ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Tuesday, December 5, 2017

ভালোবাসার জয়

valobashar golpo, ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প
ঐশী অপারেশন থিয়েটারে।ওর অপারেশন চলছে।জানিনা ঐশীকে জীবিত দেখতেপারব কিনা। দুই বৎসর যাবৎ মেয়েটা একটা রোগে ভূগছে। আজ হয় ওর জীবনের শেষ দিন তা না হলে ওর রোগের শেষ দিন।
আমি বিয়ের আগেই জানতাম ওর সমস্যার কথাটা। তবুও ওকে বিয়ে করেছি।

কারন ওকে আমি ভার্সিটিতে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেই দিনই ওর প্রেমে পরে গিয়েছিলাম। ও অসম্ভব প্রকার সুন্দরী না। তবে ওর চেহারায় একটা মায়া আছে। ওর মধ্যে আমি এক ধরনের পবিত্রতা দেখতে পেয়েছিলাম যার কারনে ভার্সিটিতে অনেক সুন্দরী মেয়ের প্রপোজ পাওয়ার পরও আমি ওকে ভালোবেসেছিলাম।

ও ছিলো ভার্সিটির ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর আমি তখন EEE ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ওকে মাঝেমধ্যে দেখতাম ভার্সিটির দহ্মিন পার্শ্বের শিমুল গাছটার নিচে বসে থাকত আর ডায়রীতে কি যেন লিখত। সবসময়ই চুপচাপ থাকত। আর মুখে এট চিলতে হাসি লেগেই থাকত।

প্রতিদিনই ফলো করতাম ওকে। একদিন ও ডায়রী লিখছিল। সেই সময় ওর ফোন আসে। ফোনটা রিছিভ করে ডায়রী গাছের নিচে রেখেই ও ওপাশে চলে যায় কথা বলতে। তখন ওর ডায়রীটা আমি চুরি করি।
ডায়েরি পরেই জানতে পারি ওর বাবা নেই। যখন ক্লাস সেভেন এ পড়ত তখন পরলোকগমন করেন।
তার কিছুদিন পর মাও মারা যায়। মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করে আর টিউশনি করেই নিজের এবংতার পড়াশোনার খরচ চালায়। আর মামির অপমান সেটাতো ফ্রি আছেই।

ওর ডায়েরি পড়ে সেদিন সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পেরেছিলাম হাসিমাখা একটা মায়াবী মুখের নিচে এতোটা কষ্ট লুকায়িত থাকতে পারে। সত্যিই মেয়েটা ভালো অভিনয় করতে পারে। তারপরের দিন একটা ছোট্ট ছেলের মাধ্যমে ডায়েরিটা ওক ফেরত পাঠাই। ওটা ফেরত পেয়ে ও এতোটাই খুশি হয়েছিল যা বলে বোঝানো যাবেনা।

ওর এই বাচ্চাদের আচরণটা আমাকে ওর প্রতি আরো দূর্বল করে ফেলে। তার ঠিক তিনদিন পর ওকে গিয়ে পরপোজ করে সেই শিমুল গাছ তলাতেই। ও আমাকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিল। কারণটা জিজ্ঞেস করায় ও বলেছিল সবার জীবনে ভালোবাসা মানায় না। কথাটার মর্ম সেদিন বুঝিনি। কিন্তুু না বুঝলেও আমি হাল ছাড়িনি।

বাবা মাকে গিয়ে ওর বিষয়টা বলি। বাবা আশ্বাস দেয় ওর মামা মামির সাথে কথা বলবে। বাবা পরের দিনই ওর মামার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। ওর মামা ওর সাথে কথা বলার জন্য দুইদিন সময় নেয়। এবং আমার নাম্বার বাবার কাছ থেকে রেখে দেয়। .
.
ঠিক দুইদিন পর আমার নাম্বারে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে। রিছিভ করতেই ওপাশের কন্ঠটি আমাকে শুধু বলে স্কয়ার হসপিটালের সামনে আসুন। আমি বুঝতে পারি এটা ঐশীর কন্ঠ। পাচ মিনিটের মধ্যে আমি স্কয়ার হসপিটালে চলে যাই। ঐশী আমাকে নিয়ে ডাক্তারের রুমে নিয়ে যায়। তারপর ডাক্তার আমাকে যাবলেছিল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ওর ব্রেইন টিউমার।

তখন ওকে নিয়ে একটা পার্কে যাই ও তখন আমাকে বলে
>শুনলেন তো ডাক্তার কি বলল?
>হুুম। (আমি)
>এখনো আমাকে বিয়ে করতে চান?
>হ্যাঁ। চাই
>কেন? (বিষ্ময়ের ইমু)
>ভালোবাসি তাই।
>কেন আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে আপনার জীবনটা জরাচ্ছেন?
>বললাম না ভালোবাসি তাই।
>দেখুন আপনি অন্য কাওকে বিয়ে করুন। সুখী হবেন।
>সেই সুখের কি দাম যেখানে তুমি নেই?
>আমি কয়দিন বাচবো তার নিশ্চয়তা নেই। আর তাছাড়া আমার এই রোগটা অনেক আগে থেকেই। মামা মামি আমার রোগটি সম্পর্কে জানে না।
>তুমি আমাকে ভালোবাস?
>মানে কি?
>মানে তুমি কি আমাকে ভালোবাস?
>আমার জীবনের নিশ্চয়তা নেই এখানে ভালোবেসে কি হবে?
>ভালোবাস কি না সেটা বল
>হ্যাঁ ভালোবাসি।
>তাহলে বিয়ে হবে।
>কিন্তুু ...
>কোন কিন্তুু নয়.।

তারপর পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হয় আমাদের। বাসর ঘরে ও আমাকে বলেছিল আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন তাই হয়তো আমি দুইদিনের মেহমান। এতো ভালোবাসা আমার কপালে সইবে না। আমি শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়েছিলাম। ওই হাসির রহস্য ও বুঝতে পারে নি

বিয়ের দ্বিতীয় দিনের মাথাতেই ও মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়। তারপর হাসপাতালে নিয়ে আসি আর আজ ওর অপারেশন। অপারেশনের জন্য সাত লাখ টাকা দরকার। কিন্তুু এতো টাকা কোথায় পাব? বাবা মার পহ্মেও একদিনে এতো টাকা ম্যানেজ করা সম্ভব নয়।

অবশেষে আমার ফেবারিট নিশান গাড়িটা নাম মাত্র দামে বিক্রি করে দিলাম।গাড়ি জীবনে অনেক কিনতে পারব কিন্তুু ভালোবাসার মানুষ কোথায় পাব? হোকনা একটু হ্মতি। ডাক্তারের ডাকে স্তম্ভিত ফিরে পেলাম।
অবশেষে ডাক্তার হাসিমুখে আমাকে বলল অপারেশন সাকসেস।

আমি যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম। আজ দুইমাস পর ঐশী পুরো সুস্থ। আমরা ঘুরতে এসেছি ক্যম্পাসের দহ্মিন পাশের শিমুল গাছটার তলায়।


বি:দ্রঃ কিছু গল্পের নাম হয় না।(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *