তখন
আমি ক্লাস নাইনে সবে মাত্র উঠলাম, ক্লাস নাইনের একটা ছেলের আবেগ অনুভূতি যেমন হয় আমার
অবস্থাও ঠিক তেমন, কারণ আমি কোন সিনেমার হিরো নই, একজন সাধারণ মানুষ। বাঙালিরা প্রেম
আর সেক্স ছাড়া এর বাইরে কোন একটা বিষয় নিয়ে বলার মত বা উল্লেখ করার মত খুব একটা চিন্তা
ভাবনা করেনা, যতটা প্রায়োরিটি তারা প্রেম আর সেক্স কে দেয় অন্য বিষয়গুলোকে তারা মানে
আমরা অতটা কেয়ার করিনা। আমিও তেমনি একজন, ক্লাস নাইনে ওঠার পর বেশিরভাগ সময় প্রেম নিয়ে চিন্তা করতাম। ইস... যদি আমার একটা গার্লফ্রেন্ড
থাকত, মিষ্টি মিষ্টি রোমান্স হতো আরো কত কি।
ঠিক
সেই সময়ে ডেইলি ক্লাসে যাওয়ার পথে একটা মেয়ের সাথে দেখা হতো, মেয়েটার পরনে থাকতো কালো
বোরখা, মাথায় থাকতো নীল না দেয়া সাদা রঙের স্কার্ফ, কাধে থাকতো একটা ব্যাগ, আমার কাছে মনে হতো সে একটা পরি, শুধু তার চোখ দুটুই
দেখতাম, বড় বড় ভ্রমরের ন্যায় কালো। প্রতিদিন ওর সাথে চোখাচোখি হতো। প্রতিদিন নতুন ফন্দিফিকির
করতাম কিভাবে মেয়েটাকে মনের কথা বলি, কিন্তু কোনদিনই সাহসের কারণে বলতে পারতাম না।
শেষমেশ অনেকটা সাহস যুগিয়ে একদিন বলব বলে ঠিক করলাম। সেদিন ক্লাস থেকে ফিরছিলাম সাথে
ছিল আমার বন্ধু আরিফ। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি রাস্তার এক পাশে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দাঁড়িয়ে
থাকতে দেখেই আমার হৃদপিণ্ড লাফাতে থাকে। মেয়েটার দিকে ইঙ্গিত করে আরিফকে দেখিয়ে বলি
=দেখ আমার গার্লফ্রেন্ড।
আরিফ=
তোর আবার গার্লফ্রেন্ড কবে থেকে?
আমি=
আরে এখন= প্রপোজ করি নাই, আজকে করমু।
আরিফ=
তুই কি সিউর তুই প্রপোজ করলেই মেয়েটা এক্সেপ্ট করব।
আমি=
আরে কথা কম বলে দেখ, আমি কি করি।
মেয়েটার যতই কাছে যাচ্ছিলাম ততোই হৃদপিণ্ডের কম্পন
বাড়তে থাকে। আমি আর সাহস করতে পারলাম না, মেয়েটাকে ক্রস করে হাটতে থাকলাম, আরিফ মিট
মিট করে হাসতে থাকে, আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখি। এমন সময় মেয়েটা পিছন দিক থেকে আমাকে ডাক দিল, আমি
পিছন দিকে ফিরে বললাম= আমি?
মেয়েটা
বলল= যি একটু এদিকে আসেন।
খুশিতে
আমার অজ্ঞান হবার মত অবস্থা। উফফ... মেয়েটাও আমাকে ভালোবাসে। বুকটা টান করে আরিফের
দিকে তাকালাম, আরিফ কিছু বলেনা। মেয়েটার কাছে
গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কী?
মেয়েটা
বলল= কিভাবে বলব বুঝতে পারছিনা।
উফফ
মনে হয় মেয়েটাও আমাকে লাইক করে...(মনে মনে)
মেয়েটা=
অনেক দিন যাবত আপনাকে দেখি এখান দিয়ে আসা যাওয়া করেন। তাই ভাবছি আপনাকে কথাটা বলি।
কিন্তু কিভাবে বলব বুঝতে পারছিনা।
ওমাই
গড মেয়েটাও আমাকে লক্ষ করে। আমার প্রেমে ভাবুডুবু খাইতাছে। এখনই মনে হয় আই লাভ ইউ বলব
সে । ওফফ আমার কি ভাগ্য। ( মনে মনে)। আরিফের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ মুখ লাল হয়ে আছে,
লজ্জায় লাল হইছে নাকি হিংসায় জলতেছে বুঝা যায়না।
আমি
মেয়েটাকে বললাম= কোন সমস্যা নাই আপনি বলেন।
এই
থ্রিল বেশিক্ষন ধরে রাখা সম্ভব না, মেয়েটা যদি আর কিছুক্ষণ কাচুমাচু করে তাহলে আমি
নির্ঘাত অজ্ঞান হব।
মেয়েটা=
আপনি কি শিতলক্ষা হোস্টেলে থাকেন না?
আমি
= জি।
মেয়েটা
দেখি আমার ব্যাপারে সব খবর ই রাখে। হুম প্রেমে পরলে সবাই এমন খোজ খবর নেয়। আমি আরিফের
দিকে একটা ভাব নিয়ে আবারও তাকাই, আরিফ কোমরে দুই হাত দিয়ে মুখে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে
অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।
এবার
মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে যা বলে তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। = আপনাদের
হোস্টেলের দোতলার মামুনকে চিনেন? ও আমার বয়ফ্রেন্ড
কথাটা
শোনার পর আরিফ খোক করে হাসতে শুরু করে। আর আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকি। মেয়েটা আবারো
আওয়াজ দেয়= আপনি কি মামুনকে চিনেন?
এদিকে
হাসতেই থাকে। ওর হাসি দেখে আমার প্রচন্ড রাগ হয়। আমি মেয়েটাকে উত্তর দেই= নাহ, আমি
কোন মামুনরে চিনিনা।
সাথে
সাথে আরিফ বলে উঠে= আমি মামুনরে চিনি, আমরা সবাই মামুনকে চিনি, ইনফেক্ট আমরা তো বেস্ট
ফ্রেন্ড।
মেয়েটা=
ওহ, মামুনকে এই কাগজ টা দিবেন।
আরিফ
= ঠিক আছে, আমি দিয়ে দিব।, আপনে টেনশন করবেন না।
আমি
মামুনের হাত থেকে কাগজ টা ছিনিয়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলি। আর বলি= আমরা কোন কাগজ দিতে পারবনা।
কোন ক্লাসে পড় তুমি হ্যা?
মেয়েটা
= এইটে।
আমি
= ক্লাস এইটে পড় এখনি এতোকিছু আর কিছু দিন পরে না জানি কি কর। রাস্তা ঘাটে বড় দেরকে
সম্মান দেওনা। তুমি জানো আমি কোন ক্লাসে পড়ি?
আরিফ
উত্তর দেয়= তুই নাইনে পড়ছ।
আমি=
তরে জিগাই নাই, তুই বাম হাত ঢুকাছ কেন?
আবারো
মেয়েটাকে বলতে শুরু করি= তুমি যেমন ফালতু মেয়ে মামুনও তেমন ফালতু, শালা বরিশাইল্লা।
দোড় দে এখান থেকে।
মেয়েটা
কথা না বাড়িয়ে জোরে জোরে হাটতে শুরু করে।
আরিফ=
তোর খবর আছে, দেখিস মামুন তোর কি করে।
আমি=
দেখা যাইব কি করে।
আরিফ এসে পুরো হোস্টেল ছড়াইয়া দিছে “মামুনের গার্লফ্রেন্ড
আমাকে ছেকা দিছে। ” যদি কেউ জিজ্ঞেস করে কিভাবে ? তখন সে পুরো ইতিহাস বলতে শুরু করে।
লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে, কিন্তু সেটা আমার টেনশন না, আমার টেনশন অন্যটা। মামুনের
জিএফ কে এতো কিছু শুনাইলাম, মামুন কি আমাকে ছাড়বে। মামুন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে,
ফর্সা, দেখতে সুন্দর, বডিও হেব্বি, ডেইলি জিমে যায়। ডেইলি ফেইসবুকে স্টাইলিশ ফটো আপলোড
দেয়। ওর গার্লফ্রেন্ড থাকবো না তো কি আমার থাকবো। শালায় যদি আমারে একটা কিল দেয় মা
বলার পরে আমি আর গো বলতে পারবোনা। মাগো বলব দূরে থাক।
ঘটনার
দুই দিন পর মামুন আমার রুমে আসছে সাথে কয়েকটা ফ্রেন্ড নামের চামচা নিয়া আসছে। এই দুই
দিনে হয়ত জিএফের কাছ থেকে সব শুনছে। মেয়েটা হয়ত কান্নাকাটি কইরা আরো কয়েকটা কথা বাড়ায়া
বলছে। মামুন আরিফের বেডে বসে আমাকে জিজ্ঞেস করে = কিরে তুই আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে
নাকি বেয়াদবি করছস।
আমি=
শালার পো তর গার্লফ্রেন্ড আমার বড় না ছোট যে আমি ওর সাথে বেয়াদবি করমু।
সবাই
আমার সাহস দেখে অবাক।
মামুন=
তরে কিন্তু এখনি মাইরা ঝুলায়া দিমু।
আমি=
আমিও হল সুপার রে বলব, তুই এলাকার মেয়েদের সাথে প্রেম করছ। তর আব্বারে ফোন দিয়া বলব
তুই বরিশাল থেকে এখানে আসছস প্রেম করতে শালা বরিশাইল্লা।
এতখনে
সবাই বুঝতে পারছে আমার সাহসের খুটি কোন জাগায়। মামুন ও বুঝতে পারছে ব্যাপারটা। এই কারণে
ও একটু চুপসে গেছে।
মামুন=
তুই কিন্তু বেয়াদবি করতাছস।
আমি=
ভাগ শালা প্লে বয়।
মামুন=
তোর খবর আছে। সময় হইলেই সব বুঝায়া দিমু।
আমি
= চুপ শালা, হাতে পরছ না ঘড়ি আবার আমারেদেছ সময়ের জ্ঞান
মামুন=
বুঝবি বুঝবি বলতে বলতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আর
আমি মনে মনে বলতে থাকি= আল্লাহ আমারে এই গন্ডারের হাত থেকে বাচাও।
No comments:
Post a Comment
comment