ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Wednesday, November 18, 2020

হাবলু বফ

ভালোবাসার গল্প, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, valobashar golpo, premer golpo, love story

পাল করে একটা বফ পাইসিলাম মাশাল্লাহ! এত্ত বোকা, এত্ত বোকা, এত্ত বোকা যে, কেউ বিশ্বাসই করবে না সে যে এতো বোকা। ভাববে, সে ভাব ধরছে হয়তো। কিন্তু না। ঐ হাবলুটা সত্যিই অদ্ভুত।

এই ধরুন সেদিনের কথা।

আমি আর সে একটু একা একা ঘুরতে গিয়েছিলাম। তো পথিমধ্যে আমার দুই বান্ধবীর সাথে দেখা। তারা আমার বফকে চিনে অবশ্য। তাও তারা কথা বলতে বিব্রত বোধ করতে পারে ভেবে আমার উনাকে বললাম,
"আচ্ছা তুমি আস্তে আস্তে হেঁটে একটু সামনে এগোও, আমি এখনি কথাটা সেরে আসছি।"
দু'মিনিটের মধ্যেই আমাদের আলাপ শেষ হয়ে গেলো। বান্ধবীদের তাড়া আছে। তারা কোথায় যেন যাবে। তো বিদায় নিয়ে চলেও গেলো দু'জন। আমি পেছন ফিরে তাকালাম।

একি! আমার বফের কোনো পাত্তাই নেই। বেশ লম্বা রাস্তাটা। অথচ সে এই দীর্ঘ রাস্তার কোনোখানেই আমার জন্য দাঁড়িয়ে নেই। আমি অবাক হয়েই একটু এগোতে থাকলাম। ভাবলাম রাস্তার মোড়ে যদি পেয়ে যাই। কিন্তু না! সে সেখানেও নেই। আমি তো চিন্তায় পড়ে গেলাম। আরে সে গেলো কই? রাগ টাগ করলো নাকি?

হঠাৎ দেখি সে কল দিয়েছে। দ্রুত রিসিভ করলাম। তখনি উনি উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো,
"এই আমি এগোতে এগোতে তোমাদের কলেজের সামনে চলে এসেছি তো। তাও এখনো আসছো না কেন তুমি? ইশশ.. আর শুনো না? আমি এখনো হেঁটেই চলেছি। কিন্তু সামনে কলেজ রোডের পুকুরটা। পুকুরে হাঁটবো কেমনে? পানিতে তো সাঁতার কাটে। আচ্ছা, আমি কি সাঁতারে নেমে যাবো?"

আমি একমুহুর্তের জন্য পুরো নির্বাক হয়ে গেলাম। এটা কেমন প্রশ্ন? আজব! আমি চটজলদি ওকে সেখানেই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে দ্রুতগতিতে পা চালালাম।
সেখানেও গিয়ে দেখি সে নড়ে না, চড়ে না। চোখ লাল হয়ে আছে, জলে টলটল করছে। শ্বাসটাও ঠিকমতো ফেলছে না। স্ট্যাচু হয়ে থাকতে বলেছি বলে একদম সিমেন্টের তৈরি পাকা মূর্তির মতোই ফোনটা কানে নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে।
হাদা কোথাকার!
____________
আরেকদিনের কথা।
বফের সাথে প্রথম যেদিন রেস্টুরেন্টে দেখা করতে যাই, ঐদিন টুকটাক কথার পরই সে আমায় কী খাবো জিজ্ঞেস করলো। আমি বললাম,
"আরে। আমি কী বলবো? তুমিই যা ইচ্ছে অর্ডার দিয়ে দাও।"

সে আচ্ছা বলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে মেনু কার্ডটা গভীর মনোযোগে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। দু'মিনিটের মাথায়ই সে এক ওয়েটারকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
"ভাইয়া, আপনাদের মেনু কার্ডে কি "যা ইচ্ছে" আইটেমটা নেই?"
ওয়েটার হয়তো বুঝতে পারলো না। সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো,
"কী স্যার?"
"যা ইচ্ছে। যা ইচ্ছে। ঐ আইটেমটা নেই? আমার গার্লফ্রেন্ড খেতে চাচ্ছে।"

আমি তো হতবাক। একি রে বাবা! আমি তো বললাম ওর যা মন চায়, সেটাই যাতে অর্ডার দিয়ে নেয়। আর হাবলুটা ভেবেছে "যা ইচ্ছে" বলতে কোনো খাবারকেই বুঝিয়েছি। হায়রে রামছাগলটা!
পরে ওয়েটারের কাছে লজ্জা পাওয়ার আগে আমি নিজেই মেনু কার্ডটা কেড়ে নিয়ে দুটো চিকেন ফ্রাইড রাইসের অর্ডার দিয়ে নিলাম। সাথে দুই বোতল পানি। একটা খাবার জন্য। আর একটা আমার বফের মাথায় ঢালার জন্য! বেকুবের বেকুব একটা!
_______________

তো একদিন ওর এই বোকামার্কা কার্যকলাপের জন্যই রেগে গিয়ে বলেছিলাম,
"এই এখন যাও তো এখান থেকে! আমি আর একবারও তোমার মুখ দেখতে চাই না!"
ওমা। সেও তৎক্ষনাৎ ওখান থেকে চলে গেলো। কই একটু ঢংঢাং করে আমার রাগ ভাঙাবে; তা না করে ব্যাটা মাথা নাড়িয়ে বাধ্য ছেলের মতো রাস্তা মেপে নিলো?

ধুর! মন আর মেজাজ দুইটাই আরও বিগড়ে গেলো। মুড অফ করে একা একাই বিকেলে একটু হাঁটতে বের হলাম। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আমার কাঁধে টোকা দিলো। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে উঠলাম। কি একটা কার্টুনের মাস্ক কে যেন দাঁড়িয়ে আছে!

আমি চিৎকার করতে যাবো, তখনি আমার বফ আমায় ঝাকুনি দিয়ে বলে উঠলো,
"আরে আমি। আমি। ভয় পাচ্ছো কেন? তুমিই তো বলেছো যে তুমি আর আমার চেহারা দেখতে চাও না। সেজন্যই দেখো আমি মার্কেট থেকে ভালো আর সুন্দর দেখে মিকি মাউসের মুখোশ কিনে এনেছি। ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ। আমি সেই সাথে তোমার জন্যও একটা কিনে এনেছি। মিকি মাউসের গার্লফ্রেন্ড মিনি আছে না? ওটার মুখোশ। নাও নাও পড়ো।"

বলেই সে আরেকটা কার্টুনের মুখোশ বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। আমি কাঁদবো না হাসবো বুঝতে পারলাম না। পরে দাঁত কিড়মিড় মরে মুখোশটা ছুডে মেরে বললাম,
"নিকুচি করি তোর মুখোশের! বেক্কল কোথাকার! তুই যা এখান থেকে। যা!"

বলেই রাগে গটগট করে সামনে হাঁটা ধরলাম। আর সে হাবাগোবার মতো আবার নিজের মতো ফিরে যেতে লাগলো।
_______________

আজ বিকেলে হলো কী.. ও আর আমি একসাথে হাঁটছিলাম রাস্তায়। জলদি বাসায় ফিরতে হবে আমাকে। কিন্তু সে এতো আস্তে ধীরে হাটছিলো, যে মারাত্মক বিরক্ত লাগছিলো আমার। পরে রাগে বলেই ফেললাম,
"ইশ আমার ঠেলাগাড়ি রে! এভাবে ঠেলাগাড়ির মতো চলতে থাকলে হবে?"
সে আমায় উত্তর দেয়,
"আচ্ছা আমরা একটা নতুন গাড়ি কিনে নিবো।"

ওর জবাব শুনে আমি পুরো থ।
পরে ওকে বলছিলাম,
"উফফ একটু পানি দাও তো। পানি দাও। খাবো।"
ও করলো কী.. বোতলের মুখটা খুলে প্রায় সব পানি ফেলে দিয়ে একটুখানি পানি বাকি রেখে আমায় এগিয়ে দিলো খাওয়ার জন্য।
একটু খেতে চাইলাম যে, একটুই দিলো গর্দভটা!

আল্লাহ! একটু তো বুদ্ধিশুদ্ধি দিন ওকে।

ওর এসব বোকামির কেচ্ছা জীবনেও শেষ হবে না। উদাহরণ দিতে থাকলে দিতেই থাকবো, দিতেই থাকবো, দিতেই থাকবো।
উফফ! এই গর্দভটাকে নিয়ে যে কই যাই.. বুঝি না বাপু।
ইচ্ছে করে, বালিশে মাথা ঠুকতে ঠুকতেই সুইসাইড খেয়ে নিই।

.

লেখনীতেঃ Ifra Chowdhury

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *