ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Tuesday, December 20, 2016

চোখের প্রেমে পড়েছি

ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প,
গভীর রাত। আনুমানিক তখন ৩ টা বেজেছে। প্রিয়ন্তীদের বাসার সবাই তখন ঘুমে অচেতন। শুধু জেগে আছে প্রিয়ন্তীর একজোড়া ছলছল চোখ। ঘরের সবার কোলাহল থেমে গিয়েছে আগেই।তবু দরজাটা খুলে একবারের মতো ঘরের পরিবেশটা দেখে নিলো প্রিয়ন্তী। এরপরেই খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা ব্যাগটা বের করে চুপচাপ দরজা খুলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় প্রিয়ন্তী।অতঃপর ভোর পাচটার চট্টগ্রাম টু ঢাকা-এর ট্রেনে উঠে পড়ে প্রিয়ন্তী।

ট্রেনটা ঝকঝক করে নিজগতিতে চলছে। প্রিয়ন্তী মাঝদিকের একটা বগিতে উঠে চাদর গায়ে দিয়ে বসে থাকে। হঠাত প্রিয়ন্তীর ফোনের রিং বাজলো। ফোনটা রিসিভ করলো ও। ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলতে লাগলো-
>বের হয়েছেন?
>হ্যা।
>ট্রেন কখন ছাড়লো?
>১৫ মিনিট আগে।আপনি এখনো সজাগ যে?
>নামাজ পড়তে উঠেছিলাম তারপর আর ঘুমানো হয়নি।
>আচ্ছা রাখি এখন।
>ওকে।পৌঁছে মিস দিবেন।আর একদম টেনশন নিবেন না।আমি কখনো আপনার ক্ষতি চাইনা।
>হু।
প্রিয়ন্তী ফোনটা কেটে দেয়।
.
.
সকাল হয়ে এসেছে। রাতে মেয়েটা একদম ঘুমায় নি।কেঁদেকেটে একাকার করে ফেলেছে সব।ঘুম পাচ্ছেনা প্রিয়ন্তীর।

3 month ago- কলেজে এডমিট হয় প্রিয়ন্তী।প্রিয়ন্তী শুধু যে লেখাপড়া বা চেহারায় ভালো ছিলো তেমনটি না।অনেক ভালো গান জানতো প্রিয়ন্তী,সেই সাথে নাচও। নতুন ভর্তি হলেও প্রিয়ন্তী ওর ফ্রেন্ডদের রিকোয়েস্টে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান ও নাচে অংশগ্রহণ করে। রাতে খুব জমজমাটভাবে কলেজের অনুষ্ঠান চলতে থাকে। প্রিয়ন্তীকে অনুষ্ঠান শেষে কেউ একজন ডাক দেয়।
>এইযে শুনুন।
>জ্বী।
>আমি অভি।এই এলাকায় আসলাম অনুষ্ঠান দেখতে। দারুণ নাচেন আপনি।অসাধারণ। (অভি)
>জ্বী,থ্যাংকস। (প্রিয়ন্তী)
>আপনার নামটা? (অভি)
>প্রিয়ন্তী।
>নামটাও দারুণ, আর আপনি মানুষটাও দারুণ। (অভি)
অভির কথা শুনে প্রিয়ন্তী লজ্জা পায়। মেয়েটি এর আগে কখনো ছেলেদের সামনে দাঁড়িয়ে এত কথা বলেনি।তার ওপর নিজের এতো প্রশংসা শুনে মোমের মতো গলে যায় ওর নরম মন।
>আচ্ছা ভাইয়া আমি এখন আসি। (প্রিয়ন্তী)
>আপনার ফোন নম্বরটা দেওয়া যাবে মিস? (অভি)
>আমি ফোন ব্যবহার করিনা। (প্রিয়ন্তী)
>ওহ আচ্ছা।এটা রেখে দাও।এতে আমার নম্বর আছে।
এই বলে অভি নিজের অফিসিয়াল একটা কার্ড তুলে দেয় প্রিয়ন্তীকে।
.
অভি যথেষ্ট স্মার্ট ছেলে।আর ভালো জব করে সেটা তার কার্ড দেখে কিছুটা বুঝতে পারে প্রিয়ন্তী। হয়তো প্রিয়ন্তীরও অভিকে অনেকটা ভালো লেগে যায়। ২দিন পরে প্রিয়ন্তী অভিকে ছোট্ট একটা মিস দেয়। অভি সাথেসাথেই কল ব্যাক করে।
>মিস প্রিয়ন্তী,এতদিন পর মনে পড়লো আমাকে? (অভি)
>কিভাবে বুঝলেন মিসকলটা আমি দিয়েছি! (প্রিয়ন্তী অবাক হয়)
>বুঝি তো!মনের টান থাকলেই বোঝা যায় সব।তো কেমন আছো মিস? (অভি)
>ভালো.....
এভাবে শুরু হয় অভি ও প্রিয়ন্তীর প্রেম।
.
অভি মোটামুটি ভালো একটা জব করতো।আর প্রিয়ন্তীকে প্রায়ই ভালো রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াতে পারতো।তাছাড়া সম্পর্কের ২দিনের পরেই প্রিয়ন্তীকে ফোন গিফট করেছিলো। প্রিয়ন্তী হুট করে লাইফে এতকিছু পেয়ে সবকিছু স্বপ্নের মতো ভাবতে লাগলো। চলতে থাকলো দিন।এগোতে থাকলো ওদের সম্পর্ক।
.
এদিকে প্রিয়ন্তী ফেসবুকে নিয়মিত থাকতো।আর নিজের ফিলিংস গুলো সবার সাথে শেয়ার করতো।
মাঝেমাঝে পরিচিত কয়েকজনার সাথে টুকটাক কথা বলতো। একদিন অচেনা আকাশ নামে কেউ একজন রিকু পাঠালো প্রিয়ন্তীকে। প্রিয়ন্তী কি ভেবে যেনো এক্সেপ্ট করে রিকুটা। এরপর নিজেই মেসেজ করে ছেলেটিকে।
>কে আপনি?
>আমি অর্ণব।আপনার প্রোফাইলে চোখের পিকটা দেখে ভালো লাগলো তাই রিকু দিলাম।
>ওহ আচ্ছা।
>একটা কথা জানতে পারি?
>জ্বী,বলুন।
>চোখটা কি আপনার?
>হ্যা।কেনো?
>কিছুনা।এমনি।
>ওকে।বায়।
.
এরপর মাঝেমাঝে দুজনার ভিতর টুকটাক কথা হত। অভি অবশ্য নিজের ব্যস্ততার কারণে প্রিয়ন্তীর ফেসবুক চালানোর ব্যাপারে তেমন নিষেধ করতোনা। একসময় ওদের ভিতরেও খুনসুটি ঝগড়া চলতে থাকে।অভি কারণে অকারণে প্রিয়ন্তীর দোষ খুঁজতো। প্রিয়ন্তী অভির ভিতরে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করে।
.
.
ইতোমধ্যে প্রিয়ন্তীর পরিবার অভির সাথে প্রিয়ন্তীর সম্পর্কের ব্যাপারে জেনে যায়। প্রথমে কিছুটা রাগারাগি করলেও পরবর্তীতে অভির পারিবারিক অবস্থা ভালো জেনে রাজী হয় ওদের সম্পর্কে।কিন্তু একদিন ফোনে
>আজ তোমার একটু সময় হবে? (প্রিয়ন্তী)
>না আজ অনেক ব্যস্ত থাকবো।কিছু বলবে? (অভি)
>থাক।এমনি।
অভির ব্যস্ততার কথা শুনে প্রিয়ন্তী একাই মার্কেটে চলে যায়। কিন্তু সেখানে হঠাত একটা জিনিস দেখে থমকে দাড়ায় প্রিয়ন্তী।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা প্রিয়ন্তী। অভিকে সেখানে আরেকটা মেয়ের সাথে শপিং করতে দেখে ও।হাত ধরে চলছিলো দুজনেই।
.
প্রিয়ন্তী দূর থেকেই কল দেয় অভিকে।
>কোথায় তুমি?
>অফিসের কাজে অনেক ব্যস্ত। পরে কল দিবো। এই বলে অভি কল কেটে দেয়। প্রিয়ন্তী যা বোঝার বুঝে ফেলে।
.
এদিকে বাড়িতে প্রিয়ন্তীকে জিজ্ঞাসা করে অভিকে বিয়ে করবে কিনা। নয়তো আরেকটা ভালো পাত্র আছে।তার সাথে বিয়ে ঠিক করবে। প্রিয়ন্তী অভিকে বিয়ে করবেনা জানায়।মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ে ও। রাতে ফেসবুকে অচেনা আকাশ(অর্ণব) নক করে প্রিয়ন্তীকে।
>কেমন আছেন?
>(No reply)
>Busy?
>(No reply)
>মন খারাপ?
প্রিয়ন্তী রোজ অর্ণবের মেসেজ সিন করে রেখে দেয়।
.
প্রিয়ন্তীর পরিবার প্রিয়ন্তীর আরেক জায়গায় বিয়ে ঠিক করে ফেলে প্রায়। প্রিয়ন্তীর কিছু বলার থাকেনা।
নম্বরটা অনেক আগেই পাল্টে ফেলেছে। অভি প্রিয়ন্তীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলো দুয়েকবার।এখন আর তাও করেনা।
.
এদিকে প্রথম ভালোবাসায় হেরে গিয়ে প্রিয়ন্তী সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ের আগে সুইসাইড করার। কিছু অবুঝ মেয়েরা হয়তো এমনই হয়।আবেগকে সহজে আটকে রাখতে জানেনা এরা।একটু কিছু হলেই নিজের ক্ষতি করার কথা ভাবে। শেষবারের মতো ফেসবুকে ঢুকে প্রিয়ন্তী।
হঠাত ইচ্ছা হলো অচেনা আকাশ আইডির ছেলেটাকে শেষবারের মতো মেসেজ দেয়ার। ছেলেটা অধিকাংশ সময়ই অনলাইনে থাকতো।আর টুকটাক কবিতা বা গল্প লিখতো।
>চলে যাচ্ছি চিরদিনের জন্য। ভালো থাকবেন। (প্রিয়ন্তী)
>একদম চুপ। উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলবেন না।আপনার নম্বরটা দিন কুইক। (অর্ণব)
>সম্ভব না। (প্রিয়ন্তী)
>প্লিজ একবার।জাস্ট কিছু কথা বলবো।
প্রিয়ন্তী নম্বর দেয়। অর্ণব সাথেসাথে কল করে প্রিয়ন্তীকে।
>কি হয়েছে আপনার?
>বাসা থেকে বিয়ে ঠিক।
>আর বয়ফ্রেন্ড?
>অন্যের সাথে সম্পর্ক করেছে।
>দেখেন আপনাকে চিনিনা,জানিনা কিন্তু আপনার খারাপ কিছু হবে সেটাও ভাবতে পারছিনা।আপনি এভাবে জীবনটাকে নষ্ট করে দিতে পারেন না।আপনি বাসায় বুঝান।কিংবা বিয়েটা করে ফেলুন। (অর্ণব)
>সম্ভব না।এই লোকটাও ভালোনা।টাকাপয়সা দেখে বিয়ে দিচ্ছে। (প্রিয়ন্তী)
>ওহ তবে আপনি ঢাকায় চলে আসেন। পরে আপনার পরিবারকে আমি বুঝাবো।আমায় বিশ্বাস করতে পারেন প্লিজ। (অর্ণব)
>অসম্ভব ব্যাপার। (প্রিয়ন্তী)
>অসম্ভব বলে পৃথিবীতে কোনোকিছু নেই।আমি আপনার ব্যাপারটা দেখবো।ভোরের ট্রেনে চলে আসুন। (অর্ণব)
এরপরেই প্রিয়ন্তী সুযোগ বুঝে রাতের আধারে চলে যায় বাড়ি থেকে।
.
-----
ট্রেন থেমে যায়। আর প্রিয়ন্তীর ঘুমটাও হঠাত ভেঙে যায়। পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে প্রিয়ন্তী ঘুমিয়ে পড়েছিলো তা নিজেও বুঝতে পারেনি। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ৭টা মিসকল অর্ণবের নম্বর থেকে।
কলব্যাক করে প্রিয়ন্তী।
>কোথায় আপনি? (অর্ণব)
>ট্রেনে।এসে গিয়েছি সম্ভবত। (প্রিয়ন্তী)
>নামুন।আমি স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি।
>ওকে।
প্রিয়ন্তী ভয়েভয়ে ট্রেন থেকে নামে। একটা ছেলে এগিয়ে আসে প্রিয়ন্তীর দিকে।
>চলুন ম্যাডাম।আপনার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি ১ঘন্টা থেকে।
>আপনি অর্ণব?
>হ্যা।কোনো সন্দেহ আছে?
>না মানে আমায় চিনলেন কিভাবে? (প্রিয়ন্তী)
>চোখ দেখে। (অর্ণব)
>চোখ দেখে মানুষ চেনা যায়? (প্রিয়ন্তী)
>আমিতো চিনলাম।আমি যে তোমার চোখের প্রেমে পড়েছি।আমায় বিশ্বাস করতে পারো প্রিয়ন্তী।কখনো ঠকাবোনা তোমাকে। (অর্ণব)
>এসব কি বলছেন আপনি? (প্রিয়ন্তী)
>অল্পদিনের পরিচয়ে তোমায় অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।আর সেটা তোমার চোখ দেখে।কি হয়েছে অতীতে সব ভুলে যাও।তোমার মনের কর্ণারে একটু ঠাই কি দেওয়া যাবেনা আমাকে? (অর্ণব) কেঁদে ফেলে প্রিয়ন্তী।
>এই মেয়ে!কাঁদছো কেনো হ্যা?মাকে বলে এসেছি কালো,ফরসা দেখার বিষয় না।বাসায় আজ সুন্দর চোখওয়ালী বৌ নিয়ে ফিরবো। তাড়াতাড়ি চলোতো এখন।সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য । অর্ণবের দুষ্টু কথা আর হাসি দেখে প্রিয়ন্তী কিছু বলার ভাষা খুজে পায়না। আত্মহত্যার থেকে নতুনভাবে জীবন গড়ে তোলা ওর কাছে কেনো যেন প্রিয়ন্তীর কাছে সেই মুহূর্তে খুব ভালো মনে হচ্ছিলো। তাই অবাক দৃষ্টিতে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের দিকে প্রিয়ন্তী। হয়তো অর্ণবের চোখে দেখতে পেয়েছিলো নিজের পরবর্তী সুখের ঠিকানা ।

 বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চোখের অধিকারী ১০জন নারী

Contact Us

Name

Email *

Message *