ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Saturday, May 22, 2021

মেহেদি বাছাই।

 

love story, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প

অবন্তী তিন-চার কোম্পানির মেহেদি কেন আনতে বলেছিলো তা এখন বুঝতে পারছি। সত্যি বলতে ওর এই ব্যাপারটা আগে বুঝতে পারলে কখনোই এগুলো আনতাম না। যেকোনো এক কোম্পানির আনলে এতো যাচাই-বাছাই চলতো না। আমার বিড়বিড় করা দেখে অবন্তী বললো, 'একদম নড়াচড়া করবেন না, নড়লে একদম মুখে লাগিয়ে দিবো।'

হাই তুলতে তুলতে বললাম, 'আমার ঘুম পাচ্ছে, একটু ঘুমাইতে দাও প্লিজ।'

'এইতো হয়ে গেছে। আর একটু অপেক্ষা করেন না! এমন করছেন কেন?'

'দেখো, আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। যেকোনো টাইমে ঘুমাই পড়বো।'

'সমস্যা নাই, আমি জাগায় রাখবো। আর বেশিক্ষণ লাগবে না।'

'আর বেশিক্ষণ লাগবে না এইটা তুমি এক ঘন্টার চেয়ে বেশি বলে যাচ্ছ। আর কতক্ষণ!'

'একটু, একটু।' বলেই অবন্তী হাতে ফুঁ দিতে লাগলো। আমার দুই হাতে চার রকমের মেহেদি লাগিয়েছে অবন্তী। সে নাকি কিছুতেই পার্থক্য করতে পারছে না কোনটা বেশি ভালো হবে।

অবন্তী ফুঁ দিতে দিতে প্যাকেটের দিকে তাকালো। আমার হাত ছেড়ে দিয়ে প্যাকেটটা দুই হাত ধরে বললো, 'ওয়াও, আরো দুইটা আছে।'

এই দুইটা আছে শুনে মোটামুটি ডিপ্রেশনে পড়ে গেলাম। দুইটা যে আরো আছে তা আমি জানতাম। এতক্ষণ অনেক চেষ্টা করছিলাম প্যাকেটটা কোথাও ছুঁড়ে ফেলে দিতে। কিন্তু তা আর পারলাম কই? অবন্তী এই দেড় ঘন্টা যাবদ আমার সাথেই ছিলো। অবন্তী দেখলাম বেশ ভাবছে হাতে মেহেদি গুলো নিয়ে।

এরমাঝেই অবন্তীর মায়ের কল আসলো। অর্থাৎ শ্বাশুড়ি আম্মা। শান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। অন্তত বাঁচা গেছে। শ্বাশুড়ি আম্মাকে মনে মনে কিছুক্ষণ বকাঝকা করলাম। এতক্ষণ কল দিতে পারেননি? শ্বাশুড়ি আম্মা কল দিলে কম করে হলেও এক ঘন্টার বেশি কথা বলে। তাদের মা মেয়ের এতো কিসের কথা আমার মাথায় আসে না। এই রহস্য ভেদ করতে একদিন লুকিয়ে লুকিয়ে অবন্তীর কথা শুনছিলাম। যা শুনলাম, তা বলতে লজ্জা লাগছে। স্কিপ করছি।

আমার শান্তি যে অবন্তীর অশান্তি হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারিনি। অবন্তী শ্বাশুড়ি আম্মাকে বললেন, 'কি বলবা বলো, আমার হাতে অনেক কাজ। কথা বলতে পারবো না এখন, সরি।'

'আরে বলিস না! মফিজের বউয়ের বাচ্চা হয়েছে। আমাদের তো ভাত তরকারি দিতে হবে তাই না? কি দেয়া যায় বল তো!'

'এখন পারবো না কিছু বলতে, আমি অনেক বিজি আছি মেহেদি বাছাই নিয়ে। পরে কথা বলবো, রাখি এখন।'

অবন্তীর কথাবার্তা এতো কম হবে এ যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না। সে যাইহোক, অবন্তী মুচকি হেঁসে বললো, 'তোমায় অনেক ভালোবাসি, অনেক মানে অনেক। কতো অনেক জানো? বলা যাবে না।'

অবন্তীর এতো ভালোবাসা আমার যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা বেশ বুঝতেই পারছি। অবন্তীর কথার প্রতুত্তরে কিছুই বললাম না। মোবাইলে শালাবাবু আবুল কল দিয়েই যাচ্ছে। মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। আমার তাকানো দেখে অবন্তী তাড়াহুড়ো করে উঠে কল রিসিভ করলো।

'হ্যালো দুলাভাই, কই আপনি? বিরিয়ানির খাওয়ার কথা ছিলো না?'

'আবুল! আমি তোর আপু বলছি। আমার না একটা কাজে লাগবে তোকে, আসতে পারবি একটু?'

অবন্তীর মেহেদি দুইটা রয়ে গেছে বলে আরেকজনরে খুঁজতেছে। সে যাইহোক, আমি চুপচাপ বসে রইলাম।

'না আপু, আমার অনেক কাজ আছে। তুমি দুলাভাইরে পাঠায় দিয়ো, রাখলাম।'

অবন্তী নিরাশ হলো শালাবাবু আবুলের কথায়। আমার দিকে করুণভাবে, চোখ ছোট করে বললো, 'আমি একটা কথা বললে রাখবা প্লিজ!'

অবন্তীর এমন চেহারা দেখে সত্যি বলতে তার মায়ায় পড়ে গেলাম৷ এমন টাইমে যদি বলে কুকুরের সামনে দৌড়াতে, তাও পিছপা হবো না।
যাকগে, এসব আবেগি কথাবার্তা, কঠোর হতে হবে। এতক্ষণ হাতে মেহেদি নিয়ে বসে থাকা যায়? পাঁচমিনিট পরপর ধুয়েমুছে আবার দেয়াচ্ছে।

আমার চুপ থাকা দেখে অবন্তী চলে যাচ্ছিলো। কেমন জানি খারাপ লাগলো।
'কি করতে হবে বলো।'

অবন্তী আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। এই হাসি বেচাকেনা হলে আমি যে পৃথিবীর বৃহত্তম টাকাওয়ালা হতাম তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

'আচ্ছা শোনো না! আরো দুইটা মেহেদি আছে। আপনি এতো বেশি কেন আনতে গেলেন বলেন তো!'

'তা এখন কি করতে হবে?'

'আমার মাথায় একটা প্ল্যান আসছে। আপনার দুই পায়ে দুইটা দিয়ে ট্রাই করবো। বেশিক্ষণ লাগবে না, না করিয়েন না প্লিজ।'

এরমাঝে শালাবাবু আবুল আবার কল দিয়েছে।
'দুলাভাই, কই আপনি?'

'তোর দুলাভাইয়ের হাত-পায়ে মেহেদি, কি বলবি আমায় বল।'

'না মানে, ইয়ে, আপা দুলাভাইকে দাও না!'

'আরে বল না কি বলবি।'

'দুলাভাই থেকে টাকা নেয়ার কথা ছিলো। আমার কয়েকটা বান্ধবীকে বিকাশ করতে হবে তাই।'

অবন্তী মোবাইল রেখে দিয়ে আমার পায়ে মেহেদি লাগাতে যাবে এমন সময় বললো, 'আচ্ছা, পায়ে মেহেদি লাগানো বোধহয় ঠিক হবে না। এইটা বাদ। আচ্ছা হাতেই নাহয় দিয়ে দেখা যাবে।'

শালাবাবু কল আবার দিয়েছে। গতকাল বলেছিলো, 'দুলাভাই, আমার কিছু ভালো কাজে টাকা লাগবে।'

'তোমার ভালো কাজ কি শুনি তো!'

'আসলে দুলাভাই কি আর বলবো দুঃখের কথা। গফগুলোরে ঈদ সালামী দিতে হবে। হাত একদম খালি। আপনিই শেষ ভরসা।'

শালাবাবু কল দিয়ে যাচ্ছে এই কারণে।

এখন বাজে দুইটা বায়ান্ন। আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে, তাও অবন্তীর ভালোবাসায় জেগে আছি। একটু আগে চা দিতে বলায় অবন্তী বলেছিলো, 'এতো ভালোবাসা দিচ্ছি তাতে কুলচ্ছে না আপনার? আবার চা দিতে হবে?'

সে যাইহোক, অবন্তীর যাচাই-বাছাই এখনো শেষ হচ্ছে না। এই নিয়ে অনেকবার হাত ধুইলাম। একই মেহেদি বারবার দিচ্ছে। ছবি তুলে পার্থক্য বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছে, কবে ফল পায় তার আশায় আমি হাই তুলতে তুলতে জেগে আছি। ও নাহ! আমি জেগে আছি অবন্তীর ভালোবাসায়।

লেখা - মোহাম্মদ নুরুল আজিম চয়ন।

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *