৷
.
--বাচ্চা মেয়ে বাচ্চার মতো থাকো ৷ আর ফোন দিবা না ৷ আমার যেদিন ইচ্ছা সেদিন যাব ৷
.
এটা বলেই কল কেটে দিয়েছিলাম ৷ ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম ৷ একটু ঘুম দিতে হবে ৷ বিয়ে বাড়িতে ভাল মত ঘুম হয়নি ৷ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় নেহা এসে হাজির ৷ আমি বললাম, আজ পড়াবো না ৷ কাল থেকে এসো ৷ নেহা বললো-
.
--আমি পড়তে আসি নি ৷ দেখছেন না হাতে বই নেই ৷
.
--তাহলে কি জন্য এসেছো?
.
--আমি আপনাকে এটা বলতে এসেছি যে, আমি আর আপনার কাছে পড়বো না ৷ একটা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করে আর আপনি তাকে সব সময় এড়িয়ে চলেন ৷ মেসেজ দিলে কখনো উত্তর দেন না ৷ পড়ানোর সময় তাকিয়ে থাকি তখন দেখেও না দেখার অভিনয় করেন ৷ এজন্য পড়তে আসতেও না করে দিয়েছিলেন ৷ ফোন করলাম তখনও অপমান করলেন ৷ আর শোনেন আমি বাচ্চা না, সব কিছু বোঝার বয়স আমার হয়েছে ৷ জীবনে এগিয়ে যেতে হয় ৷ একজন চলে গিয়েছে তারজন্য অন্যকে কষ্ট দিবেন? আমি জানি আপনি বুঝেন আমি কি চাই ৷ আপনি তো বাচ্চা না ৷ আপনার ডায়েরি খুজে দেখেন পাবেন না ৷ সব কিছু জেনেই ভালবেসেছি ৷ যে সব কিছু জেনে কাছে আসতে চায় তাকে কাছে রাখতে হয় ৷
.
এতো কিছু শুনিয়ে চলে গেল ৷ হ্যা, আমি বুঝি নেহা আসলে কি চায় ৷ আমিও তানিমকে এভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করতাম ৷ ডেস্ক খুলে দেখি ডায়েরি নেই ৷ ডায়েরিতে অনেক দিন ধরে হাত দেয়নি ৷ এজন্য বুঝতে পারিনি কেউ একজন আমার ডায়েরী নিয়ে গেছে ৷ ডায়েরীতে আমার আর তানিমের সব কিছু লিখেছিলাম ৷ আমি আর কিছু ভাবলাম না, ঘুমিয়ে পরলাম ৷
,
নেহা আর পড়তে আসে না ৷ বাসায় এসে মার সাথে কথা বললেও আমার দিকে একবারও তাকায় না ৷ নেহার সামনে দিয়ে গেলেও এমন ভাবে পাশ কেটে চলে যায় মনে হয় তার সামনে কেউ ছিল না ৷ ইদানিং মেয়েটার অনুপস্থিতি আমার ভিতর অনুভূতি তৈরি করছে ৷ আমি ঠিক করেছিলাম, আর কখনো কারো জন্য এরকম ভাববো না ৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমাদের ইচ্ছার উপর কিছু থাকে না, সব কিছু হয়ে যায় ৷ রাতে ফেসবুকে ঢুকলাম, দেখলাম নেহা মেসেজ দিয়েছে ৷ যদিও এখন ফেসবুকে নেই নেহা ৷ মেসেজ ওপেন করে দেখি লিখেছে- “আপনি কিন্তু আমাকে অনেক কাদাচ্ছেন" ৷ আচ্ছা আমার কি উত্তর দেওয়া উচিত? হ্যা অবশ্যই উত্তর দেওয়া উচিত ৷
আমি লিখতে শুরু করলাম৷
,
,
,
,
,
Joker (Anonymous)

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *