ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Tuesday, May 18, 2021

মায়াজাল

love story, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প


আজ রাতুলের দ্বিতীয় বাসর রাত...

কিছুক্ষন আগেই নতুন বউ ঘরে তুলেছে রাতুল....মুখে তার তৃপ্তির হাসি....

এই রকম রোগা বউ নিয়ে সংসার করা যায় নাকি....না পারে ঘর সামলাতে না পারে বাচ্চা সামলাতে....বিছানায় সুখটা ও তাকে দিতে পারে না...উল্টা তাকে দেখা শুনা করার জন্য আলাদা লোক রাখতে হয়..মাস শেষে কারি কারি টাকা ঢালতে হয়....

বিতৃষ্নায় মুখটা তেতো হয়ে গেলো রাতুলের....নিজের ইমেজ খারাপ হওয়ার ভয়ে তালাক ও দিতে পারছে না অথৈ কে....তবে এমন বউ নিয়ে তো আর থাকা যায় না....তার ও কিছু চাহিদার বেপার আছে....দয়া করে অথৈকে বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে এটাই তো বেশি...

অথৈকে নিয়ে সময় নষ্ট করতে চাইলো না রাতুল....তার সমস্ত চিন্তা ভাবনায় এখন তার নতুন বিয়ে করা বউ...মেয়েটাকে দেখলেই তার চোখ দুটি চকচক করে ওঠে....হাসি যেন তার মুখ থেকে সরছেই না....

অথৈ হাসি মুখে কথা বলছে সবার সাথে....সবাই নতুন বউ দেখতে এসেছে...

বউ দেখার চেয়ে সবার তাকে দেখার আগ্রহ বেশি....ভাবতেও ঠোঁটের কোনায় তাচ্ছিল্লের হাসি চলে আসলো....

রাতুল উচ্ছাসের হাসি,মুখের সেই বিজয়ের হাসি যেন তাকে চিৎকার করে উপহাস করে বলছে,দেখ অভাগী,তোর ভালোবাসা ক্যান্সার এর কাছে কি নিদারুন ভাবে পরাজিত...এই লোকটাকে তুই এতো ভালোবেসেছিলি....যার চোখে তোর জন্য বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই নেই...বিয়ে করার আগে একবার জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলো না....

বাচ্চা দুটুও নতুন মা পেয়ে খুব খুশি..ওরা এখনো বুঝে না সৎ মা কি....

অথৈ এর চোখে মুখে বেদনার হাসি....রাতুলের প্রতি একটা চাপা অভিমান কাজ করছে....সে কি তার মরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলোনা..না হয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জানতো এই পাষান লোকটা শুধু তাকেই ভালোবাসে...

অথৈ আবার হাসলো,,,,তার এখন আমাকে নিয়ে ভাবার সময় আছে নাকি....আমি তো তার প্রয়োজনের প্রিয়জন ছিলাম...সংগোপনে একটি দীর্ঘশাস বেরিয়ে এলো অথৈ এর মন থেকে...

সবাই নানা কথা বলছে অথৈ এর সাথে...কেউ কেউ সান্তনা দিচ্ছে...অনেকেই অসন্তুষ্ট রাতুলের এ সিদ্ধান্তে....

রাতুলের খারাপ সময়ই তার পাশে ছিল অথৈ...চাকরি করে সংসারের বেশিরভাগ খরচ ই অথৈ চালাতো....এতিম চালচুলোহীন রাতুল কে বিয়ে করেছিল পরিবারের অমতে গিয়ে....দুই জনের পরিশ্রমেই তাদের দিন ঘুরে যেতে বেশি সময় লাগে নি...বিয়ের আট বছরের মাথায় ক্যান্সার ধরা পরে অথৈর..ছয় মাস হলো বিছানায় শয্যাশায়ী অথৈ....এই ছয় মাসেই যেন ভালোবাসা কর্পূরের মতো উড়ে গেলো তাদের জীবন থেকে...ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো,সামান্য ক্যান্সার এর সামনে টিকে থাকতে পারলো না...

ভাবনার মাঝেই অথৈর সামনে দাঁড়ালো রাতুল...হাসি হাসি মুখ করে বললো,দেখো তোমার দেখা শুনা করার জন্য আরেকজনকে নিয়ে এসেছি....নুড়ি তো তোমার খেয়াল ঠিক ভাবে রাখতে পারে না...আর বাচ্চাদেড় ও ঠিক থাকে যত্ন নেয়া হয়না...আজ থেকে সব দায়িত্ব থেকে তুমি মুক্ত....এখন শুধু রেস্ট করবা সারা দিন....

জবাবে অথৈ মুচকি হাসলো...রাতুল কত ভাবে ওকে নিয়ে...ইসসস...অযথাই লোকটাকে পাষান ভাবে ও....ঠোঁটের কোন আবার সেই তাচ্ছিল্লের হাসি....

রাতুল এগিয়ে গিয়ে অথৈয়ের অচল থেকে চাবির গোছাটা খুলে নিলো....

নতুন বউ এর হাতে তুলে দিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,তোমার সংসার তোমাকে বুঝিয়ে দিলাম..আজ থেকে সব দায়িত্ব তোমার...

অথৈ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতুলের দিকে...মুহূর্তেই ওকে শুন্য করে দিলো ওর ভালোবাসা....চোখের পানিও আজ বিদ্রোহ করছে ওর সাথে....কোনো ভাবেই তাদের বাইরে আনা যাচ্ছে না....বুকের ভিতর হালকা বেথা অনুভব হচ্ছে...একটু বিশ্রামের প্রয়জন....

ইশারায় নতুন বউকে কাছে ডাকলো অথৈ...মেয়েটার নাম জানা হলো না এখনো...জানতে ইচ্ছাও হচ্ছেনা খুব একটা...

মেয়েটা তার সমানে এসে বসলো...কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও খুব হাসি হাসি মুখ করেই হাতটা ধরলো অথৈ....

মুখের হাসি বজায় রেখেই বললো,ভালোবাসা অমূল্য সম্পদ...কোহিনুরের চেয়েও দামি...অপাত্রে কখনো দান করোনা...আপন মানুষ গুলোই সব সময় কলিজায় আঘাত করে...কারণ তাদের বসবাসই কলিজায়...তাই কাউকে কলিজায় ঠাই দিয়ে আঘাত করার সুজুক দিয়ো না....আঁচলে বেঁধে রেখো...সে আমার কখনোই ছিল না....কিছু সময়য়ের প্রয়োজন ছিলাম তার....তাই তুমি তাকে নিজের করে নিও....আমি তো স্বামী সোহাগী হতে পারলাম না,তুমি স্বামী সোহাগী হও.....আর পারলে তার মনে ভালোবাসার সৃষ্টি করো....সে হয়তো ভালোবাসার মানেই বোঝে না..

একনাগাড়ে কথা গুলো বলে কিছুক্ষন জোরে নিস্সাস নিলো অথৈ...

মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে...চোখের কোন হালকা পানি চিক চিক করছে...
মলিন হাসলো অথৈ....ছেলেমেয়ে দুটোকে তার হাতে তুলে দিয়ে বললো,ভালোবাসতে বলবো না....দুবেলা দুমুঠো ভাত দিলেই হবে....এতিম মনে করে একটু দেখে রেখো...

রাতুলের চোখে পানি চিক চিক করছে....অনুসূচনায় না লজ্জায় বোঝা যাচ্ছে না...কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে....

অথৈ নুড়ির সাহায্যে পাশের রুমে চলে গেলো...আজ থেকে এই রুমের মালিক অন্য কেউ...নিজের জিনিস পত্র গুলো একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা হচ্ছিলো খুব...নিজের ইচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দিলো না সে...কি দরকার মায়া বাড়িয়ে....
নুড়ি কে লাইট বন্ধ করে চলে যেতে বললো....আজ ও একা ঘুমাতে চায়...নুড়ি চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো....

মাঝ রাতে অথৈর রুমে প্রবেশ করলো রাতুল...চোখ দুটো ভয়ঙ্কর লাল হয়ে ফুলে আছে....অনেকটা রাগ নিয়েই অথৈকে বললো,তোমার সাহস কি করে হলো ঐরূম থেকে বের হওয়ার..আমাকে আরেকজনের হাতে তুলে দিতে একটুও কলিজা কপলোনা তোমার...কিভাবে পারলে এই ভাবে আমার উপর থেকে অধিকার ছেড়ে দিতে...রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে রাতুলের....

অথৈ অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ডিপ্রেশন এ চলে গিয়েছিলো....বার বার রাতুলকে বিয়ের কথা বলতো....খুব চুপচাপ হয়ে গেছিলো....তাই রাতুল তার এক ফ্রেন্ড কে দিয়ে এই বিয়ের নাটক করে....ও ভেবেছিলো বউ নিয়ে বাড়িতে আসলে হয়তো অথৈ রাগ করবে,অভিমান করবে...তেড়ে এসে কলার চেপে ধরবে...কিন্তু অথৈ এসব কিছুই করলো না...উল্টা ওকে আরেকজনের আঁচলে বেঁধে দিলো...

এতো চিৎকার করে বলার পরেও যখন অথৈয়ের কোনো হেলদোল হলো না তখন রাতুলের টনক নড়লো...তাড়াতাড়ি গিয়ে অথৈয়ের হাত চেপে ধরলো....কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ছিকটে দূরে এসে পড়লো....টলমল চোখে তার রাজ্যের অবিশ্সাস....অথৈ তাকে ছেড়ে চলে গেছে...তার অভিমানী তাকে এক করে দিয়ে গেছে...

কাপা কাপা পায়ে এসে হালকা করে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো অথৈকে....যেন আজ এই বুকেই তার শেষ সমাধি করে দিবে...

কিছুক্ষন চেপে ধরে রেখে চুমু খেলো তার ললাটে...আস্তে করে ডাকলো,,,,
~~ বউ.....এই বউ...তুই আমাকে ছেড়ে কেমনে যেতে পারিস....(বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরে)

~~ এই বউ....আমাকে ছেড়ে যাসনা প্লিজ....এই দেখ,আমার বুকটা কেমন শুন্য শুন্য লাগছে....
তুই তো আমার বুকে...তাহলে কিসের এই শুন্যতা....
আমি তোকে ছাড়া মরে যাবো বউ...(অস্থির হয়ে) তুই তো জানিস আমি এতিম...আমাকে আবার কেন একা করে দিচ্ছিস....

রাতুলের বিলাপে আশেপাশের সবাই এসে জরো হলো রুমের সামনে...সবার চোখেই পানি...

ডাক্তার এসে জানালো হার্ট এটাক এ মারা গেছে অথৈ....রাতুল যেন পাগল হয়ে গেছে অথৈকে হারিয়ে....বুকের ভিতর থেকে কিছুতেই সরাচ্ছে না তাকে....একরাশ অভিমান নিয়ে চলে গেলো অথৈ....

সমাপ্ত

#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_শফি
অনুগল্প....




No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *