ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Monday, December 4, 2017

আফসোস

valobashar golpo, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প
জানালা থেকে পর্দাটা সরাতেই সকােলর মিষ্টি রোদ জানালার ফাঁক দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা ষাটোর্ধ আনিস সাহেবের মুখের এসে পড়লো। রোদের ঝাপটা আলোয় ঘুম ভেঙ্গে গেলো আনিস সাহেবের। চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলেন তা প্রাণপ্রিয় স্ত্রী জাহানারা বেগম নিজ হাতে তৈরি এক কাপ টাটকা লাল চা নিয়ে মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আনিস সাহেব বালিশ থেকে মাথাটা উঠিয়ে বিছানায় বসলেন। তারপর স্ত্রী জাহানারা বেগমের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বলে উঠলেন আজকের সকালটা অনেক মিষ্টি ঠিক কুয়াশা মাখা সকালে সূর্যের রোদ টা যেমন মিষ্টি। স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে একটা অট্টহাসি দিয়ে উঠেন জাহানারা বেগম। চা পান করা শেষ হলে জাহানারা বেগম চায়ের কাপটা নিয়ে চলে যেতে চাইলে আনিস সাহেব হাতটা টেনে পাশে বসিয়ে নিলেন।তারপর স্ত্রী জাহানারা বেগমের হাতটা ধরে বলতে লাগলেন যাচ্ছো কেন,একটু বসো না গল্প করি। জাহানারা বেগম স্বামীর এমন কথা শুনে বলে উঠলেন অনেক কাজ পড়ে আছে বাহিরে।ছেলে বউদের একটু সাহায্য না করতে হবে তে। আনিস সাহেব জোর করে পাশে বসিয়ে রাখলেন। স্বামীর এমন জোরাজোরি তে জাহানারা বেগম ভালো করে পাশে বসলেন। তারপর দুজন বসে গল্প করতে শুরু করলেন।

আনিস সাহেব স্ত্রী কে বলতে লাগলেন আচ্ছা জাহানারা বিয়ের প্রথম রাতে আমি তোমাকে কি দিয়েছিলাম মনে আছে কি তোমার?
হুম মনে আছে তো,এইতো এখনো আমার হাতে তোমার সেদিনের দেয়া একজোড়া সোনার বালা। সেদিন যে পরিয়ে দিয়েছিলে তারপর থেকে আজো হাত থেকে এক মুহূর্তের জন্য খোলা হয়নি।
আনিস সাহেব আবার বলে উঠলেন আমি কি নিয়েছিলাম সেটা কি মনে আছে, বলতে পারবে কি?
স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে জাহানারা বেগম একটু লজ্জা পায়।তারপর বলে এসব কি বলো তুমি?
আনিস সাহেব আবারো বলে উঠে মনে করে একটু বলো না কি নিয়েছিলাম তোমার কাছে সেদিন।
জাহানারা বেগম বলে উঠলেন আমার মনে নেই,তবে কিছুই দেই নি সেদিন।
আনিস সাহেব বলে উঠলেন তাহলে আমি বলে দেই কি নিয়েছিলাম সেদিন?তুমি আমাকে সেদিন মুক্ত করেছিলে,বড় একটা ঋণী ছিলাম তোমার কাছে সেদিন। তুমি খুব সহজে সেদিন আমাকে মাফ করে দিয়েছিলে। আর সেদিন সে ঋণ টুকু শোধ করার ক্ষমতা আমার ছিলোনা। কি জানো, তোমার প্রাপ্য দেনমোহর এর টাকা।
স্বামীর এমন কথা শুনে জাহানারা বেগম বলে উঠে কি হয়েছে বলো তো হঠাৎ করেই এমন কথা বলছো কেন?
কিছুই হয়নি,মনে পড়ছে সেদিনের সেই কথাগুলো। আমরা সেই দিনের মানুষ গুলো সময়ের সাথে সাথে কেমন করে বুড়ো হয়ে গেলাম। আচ্ছা জাহানারা তোমার কি মনে আছে তোমাকে নিয়ে একবার সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সিনেমা দেখার সময় একটা ছেলে তোমাকে খুব বিরক্ত করছিলো আর আমি সেই ছেলেটাকে দিলাম কয়েকটা ঘুষি। ছেলেটার নাক ফেটে অঝোরে রক্ত বের হলো। আর আমরা পালিয়ে চলে আসলাম।

এবার জাহানারা বেগম বলে উড়লেন তোমার কি মনে আছে আমার বিয়ের কয়েকদিন পর তোমার ফুফাতো বোন আর তুমি মিলে আমার সাথে কি অভিনয়টা করেছিলে। আর আমি তা দেখে কাঁদতে কাঁদতে পাগলীর মতো হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর তুমি আমাকে কতভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলে।
হুম মনে আছে আমার। আচ্ছা জাহানারা একটা কাজ করি আজকে? কি কাজ বলো?
তুমি আজকে সেই পুরোনো জাহানারা হবে আর আমি হবো আনিস। তুমি আজকে একটা লাল লালা বেনারসি পড়বে, কপালে টিপ,হাতে মেহেদী, আর পায়ে আলতা পরবে।আর আমি একটা পাঞ্জাবী পরবো সাথে পায়জামা। তারপর হাটতে বের হবো দুজন।
জাহানারা বেগম হাসি দিয়ে উঠে, তারপর বলতে থাকে আমাদের কি সে বয়স আছে বলো। আমাদের ছেলেমেয়েরা কি বলবে, বাহিরের মানুষ কি বলবে। বলবে বুড়ো বয়সে আমাদের ভীমরথী ধরছে।
আনিস সাহেব বলে উঠলো মানুষের কথায় কি আসে যায়,আমি আছি তো তোমার সাথে। চলোনা বিকেল বেলা হাটতে বের হয়।
জাহানারা বেগম বলে উঠে না আমি পারবোনা এভাবে বের হতে। আমার অনেক লজ্জা করবে।
স্ত্রীর কথা শুনে আনিস সাহেব বলে আচ্ছা বের হবো না।এখন যাও আমার জন্য খাবার নিয়ে আসো,খুব খিদে লাগছে আমার।

জাহানারা বেগম বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে ঘরের ওপাশে পা দিতেই আনিস সাহেব জাহানারা বলে একটা ডাকি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। জাহানারা বেগম পিছনে ফিরে দেখে আনিস সাহেব কেমন জানি করছে।স্বামীর এমন দেখে জাহানারা বেগম একটা চিৎকার দেয়।জাহানারা বেগমের এমন চিৎকার শুনে বাড়ির সব মানুষ ছুটে আসে। আনিস সাহেব কে হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নিতে নিতে আনিস সাহেবের হাত পা শীতল হয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনিস সাহেব কে মৃত ঘোষণা করে। কান্নার রোল পড়ে যায় চারদিকে,জাহানারা বেগম পাগলীর মতো হয়ে যায়।বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তার স্বামী মারা গেছে। এইতো সে খাওয়ার জন্য ভাত আনতে বললো। স্বামীর সাথে কাটানো মুহূর্তের কথা গুলো বিলাপ করে বলতে লাগলো। বলতে বলতে একসময় নিজেই বোবার মতো চুপ হয়ে গেলো। চুপ করে চারদিকে তাকিয়ে দেখছেন কিন্তু কথা বলার জবান তার মুখ থেকে সেদিন হারিয়ে গেলো।

আজ আনিস সাহেবের মৃত্যু বার্ষিকী। অনেক আয়োজন করেছে তার ছেলেরা।চারদিকে কোরআন তিলওয়াত হচ্ছে,মোনাজাত হচ্ছে। আনিস সাহেবের মৃত্যুর পর থেকে জাহানারা বেগম প্রত্যেক টা সকাল না খেয়ে পার করে দেয়। আর আফসোস করতে থাকেন সেদিন স্বামীকে না খেতে দিতে পারার। সেদিনের পর প্রত্যেক টা মুহূর্ত স্বামীর স্মৃতি জড়িয়ে কাঁদতে থাকে জাহানারা বেগম। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে স্বামীর জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করে।মৃত স্বামীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে।


লেখা : Rabiul Islam Jibon

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *