![]() |
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন। ক্লাসে ঢুকেই চোখে পড়ল একদল সিনিয়র, তাদের মাঝে একজন আলাদা। ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকা, চোখ জোড়া চশমার আড়ালে হলেও কী এক অপার্থিব আভা—শান্ত, নির্ভার। নাম শুনলাম—তাহসিনা আপু। চতুর্থ বর্ষে পড়েন, অনার্সের শেষ সেমিস্টার।
আমি, আদনান, সদ্য ভর্তি হওয়া এক কাঁচা ফার্স্ট ইয়ার ছাত্র। মফস্বল শহর থেকে আসা, ভেতরে ভেতরে অনেকটা লাজুক।
প্রথম পরিচয় হলো লাইব্রেরিতে। আমি গুলিয়ে ফেলেছিলাম কোন শেলফে কোন বই থাকে। আপুই এগিয়ে এসে হেসে বললেন,
— “তুমি নতুন না?”
আমি লাজুকভাবে মাথা নাড়ালাম।
— “আমি তাহসিনা, চাইলে আমি হেল্প করতে পারি।”
সেই এক লাইনেই শুরু।
বন্ধুত্ব, অভ্যস্ততা, ভালোবাসা...
দিনগুলো চলতে থাকল। প্রতি শুক্রবারে আমাদের দেখা হতো ক্যাম্পাসের ঝাউতলা চত্বরে। আপু চা খেতেন লাল কাপের ভেতর, আমি খেতাম গ্রিন টি—মুখ গম্ভীর করে, যেন খুব ম্যাচিউরড।
তিনি আমাকে শেখালেন সময় ব্যবস্থাপনা, শেখালেন কীভাবে নিজের পরিচয় গড়তে হয়। মাঝে মাঝে তার গলায় ক্লান্তির সুর ভেসে আসত, হয়তো চাকরির টেনশন, পরিবারের চাপ... আমি কিছুই বুঝতাম না তখন, শুধু শুনতাম।
একদিন হঠাৎ বললাম,
— “আপু, আপনি না থাকলে আমি কী করতাম জানেন?”
তিনি হেসে বললেন,
— “তুমি ঠিকই সামলে নিতে শিখে গেছো, আদনান।”
আমার বুকের ভেতর কেমন এক তীব্র হাহাকার উঠল, কিন্তু মুখে কিছু বললাম না।
একটি চিঠি, একটি বিদায়
সেমিস্টার শেষ। তাহসিনা আপু ক্যাম্পাস ছাড়লেন। যাওয়ার দিন আমাকে একটা চিঠি দিলেন—
“আদনান,
তুমি হয়তো কখনো বলতে পারোনি, কিন্তু আমি বুঝেছিলাম।
আমিও একসময় তোমার চোখে চোখ রেখেছিলাম, দেখেছিলাম ভালোবাসা।
কিন্তু বয়সের ব্যবধান, সমাজের নিয়ম...
আমরা যা চাই, সব কি পাওয়া যায়?”
চিঠির শেষে লিখেছিলেন,
“তুমি ভালো থেকো, আমার নীরব সাহসী আদনান।”
আজ চার বছর পর, আমি নিজেই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার। নতুন এক ব্যাচ এসেছে, কেউ কেউ আমায় ‘স্যার’ ডাকে খুব সমীহ করে। মাঝে মাঝে চোখ খুঁজি ওই এক জোড়া শান্ত চোখ—তাহসিনা আপুর মতো।
ভালোবাসা সবসময় পেতে হয় না। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময় থেকে যায়—হৃদয়ের সবচেয়ে নির্জন কোণে।
No comments:
Post a Comment
comment