ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।

Friday, December 23, 2016

তোমাকে ভূলে যাওয়া যে অসম্ভব

ভালবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালোবাসার গল্প
রাত ২.৫৭ মিনিট। চোখে ঘুম নেই ঠিকই কিন্তু পানির অভাব নেই। অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়িতেছে চোখ থেকে। অপেক্ষা শুধু একটা মিসড্ কলের। সেই অপেক্ষা আজ দুবছর ধরে। কিন্তু এই অপেক্ষা কবে শেষ হবে কে জানে। হয়তবা পৃথিবী ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আমি জানি তুমি ফিরে আসবে মৌমি।আমার ভালোবাসা যে সত্যিকারের ভালো বাসা। এ ভালোবাসা কখন ও হারাতে পারে না।
.
এসব বলতেছি আর অঝোর ধারায় পানি পড়তেছে চোখ থেকে। দুবছর ধরে প্রতি রাত কাটে কেদে কেদে। তোমার কি একটুও মনে হয় না আমার কথা মৌমি।
দুবছরের সম্পর্কটা তুমি দু মিনিটে শেষ করে কেন দিলে।
.
আমি রাব্বি। মাস্টার্সে পড়ছি । বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা মারা যার ছোট বেলায়। মা একটা কলেজের শিক্ষীকা।
.
ইন্টারমিডিয়েট দিয়ে যখন অনার্সে ভতি হই তখন দিন খুব ভালো যাচ্ছিল। প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, ফেইসবুক চালানো, পড়াশোনা করা,ঘুমানো। এসব করে কেঠে যাচ্ছিল দিন। বন্ধুদের প্রেম করে কষ্ট পেতে দেখেছি। তাই রিলেশনে জড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও ভয়ে জড়াতাম না বন্ধুদের নেশা করা, রাত জেগে কাঁদা এসব দেখে।
.
১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম। ২য় বর্ষে ক্লাস করতে গেলাম প্রথম দিন। একটা মেয়েকে দেখে চমকে গেলাম।জানি না কেন তবে, চোখ সরাতে পারছিলাম না। মেয়েটা অন্য দিকে তাকিয়ে কারো সাথে কথা বলতেছিল। আর আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে । সেই ক্ষুদ্র সময়ে অসম্ভব এক মায়া জন্মেছিল, জানি না কেন।
.
বন্ধুদের মাধ্যমে তার সম্পর্কে কিছু জানতে পারলাম। নাম মৌমি। অনার্স ১ম বর্ষ। সহজ সরল। একা থাকে সবসময়।
.
ইচ্ছে করেই মেয়েটার সাথে একদিন কথা বললাম।
-- কেমন আছেন? (আমি)
-- ভালো। আপনি?( মৌমি)
-- ভালো।
-- আপনাকে....
-- চিনতে পার নি তাই না?
-- হুম
-- আমি রাব্বি। অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছি, একাউন্টিং
-- ভালো
.
এটাই ছিল তার সাথে আমার প্রথম দিনের কথাবার্তা এর পর প্রায় সময় আমাদের কথা হত। ভালো মন্দ এতটুকুই। একসময় ফোন নাম্বার নিলাম তার ।মাঝে মাঝে কল দিয়ে কথাও বলতাম। দিন দিন মেয়েটার প্রতি আমার মায়া বাড়তে লাগল। বন্ধুদের রিলে শনের কথা মনে হলে এসব থেকে দূরে থাকব এটাই বলতাম। যত মৌমির সাথে আমার কথা হচ্ছে ততই ও আমাকে কাছে টানছে। মনে মনে বলতাম বন্ধুদের রিলেশন সাকসেসফুল হয় নাই এতে যে আমার টা হবে না তাতো নয়।
.
একসময় বুঝতে পারলাম যে মৌমি কে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। মৌমিকে ছাড়া আমার
নিশ্বাস নেয়া অসম্ভব। মৌমি যে মিশে গেছে
আমার নিঃশ্বাসে।
.
মৌমি কে মনের কথাটা বলব এসব চিন্তা মাথায় আসলে বন্ধুগুলোর অবস্থা চোখের সামনে ভেসে উঠত। কিন্তু কিছুই করার ছিল না মৌমি কে যে
আমি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
.
একদিন মৌমি কে কল করে একটা জায়গায় আসতে বলি। ভালোবাসার কথাটা বলব। অনেক ভেবেছি কিন্তু না বলে পারব না এটাই মনে হল। তাই বলার জন্য কাল পার্কে আসতে বললাম।
.
পরের দিন পার্কে গেলাম।কিছুক্ষণ পর মৌমি আসল। বলে দিলাম মনের কথাটা। না করল তবে হ্যা ও বলে নি। বলেছিল ভেবে বলবে। দুই দিন পর মৌমি হ্যা সূচক উত্তর দিল। সেদিন পৃথিবীর সবচেয়ে খুশি বোধ হয় আমিই হয়েছিলাম।
.
তারপর নিয়মিত কথা বলা, দেখা করা, ফেইসবুকে চ্যাটিং করা এসব চলতে থাকল। প্রতিদিন রাত ১ টার পর কথা হত আমাদের। অনেকদিন কেটে গেলে এভাবে। আমার প্রতি অনেক বেশি কেয়ারিং করত। কোনকিছুতে উল্টাপাল্টা হলে বকত্। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই চলছিল দিন।বাসায় মাকে মৌমির কথা বলেও ছিলাম। মা বলেছিল বাবা তোমার বুঝার বয়স হয়েছে তুমি যা ভালো বুঝ তাই কর।
.
কিন্তু হঠাৎ করে বদলে যেতে লাগল মৌমি। আগের মতো কথাও হতো না। কল দিলে ধরত না। ম্যাসেজ করলে রিপ্লে করত না। কোন সময় কল ধরলে বলত মা পাশে ছিল, ভাইয়া পাশে ছিল, মোবাইল বন্ধ ও থাকত। হঠাৎ করে মৌমির বদলে যাওয়া আমাকে অনেক ভেঙ্গে দিল। মনে হতে লাগল বন্ধুদের আন সাকসেসফুল রিলেশনের কথা। তাহলে কি আমার জীবনে এসব ঘটতে যাচ্ছে। হ্যা সত্যি সত্যি এসব ঘটে গেল। কি থেকে কি হল?, কেমনে হল?, কেন হল? সবকিছুই আমার বোঝার বাইরে ছিল।
.
জানতে পারলাম মৌমি নতুন রিলেশনে গেছে। কিন্তু কেন আমার সাথে এমন করল? এসব আমি কিছুই জানি না। শুধু এটা জানি যে মৌমি কে মন থেকে ভালোবাসি। ওকে যে আমি সত্যিকারের ভালোবাসি। কয়েকদিন পর শুনলাম মৌমি নাকি পালিয়ে বিয়ে করেছে। একেবারে ভেঙ্গে পড়লাম আমি। বারবার একই প্রশ্ন আসে মনে কেন এমন হল?
.
হঠাৎ করে ফোনের টোন বেজে উঠল,বাস্তবে ফিরলাম ফোনের স্ক্রিনে জ্বল ভরা চোখে দেখলাম লেখা Moumi. স্ক্রিনে উপরের কোনে তাকালাম রাত ৩.১৩ মিনিট। কলটা রিসিভ করলাম। কান্না ভরা কন্ঠে শুনতে পেলাম মৌমির একটা কথা "ক্ষমা করে দিও আমায় রাব্বি"।
.
কলটা গেল। ব্যাক করলাম মোবাইল অফ। সকালে এক বন্ধু ফোন করে জানাল,,
.
-- রাব্বি শুনলাম মৌমি নাকি আত্বহত্যা করছে।ওর স্বামী নাকি ওকে খুব অত্যাচার করত, নেশা করত, মারধোর করত তাকে।তাই নাকি ও আত্বহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। (রাহি/আমার বন্ধু)
-- চুপ করে আছি আমি কোন কথা বলতে পারতেছি না। গলাটা শুকিয়ে গেছে। কথা বলতে পারতেছি না।
.
এরপর কি হলো মনে নেই। চোখ মেলে দেখলাম আমার বিছানায় আছি পাশে আম্মু, ডাক্তার আংকেল, রাহি দাড়িয়ে আছে। মৌমির কথা মনে হতেই চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগল। আম্মু শুধু চোখটা মুছে দিল। দেখতে পেলাম আম্মুর চোখে পানি। কিছু না বলেই আম্মু আমার রুম থেকে চলে গেল।
.
নিজেকে শক্ত করে তুললাম মায়ের দিকে চেয়ে। এক মাত্র আমি ছাড়া মায়ের যে আর কেহ নেই। আম্মুর পছন্দমতো একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি। সুখে আছি কিন্তু প্রতিরাতে সেই কলের অপেক্ষায় থাকি এখনও। কুঁড়িয়ে কুঁড়িয়ে খাচ্ছে মৌমির ভালোবাসা আমাকে।
.
তুমি চলে গেলে মৌমি, রেখে গেলে আমার জন্য অসীম যন্ত্রনা। আমি যে এখন ও তোমার একটা কলের অপেক্ষায় থাকি। জানি তুমি আসবে না তবুও। তোমাকে ভূলে যাওয়া যে অসম্ভব মৌমি। প্রথম ভালো বাসা যে সহজে ভূলা যায় না।

লিখা:-
 Salman Ahmed (রাব্বি)

No comments:

Post a Comment

comment

Contact Us

Name

Email *

Message *