ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Friday, December 23, 2016

ভালবাসার গল্প- দৃষ্টান্ত

ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প
একদিন কোচিং এ যাচ্ছিলাম।যাওয়ার সময় একটা মেয়েকে দেখলাম। মেয়েটাকে আলাদা ভাবে মার্ক করার কারন ছিল মেয়েটার অদ্ভুত চুলের স্টাইল। মেয়েটা তার চুল দিয়ে মুখের একপাশের প্রায় পুরোটা ঢেকে রাখার অদম্য প্রয়াসে ব্যস্ত ছিল। হাটতে হাটতে কিছুটা কাছে যাওয়ায় বুঝতে পেরেছিলাম মেয়েটার এমন অস্বাভাবিক আচরনের কারন। মেয়েটার মুখের একপাশ পোড়া ছিল। এত কাছে থেকে কখনোই দগ্ধ কাউকে আমি দেখিনি। সেদিন রীতিমতো ভয় পেয়ে কিছুটা পাশে সরে গিয়েছিলাম।
.
পরে অবশ্য মাঝে মাঝেই যখন মনে পড়তো তখন খুবই খারাপ লাগতো নিজের কাছেই ওইদিন এর এমন ব্যবহার এর জন্য। প্রায় এক সপ্তাহ পরে আবারো খুবই কাকতালীয় ভাবে ওই মেয়ের সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। আমি সাধারনত অনেক লেট করেই কোচিং এ যেতাম। সেদিন কি মনে করে যেন একটু তাড়াতাড়িই গিয়েছিলাম। আমার কোচিং আগের ব্যাচ ছুটি হওয়ার পরেই শুরু হবে।তো বসে আছি ওয়েটিং রুম এ। হঠাত করেই দেখি সেই মেয়েটা ওই ক্লাস শেষে রুম থেকে বের হচ্ছে। তারমানে মেয়েটা এই কোচিং এই পড়ে। ভাবলাম আজ যেয়ে অন্তত কথা বলে আসি। হঠাতই দেখলাম আমার সাথে একই ব্যাচ ক্লাস করে তানহা নামের একটা মেয়ে ওই মেয়েটার সাথে কথা বলছে। ভাবলাম তানহার সাথেই আগে কথা বলে ওই মেয়েটার সম্পর্কে জেনে নিলে ভাল হবে।
.
ক্লাসে জিজ্ঞাসা করতেই তানহা বললো মেয়েটার নাম রাইসা। দুই বছর আগে একটা দুর্ঘটনায় ওর চেহারার অর্ধেক অংশ পুড়ে যায়। শরীর এর অনেক খানি অংশ ও পুড়ে গেছে। ওর কষ্ট বোঝার কোনো ক্ষমতা আমার ছিলনা। কেননা আমার কখনোই এমন কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি। কিন্তু তবুও ওর এই অবস্থার জন্য অনেকটা খারাপ আমার সেদিন লেগেছিল। হয়তো প্রথম দিন এর ব্যবহার আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল তাই।
.
তারপর অনেকদিন আর ওই মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়নি। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আমি রাইসার কথা। ভাগ্যক্রমে আবারো একদিন আমার ওই মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে যায়। স্বভাবতই আমি লেট করে কোচিং এ যাচ্ছিলাম ওইদিনও। রাইসাকে একটা ছেলে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। সেই হাত ধরার মধ্যে কি ছিল আমি জানিনা কিন্তু মেয়েটাকে প্রথমদিন যেভাবে ভীত হয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে দেখেছিলাম আজ তার ব্যতিক্রম দেখলাম। মেয়েটা আজ আর দশটা মেয়ের মতোই খুবই স্বাভাবিক ভাবে হেটে যাচ্ছিল। যেন পৃথিবীর কারো দৃষ্টিতেই আজ তার কিছুই যায় আসেনা। আর ছেলেটাও কত যত্ন করে মেয়েটার হাত ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার মেয়েটাকে ওইদিন এইভাবে দেখে জানিনা কেন খুবই ভাল লেগেছিল। পরে আবারো কৌতুহল থেকে তানহাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছিলাম ওই ছেলেটা রাইসার বয়ফ্রেন্ড। আমিও এমনটাই ধারনা করেছিলাম। রাইসার সাথে ওই দুর্ঘটনা হওয়ার পরে রাইসাকে অনেক
কাছের কিছু মানুষকে হারাতে হয়েছিল। কিন্তু এই ছেলেটি কখনোই ওর হাত ছাড়েনি। আরও শক্ত করে ধরে রাইসাকে নতুন করে বাচতে শিখিয়েছিল। এখনোছেড়ে যায়নি রাইসার হাত।
.
সত্যিই তো ভালবাসা গুলোতো এমনি হয়। যাকে ভালবাসা যায় তাকে সব পরিস্থিতিতেই ভালবাসা যায়।
এটা অনেকদিন আগের কথা। কয়েকদিন আগেই মেয়েটাকে আবারো দেখি। তাই আজকে লিখতে বসলাম। এমন ভালবাসা সবার ভাগ্যেতো থাকেনা। তাই ভাবলাম সবাই একটু জানুক আর একটু শিখুকও।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
.
Written By :
Kaniz Koli (Pagli)

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *