ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Sunday, December 18, 2016

ভালোবাসার জয়

ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প,
মুনিয়া জাহান (রাত্রি) বাবা মায়ের আদরের একমাত্র মেয়ে,ডাঃ মাহাবুব আলম রাত্রির বাবা শহরের সব থেকে বড় ডাক্তারদের একজন,মিসেস ফিরোজা আক্তার রাত্রির মা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষিকা, রাত্রি সেই স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী, রাত্রি ছোট থেকেই খুব শান্ত কিন্তু খুব মিশুক,রাত্রির মায়াবী চেহারা আর মিস্টি হাঁসি যেনো বিধাতার এক অসাধারণ সৃস্টি,রাত্রির মায়াবি মুখের মিস্টি হাঁসির দিকে তাকালে শুধু মাত্র ছেলেরাই না যে কোন মানুষই তার প্রেমে পড়ে যাবে,,,, ""

,
রাত্রির জীবনটা খুব সাধাসিধে অন্য আর সব ছেলে মেয়ের মতো না,বাবা মা এক মিনিটের জন্য ও চোঁখের আরাল হতে দেই না রাত্রিকে,মায়ের সাথে স্কুল কোচিং এ যাওয়া আবার মায়ের সাথেই বাসাই ফেরা ব্যাস বাসার বাইরে বলতে এতটুকুই,অবশ্য মাঝে মাঝে বাবা মায়ের সাথে বাইরে ঘুরতে বের হবার সুযোগ হয় তবে সে সুযোগ খুব কমই মেলে,,,,""
,
গল্পের বই পড়তে খুব ভালো লাগে রাত্রির, প্রতিদিন বিকালে বারান্দায় বসে গল্পের বই পড়ে সে,আর যেদিন মন খারাপ থাকে সেদিন ছাদে যেয়ে আকাশ দেখে আকাশ দেখতে খুব ভালোবাসে রাত্রি,বিশাল আকাশের দিকে তাকালেই নাকি তার মন ভালো হয়ে যায়,,,,""
,
বারান্দায় চেয়ারে বসে গল্পের বই পড়ছে রাত্রি হঠাৎ তার চোঁখ পড়লো নিচে দাঁড়িয়ে একটি ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে রাত্রির চোঁখ পড়ার সাথে সাথে সেই ছেলেটি অন্য দিকে তাকালো,রাত্রি আবার বই পরতে থাকে কিছুক্ষন পরে তাকিয়ে দেখে আবার সেই ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে আছে,তাড়াতাড়ি বাসার ভিতরে চলে আসে রাত্রি,,রাত্রি ভাবতে থাকে কে ছেলেটি কেনো এই ভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো,,,,"" ?
,
পরের দিন ঠিক একই সময়ে রাত্রি অন্য রুম থেকে তাকিয়ে দেখে আজ ও সেই ছেলেটি একভাবে তাকিয়ে আছে তার বাসার বারান্দার দিকে সে বসে থাকা সেই চেয়ারের দিকে,ছেলেটির চোঁখে মুখে হারিয়ে ফেলা কোন কিছু খুজে না পাওয়ার ভাব স্পট,,,,সন্ধ্যা
হয়ে গেলো তার পর ছেলেটি চলে গেলো, ততোক্ষন রাত্রি বোঝার চেস্টা করছিলো আসলে কি খুজছিলো ছেলেটা,,,,?আবার পরেরদিন ঠিক একই সময়ে ছেলেটি একই যায়গা দাঁড়িয়ে,পাশের রুম থেকে রাত্রি মাঝে মাঝে দেখছে এইভাবে কেটে গেলো কিছুদিন,মাঝে কয়েকদিন প্রচুর ঝর বৃস্টি তার ভিতর ও প্রতিদিন ছেলেটি ঠিক সময় মতোই আসছে,আর ব্যাপারটা খেয়াল ও করে রাত্রি কিন্তু তার এতে কিছু আশে যায় না,,,,""
,
আজ রাত্রির মন খারাপ বিকালে ছাদে উঠলো আকাশ দেখতে,আকাশ দেখতে দেখতে কিছুক্ষন পড় দেখতে পেলো কে যেনো তার দিকে তাকিয়ে আছে,হ্যা সেই ছেলেটাই তো ? রাত্রিকে দেখে ছেলেটির চোঁখ আনন্দে ছল ছল করে উঠলো অনেক দিনের হারানো কিছু ফিরে পেয়েছে মনে হয় সে, ব্যাপারটা বুঝতে পারলো রাত্রি ও এর ভিতর রাত্রিকে তার আম্মু ডাক দিতেই রাত্রি নেমে গেলো ছাদ থেকে,,
নিচে নেমে ভাবতে থাকে কে ছেলেটি ? কি চাই তার কাছে ? কেনইবা তার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করে ?
এই রকম ভাবতে ভাবতে আর পাশের রুম থেকে ছেলেটির রোজ বিকালে তার বাসার দিক তাকিয়ে থাকা দেখতে দেখতে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন,,,,,,,রাত্রির ভিতর জানার আগ্রহ হলো আসলে ছেলেটি কে কি চাই তার কাছে ? আস্তে আস্তে ছেলেটির প্রতি মায়া বাড়তে থাকে রাত্রির সিদ্ধান্ত নিলো ছেলেটির সাথে কথা বলার,,ছেলেটি প্রতিদিনের মতো বিকালে নিচে দাঁড়ানো, রাত্রি বারান্দা থেকে একটি কাগজ নিচে ফেললো কাগজটি তুলে নিলো ছেলেটি তাতে লেখা ছিলো - ( *****-****** ) এইটা কিন্তু আমার না, আমার আম্মুর নাম্বার,ঠিক কাল বিকাল ৫ টায় কল দিবেন আগে ও না পরে ও না,,,,,,,,,
ঠিক বিকাল ৫টা রাত্রির হাতে মোবাইল নিচে দাঁড়ানো ছেলেটি কল দিলো,,,,,,
,
~ রাত্রি - হ্যালো কে,,?
~ আমি আকাশ - ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি,,,, ""
~ রাত্রি - কি চান আপনি আমার কাছে,, ? কি খুজেন রোজ আমার বাসার দিকে তাকিয়ে ?
~ আকাশ - অনেক কিছু ,,,,""
~ রাত্রি - মানে,, ?
~ আকাশ আপনার মায়াবি মুখের ওই মিস্টি হাঁসিটা,, দিবেন আমাকে,,,,"" ?
~ রাত্রি - কিভাবে,, ?
~ আকাশ - প্রতিদিন একবার করে দেখতে দিলেই হবে আপনার ওই হাঁসিটা,,,,""
~ রাত্রি - আচ্ছা দিতে পারি তবে,, ?
~ আকাশ -কি,, ?
~ রাত্রি - আমাকে ও আকাশ দেখতে দিতে হবে প্রতিদিন, আকাশ দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে,,
~ আকাশ - আপনি তো অনেক দুষ্টু,, ঠিক আছে দিবো,,,,""
,
এরপর থেকে প্রতিদিন তাদের দূর থেকে দুজন দুজনকে দেখা আর মোবাইলে ৩/৪ মিনিট কথা বলা চলতে থাকে আর এতেই তারা অনেক খুশি,,,,
এই ভাবে প্রথমে ভালোলাগা তার পর দুজন দুজন কে ভালোবেসে ফেলে,,,,,,,
,
বেশকিছুদিন রাত্রি খুব অসুস্থ খুব মাথা ব্যথা খাওয়া দাওয়া পড়ালেখা সব বন্ধ,অসুস্থতা বেড়েই চলছে,দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে রাত্রি,খুব চিন্তায় পরে গেলো রাত্রির মা বাবা,রাত্রিকে নিজের ক্লিনিকে নিয়ে টেস্ট করায় রাত্রির বাবা ডাঃ মাহাবুব আলম, দুই দিন পড় রিপোর্ট দিবে অনেক ভয় হচ্ছে ডাঃ মাহাবুবের খারাপ কিছু হবার সন্দেহ ও,,রিপোর্ট দিলো রিপোর্ট হাতে নিয়ে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছে ডাঃমাহাবুব দেখার সাহস পাচ্ছে না,ভুলে গেছে তিনি শহরের সব থেকে বড় ডাক্তারদের একজন এরকম হাজারো রিপোর্ট তিনি আগে দেখেছে,হাত কাপছে এর ভিতরই রিপোর্টটি দেখলো ডাঃমাহাবুব নিজের চোঁখকে ও সে বিশ্বাস করতে পারছে না,বার বার দেখছে কিন্তু ফল একই তার আদরের একমাত্র সন্তানের ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঢলে পরবে তার মেয়ে ,,,,""
,
অনেক ভেঙে পরেছে রাত্রির বাবা মা,বাবা মায়ের এই রকম দেখে রাত্রি ও বুঝে ফেলেছে অনেক খারাপ কিছু হয়েছে তার,,,,
দিন দিন অসুস্থতা আরো বাড়তে থাকে রাত্রির,নিজেদের কোন শান্তনা দেয়ার ভাষা যানা নেই তাদের,,,,,
কিছুদিন আকাশের সাথে কোন কথা নেই রাত্রির,রাত্রি যোগাযোগ করে না ইচ্ছা করে যদি তার এই খারাপ অসুখের কথা শুনে চলে যাই আকাশ ? আকাশকে যে অনেক ভালোবাসি আমি ? গেলে যাবে আর কিছুদিন পর তো আমি এই পৃথীব সবাই কে ছেরে চলে যাবো এইভেবেই আকাশকে কল দিলো রাত্রি,,,,""
,
~ আকাশ - রাত্রি কেমন আছো তুমি,,? কি হয়েছে তোমার,, ? প্রতিদিন তোমার বাসার সামনে যেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করি তুমি আসো না,, ? সারাদিন তোমার কল এর অপেক্ষায় থাকি কল ও দাও না তুমি,, ? কেমন আছো,,,, ""?
~ রাত্রি - জানো আকাশ আমার না ক্যান্সার হয়েছে আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না,আর এই কথা শোনার পরে ভয়ে আর তোমার সাথে যোগাযোগ করি নাই যদি তুমি চলে যাও আমাকে ছেরে, অনেক ভালোবাসি তো তোমায়,,
~ আকাশ -(কেঁদে দিয়ে) তুমি কি করে ভাবলা আমি তোমাকে ছেরে চলে যাবো ? আমি আমার থেকে ও বেশি ভালোবাসি তোমাকে তোমার ওই হাঁসিকে "
~ রাত্রি - জানি,, আমার ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দাও আমাকে,,,,""
দুজনই সমানে কেঁদে চলেছে কেউই কোন কথা বলছে না,,,,,,,
,
আচ্ছা রাত্রির বাবা তুমি তো কতো মানুষের চিকিৎসা করে ভালো করে তুলেছো,কোন ভাবেই কি আমাদের সব টাকা পয়সা সব সম্পত্তির বিনিময়ে ও কি আমাদের আদরের মেয়েকে বাচানো সম্ভব না,, ?
রাত্রির বাবা - দেখো একটা উপায় আছে,,,,""
~ কি,,?
~ না আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এতো বড় ঝুকি নিতে পারব না,,,,""
~ কি এমন উপায়,, ?
~ অপারেশন একমাত্র শেষ ভরশা যদি ঠিক ভাবে করা যায় তাহলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে আমাদের মেয়ে আর না হলে অপারেশন টেবিলেই মারা যাবে,,,,,,,
,
অনেক ভেবে অপারেশনের সিদ্ধান্তই নিলো রাত্রির বাবা মা,,,,,,,
,
কাল রাত্রির অপারেশন, শরীলটা ও অনেক খারাপ রাত্রির, তার পর ও বাবা মাকে বললো তার জীবনের শেষ ইচ্ছা তার ভালোবাসার আকাশের কথা,কিছুই বলার ছিলোনা রাত্রির বাবা মায়ের শুধু শুনলেন,,,,""
,
আজ বিকালে আকাশ আর রাত্রির দেখা হবে প্রথম বার আবার শেষ বার ও হতে পারে,দুজন দুজন কে খুব কাছ থেকে এই প্রথম দেখলো, আকাশের স্বপ্ন পুরন হলো সে কাছ থেকে দেখতে পেলো তার সেই মায়াবি চেহারার মানুষটির মিস্টি হাঁসি,আর রাত্রির ও ইচ্ছা পুরন হলো ভালোবাসার মানুষকে কাছ থেকে দেখার, দুজন অনেকক্ষন একে অপরের হাত ধরে বসে আছে চুপচাপ কেউ কোন কথা বলতে পারছে না,দুজনের চোখেই জল,তারা জানে না আর কোন দিন তাদের দেখা হবে কিনা, কথা হবে নিকি,তার পর ও হয়তো ভালোবাসা বেঁচে থাকবে আজীবন,,,,""
,
আজ রাত্রির অপারেশন, রাত্রির বাবা অপারেশন রুমে আগেই চলে গেছে জীবনের সব থেকে কঠিন কাজটি আজ করতে যাচ্ছে ডাঃমাহাবুব নিজের মেয়ের অপারেশন , রাত্রি শেষ বারের মতো প্রিয় মাকে জরিয়ে ধরেছে,জানে না রাত্রির মা আর কোন দিন এই ভাবে কোলে তুলে নিতে পারবে কিনা নিজের মেয়েকে,আকাশ যেই রাত্রির দিকে সারাদিন সারাক্ষন ও তাকিয়ে থাকতে পারে সেই ছেলেটি আজ তার ভালোবাসার মানুষের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না,অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাত্রিকে,,,, ""
,
অপারেশন শেষ বাইরে বেড়িয়ে কেঁদে দিলো রাত্রির বাবা ডাঃমাহাবুব এই কান্না আনন্দের কান্না এই কান্না জয়ী হবার কান্না,অপারেশন সফল হয়েছে আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে যাবে রাত্রি,জয় হয়েছে ভালোবাসার বেঁচে থাকুক সারাজীবন সত্যিকারের ভালোবাসা গুলা

written by
#Mahedi_hasan

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *