ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Wednesday, September 4, 2019

জাস্ট ফ্রেন্ড

love story, valobashar golpo, ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালবাসার গল্প
মিতাকে অনেক চেষ্টা করেও ভালবাসার কথা জানাতে না পেরে আমার বন্ধু বনির কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম । গতকাল ওদের প্রেমের এক বছর পালিত হল। খবরটা শুনে বনিকে সাইজ করার জন্য রাতুলকে ভাড়া করলাম। রাতুল এখন মিতার বান্ধুবীর প্রেমিক, ওদের প্রেমের কত বছর চলে জানি না। আমার জন্য সাহায্য করবে বলে মিতাকে নিজের জন্য পটানোর অপররাধে বনিকে ফেসবুকে ব্লক মেরেছিলাম। এর মধ্যে বনি একদিন বাসায় এসে হাজির। বলল, ওর নাকি একটা শ্যালিকা আছে, অনেক সুন্দরী দেখতে, তাকে আমার সাথে সিস্টেম করে দিবে। কথাটা শুনে আবেগে প্রায় কেঁদে দিচ্ছিলাম, কিন্তু পরক্ষণের মনে পড়ল মিতার কোন বোন নেই। পরে বনি আমার ভুল ভেঙে দিয়ে বলল, মিতার কাজিন এটা, আমেরিকা থাকে। ওদের বিয়েতে নাকি আসবে, তখন আমার সাথে সিস্টেম করে দিবে। আমি আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম, আমেরিকা গিয়ে কী কী করব, কোথায় কোথায় যাব সব কিছুর প্ল্যানও করে ফেললাম! আমার দেহটা ছিল দেশে, কিন্তু মনটা সব সময় পড়ে থাকত আমেরিকায়! সে সাথে বনির বিয়েতে কী পরব, কীভাবে ঐ মেয়ের সাথে ভাব জমাবো এগুলোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম! ইউটিউবে সার্চ দিয়ে মেয়ে পটানোর অনেক টিউটোরিয়ালও দেখে নিলাম। কথা বলার টপিক্স নিয়ে যেন ঝামেলা না হয় সে জন্য আমেরিকার জনপ্রিয় সব সিনেমা আর সিরিজ দেখে ফেললাম। সবার আগে শেষ করলাম 'গেম অফ থ্রোন্স'। সেখান থেকে মেয়ে পটে গেলে কী কী করব সেগুলোও শিখে নিলাম।
বনি বিয়ে করেছে দুই সাপ্তাহ হয়ে গেছে, আমাকে আজকে একজন ফোন করে খবর টা দিলো! মেনে নিতে পারলাম না, এভাবে লূকিয়ে কেন বিয়ে করল! ওর বিয়ে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ছিল, সব ভেঙে গেল! বনিকে ফোন দিয়ে ঝাড়ি মারা শুরু করতেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, অনেক তাড়াহুড়োর মধ্যে ওদের বিয়েটা হয়েছে, তাই জানাতে পারেনি। মিতা কেমন আছে জানতে চাইলে আমাকে বলল সুসংবাদ আছে। আমি ভাবলাম ব্যাটা মনে হয় বিয়ের আগেই মিতাকে মা বানিয়ে ফেলেছে! পরে আমার ভুল ভেঙে দিয়ে বলল, ও মিতাকে বিয়ে করেনি, বিয়ে করেছে আমার জন্য যে কাজিনকে ঠিক করেছিল তাকে! খবরটা শুনে মাথায় সাদা আকাশ ভেঙে পড়ল, পরে বুঝতে পারলাম ওরা আকাশ না, এক গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখান থেকে এক কাক পটি করে দিয়েছে! আমার স্বপ্নের কী দোষ ছিল জানি না, কেন আগুনের গানের মত বার বার আমার স্বপ্ন আর মন ভেঙে যায় বুঝতে পারছি না।
তবুও খুশির সংবাদ হল মিতা এখন ফ্রি আছে। ভাবলাম এইবার আর কাউকে বলব না, নিজের কাজ নিজেই করতে হবে। মিতাকে নক দিয়ে জানতে পারলাম, বনির সাথে প্রেম হবার আগে মিতারও নাকি আমার প্রতি ভাললাগা ছিল, কিন্তু বনির বন্ধু হবার কারনে আমাকে নাকি সে আর বিশ্বাস করতে পারবে না, আর মানতেও পারবে না! আরেকবার বনির লুচ্চামির বলি হলাম আমি।
অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে এবার মেয়ে দেখার দায়িত্ব দিলাম আমার পরিবারকে। বললাম, মেয়ে দেখতে, পছন্দ হলেই আমি বিয়ে করে ফেলব। মা তার ছোট বেলার এক বান্ধুবীর মেয়েকে নাকি দেখেছে আমার জন্য, আজকে সে মেয়ের সাথে আমার দেখা করতে যাওয়ার কথা। মেয়ের ছবি দেখেই প্রেমে পড়ে গেলাম, স্লো মোশনে কয়েকটা সিনও কল্পনা করে ফেললাম! মেয়ের সাথে দেখা করলাম এক রেস্তরাঁয়। খাওয়া দাওয়া শেষে এক হাজার টাকা বিল দেয়ার পর মেয়েটি আমাকে বলল, তার নাকি বয়ফ্রেন্ড আছে। তবে যেহেতু পরিবার থেকে আমাকে দেখেছে, তাই না করতে পারেনি।
তবে মেয়েটি আমাকে আশার বাণীও শোনালো। তার নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে মাঝে মাঝেই ঝগড়া হয়, ঝগড়া হলে আমি যেন তাকে সময় দেই, আর ঝগড়া বেশি হলে ব্রেক আপ নিশ্চিত, আর ব্রেক আপ হলে আমার একটা চান্স আছে! এত লোভনীয় প্রস্তাব শুনে মানা করতে পারলাম না। এত ভাল এবং সৎ মেয়ে এই জামানায় পাওয়া খুব দুষ্কর। মাঝে মাঝেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা হলে মেয়েটা আমাকে নক দেয়, আমি দেখা করি, তাকে সাহস দেই!
এদিকে ফেসবুকে আজকে হুট করে একটা মেয়ে নক করল। আমি কেমন আছি জানতে চাইল। এই ধরণের মেয়েরা ছেলেদের দুইটা কারণে নিজে থেকে নক দেয়। হয় সে ছেলেটাকে পছন্দ করে, অথবা বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা হয়েছে! মেয়েটার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেই বুঝতে পারলাম, তার বয়ফ্রেন্ড তাকে একদমই ভালবাসে না। মেয়েটার জন্য অনেক মায়া হল, কত কষ্ট মেয়েটার! ইচ্ছে করছে আমার অব্যবহৃত ভালবাসাগুলো ওকে দিয়ে দেয়, কিন্তু আমাকে শক্ত হতে হবে, আর স্বপ্ন দেখা যাবে না।
এই মেয়েটাও তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা হলে আমার সাথে যোগাযোগ করে, মাঝে মাঝে লূকিয়ে দেখাও করে, কেউ পরিচয় জানতে চাইলে আমাকে কাজিন বলে চালিয়ে দেয়। বয়ফ্রেন্ড থেকে এটেনশন কম পেলেই আমাকে নক দেয়, এই ধরণের মেয়েদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের পাশাপাশি এটেনশনও সমানভাবে লাগে। একটু এটেনশনের অভাবে এরা মারাও যেতে পারে। আমি আমার চাপা মারার দক্ষতা দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দেই, তার মত সুন্দরী মেয়েকে যে ছেলে কষ্ট দেয়, সে মানুষ না, গাধা একটা।
মুখস্ত কিছু রুপের প্রশংসা করি যেগুলো ইউটিউব দেখে শিখেছিলাম! তাকে বুঝিয়ে দেই, আমি তার বয়ফ্রেন্ড হলে তাকে কতটা কেয়ার করতাম। মেয়েটা অনেক আফসস করে কেন আমি তার বয়ফ্রেন্ড হলাম না, যদিও আমি ভাল মতই জানি, আমার সাথে প্রেম হলেও সে আমার মতই অন্য কারও কাছে গিয়ে একই কথা বলবে। তাছাড়া আমার এখন প্রেম করার মত সময় নেই, কারন এই মেয়ে সহ আরও দুইজন অসহায় মেয়েকে আমার সাহস জোগাতে হয় প্রতিদিন। আমি একজন মাত্র মানুষ, এতকিছু একা ম্যানেজ করা এত সহজ নয়।
নিজেকে একজন সমাজকর্মী মনে হয় মাঝে মাঝে।
এদিকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, আমার জন্য আরও মেয়ে দেখতে চাইছে! প্রেম-বিয়ে আমাকে আর টানে না। জাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে আমার পার্ফরম্যান্স ভাল, জীবনে এমন কিছু পেলাম যেটাতে আমি ভাল। নিজের জন্য গার্লফ্রেন্ড ম্যানেজ করতে না পারলেও অন্যের গার্লফ্রেন্ড ম্যানেজ করার গুণ আমার মনে হয় ঈশ্বর প্রদত্ত ! ভাবছি জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দেব।
 জাস্ট ফ্রেন্ড

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *