বছর চারেক কেটে গেছে। আমি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার। সময় বদলেছে, মানুষও। কিন্তু কিছু অনুভূতি সময়ের কাছে হার মানে না—তাহসিনা আপুর প্রতি ভালোবাসাটাই তার প্রমাণ।
একদিন, ক্যাম্পাসে একটা সেমিনারের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলাম। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত গবেষক, শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। আমি রিসেপশন টেবিলে দাঁড়িয়ে ছিলাম—হঠাৎ এক পরিচিত গন্ধ, পরিচিত গলার টান।
— “আদনান?”
পেছন ফিরে তাকাতেই থমকে গেলাম।
তাহসিনা আপু।
চোখেমুখে আগের সেই কোমলতা, তবে একটু পরিণত, একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী। পরনে সাদা-নীল শাড়ি, কাঁধে ল্যাপটপ ব্যাগ। তিনি এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি শিক্ষক।
আমরা পাশে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ।
— “কেমন আছো, আপু?”
— “ভালো আছি। তুমি তো এখন স্যার!”
— “আপনার ছায়ায় বড় হয়েছি তো…”
তিনি একটু হেসে বললেন,
— “আচ্ছা, তুমি কি এখনও সেই চায়ের দোকানে যাও?”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— “ঝাউতলায়? এখনো গেলে, কেউ চেনেও না আমাদের গল্প।”
আমরা হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে বসলাম সেই পুরনো জায়গায়। দুটো চা, এক কাপ লাল, এক কাপ গ্রিন টি। যেন সময় থেমে আছে।
হঠাৎ আপু বললেন,
— “আদনান, এই চার বছরে অনেক কিছু ভেবেছি। বুঝেছি, সময় চলে যায়, কিন্তু যাদের জন্য হৃদয়ে জায়গা তৈরি হয়—তারা কখনো হারায় না।”
আমি নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলাম।
— “তুমি যদি চাও, আমরা আবার শুরু করতে পারি—এইবার সমাজকে পাশ কাটিয়ে নয়, বরং তার সামনে দাঁড়িয়ে।”
আমার গলা কেঁপে উঠল। এতদিনের তপস্যা যেন এবার পূর্ণতা পেল।
— “আপু, আমি কোনোদিনও আপনাকে ভুলতে পারিনি। আজ যদি বলো, আমি হাতটা ধরেই বাকি জীবনটা হেঁটে যেতে পারি।”
এইবার তিনি চুপ থাকলেন না। ধীরে ধীরে তার হাতটা আমার হাতের ওপর রাখলেন।
শেষ কথায়...
ভালোবাসা সবসময় পাওয়া যায় না ঠিক,
কিন্তু যদি ধৈর্য রাখা যায়,
সময় একদিন নিজেই বলে—
“এবার তোমার পালা।”
No comments:
Post a Comment
comment